শহরের ঠিকানা: লিচিয়াং দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইয়ুন্নান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ছিংহাই-তিব্বত মালভূমি এবং ইয়ুন্নান ও কুইচৌ মালভূমি সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ২৪০০ মিটার।

লিচিয়াং চীনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পন্ন একটি প্রাচীন নগর এবং বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান। লিচিয়াং প্রাচীন নগরের ইতিহাস আটশ'রও বেশি বছরের। এখানকার সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত শহরের স্থাপত্যগুলোয় হান, পাই, ঈ ও তিব্বতীসহ বিভিন্ন জাতির স্থাপত্যের ছাপ রয়েছে এবং বিশেষ করে নাশি জাতির বৈশিষ্ট্য রয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এ নগরের পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকের প্রধান রাস্তায় পাথরের তোরণ, ডান পুকুর ও বড় হলসহ নানা ধরনের প্রাচীন স্থাপত্য রয়েছে। নগরের উত্তরাংশ হলো বাণিজ্যিক এলাকা। লিচিয়াং নগরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে 'নগরের ভেতর দিয়ে বহমান পানির ধারা'। হেইলোংথান নদী নগরের দেওয়াল ঘেসে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে বয়ে গেছে। ৩৫৪টি বিভিন্ন আকারের পাথরের সেতু ও কাঠ দিয়ে তৈরি সেতু নগরের বড় রাস্তা ও ছোট গলিগুলোকে সংযুক্ত করায় সৃষ্টি হয়েছে লিচিয়াং নগরের বিশেষ মনোরম দৃশ্য ।

নাশি জাতির তুংপা ভাষা হচ্ছে পৃথিবীতে 'একমাত্র বিষ্মৃতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া চিত্রের লিখন পদ্ধতির ভাষা'। ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে তুংপা ভাষার প্রাচীন গ্রন্থকে বিশ্বের স্মৃতি উত্তরাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নাশির প্রাচীন সংগীত, তুংপার চিত্র আর ধর্মীয় সংস্কৃতি সবই এখন বিশ্ববিশ্রুত। লিচিয়াং নিম্ন অক্ষাংশ আর সমুদ্রতল থেকে অনেক উচুঁ এলাকায় অবস্থিত। এখানে চার ঋতুতে আবহাওয়ার তেমন একটা পরিবর্তন হয় না, তবে বিভিন্ন ঋতুতে খরা ও আদ্রতার ভাব স্পষ্ট বুঝা যায়। বনাঞ্চলের আয়তন এ এলাকার মোট আয়তনের ৬৬.১৩ শতাংশ। আবহাওয়া খুব আরামদায়ক। জাতিসংঘের মানবজাতি বিষয়ক আবাসিক কার্যক্রম লিচিয়াংকে আবাসযোগ্য শহর হিসেবে নির্বাচন করেছে।

অধিকাংশ পর্যটকের কাছে লিচিয়াংয়ের সবচেয়ে বড় আকর্ষণীয় দিক এখানকার অদ্বিতীয় দৃশ্যাবলী নয়, বরং তা হলো এখানকার এক ধরনের বিশেষ সংস্কৃতি এবং সরল জীবনধারা। বর্তমান যুগে শহরবাসীদের অতি আধুনাকতাসম্পন্ন জীবনের তুলনায় এখানকার মন্থরগতির স্বাভাবিক জীবন অতি আরামদায়ক।