Web bengali.cri.cn   
সরকারি ভাণ্ডারে বিপুল পরিমাণ খাদ্য পচে ভারতেসরকারি ভাণ্ডারে বিপুল পরিমাণ খাদ্য পচে ভারতেসরকারি ভাণ্ডারে বিপুল পরিমাণ খাদ্য পচে ভারতে
  2012-07-10 19:35:29  cri

প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার ভারতীয় শিশু পুষ্টিহীনতা-সৃষ্ট বিভিন্ন ধরনের রোগে মারা যায়। শিশু পুষ্টির এই যখন অবস্থা তখন ঠিক উল্টো একটা চিত্র আছে। সেটি হলো সরকারের হাতে থাকা বিপুল পরিমাণ গম ও চাল প্রতিবছর পচে নষ্ট হয়। এটা খাদ্য পরিস্থিতিতে ভারতের একটি খুবই রুঢ় বাস্তবতা।

৬০ লাখ টন খাদ্যশস্য পচে

ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের কমপক্ষে প্রায় ৬০ লাখ টন খাদ্যশস্য নষ্ট হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, আসল ক্ষতি আরো বেশি হয়। বর্তমানে ১ কোটি ৯০ লাখ টনের খাদ্যশস্য বাহিরে স্তূপ করে ভারতের গ্রীষ্মকালীন গরম ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় রাখা হয়েছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাদ্যশস্য উত্পাদনকারী দেশ হিসেবে ভারতে বিগত টানা ৬ বছরে খাদ্যশস্যের প্রচুর ফলন হয়েছে। খাদ্যশস্যের মজুদের ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের 'পাউরুটির ঝুড়ি' বলে খ্যাত পাঞ্জাব প্রদেশের সাদ মারগিয়েলা গ্রাম হচ্ছে সরকারের গম মজুদ রাখার স্থান। সেখানে পচা গমের স্তূপ বাড়িঘরের মতো উঁচু হয়। সেগুলো ফুটবল খেলার মাঠ দখল করে। অধিকাংশ গমের ব্যাগ ত্রিপল দিয়ে আবৃত করতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ ব্যাগ খুলে গিয়ে ছত্রাক ও বিভিন্ন রোগ জীবাণুতে আক্রান্ত হয় এবং এ কারণে গম কালো হয়ে যায়। এ সব খাদ্যশস্য গত ৫ বছর ধরে সেখানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে এবং সেগুলো থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। গুদামের রক্ষী জানান, "কেউ কেউ এটা মাছ বা গৃহপালিত পশুকে খাওয়ায়।"

একদিকে যখন এতো বেশি খাদ্যশস্যের অপচয়, তখন অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক দরিদ্র ভারতীয় পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পায় না। সবচেয়ে গরীব রাজ্যে এখনো গুরুতর খাদ্য সংকট দেখা যায়।

চলতি বছরের প্রথম দিকে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৪১ শতাংশ পুষ্টিহীন। তাদের ওজন তুলনামূলকভাবে কম। এ অনুপাত সাব-সাহারার আফ্রিকান দেশগুলোর প্রায় দ্বিগুণ। 'ব্যাপক পুষ্টিহীনতা হচ্ছে 'দেশের কলংকস্বরূপ' - ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তার স্বীকৃতি মিলেছে এ প্রতিবেদনে।

সরকারি খাদ্যগুদামে পাহাড়ের মতো স্তূপ করে রাখা খাদ্যশস্য দরিদ্র মানুষের কাছে পাঠানো হয় না। স্বল্পদক্ষ ও দুর্নীতিপরায়ণ বরাদ্দ ব্যবস্থা হচ্ছে এর একটি প্রধান কারণ। উনিশ মাস আগে পরিচালিত একটি তদন্ত আবিস্কৃত হয়েছে, দরিদ্র মানুষদের জন্য বরাদ্দ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের খাদ্যশস্য তছরূপের পর দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এ কেলেংকারির সঙ্গে কয়েক শ' কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট।

মূল কারণ হচ্ছে ব্যবস্থা

ভারতে পাহাড়ের মতো স্তূপ করে রাখা খাদ্যশস্য ক্ষুধার্ত জনগণদের হাত পৌঁছায় না। এর মূল কারণ দুর্নীতি ছাড়াও ভারত সরকারের খাদ্যশস্য কেনা ও বরাদ্দের জটিল ব্যবস্থা।

ভারতে সরকার নির্ধারিত দামে কৃষকদের কাছ থেকে চাল ও গম সংগ্রহ করে। বিগত ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত খাদ্যশস্য সংগ্রহের পরিমাণ টাকার অঙ্কে ৭০ শতাংশ বেড়েছে। এটা আরো বেশি খাদ্যশস্য উত্পাদনে ভারতীয় কৃষকদেরকে উত্সাহিত করেছে। ফলে ভারতে খাদ্যশস্যের মজুদে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে; মজুদের পরিমাণ সরকারের লক্ষ্যের ১২ গুণেরও বেশি হয়ে গেছে। তবে এর পাশাপাশি বিগত ২৫ বছরে দেশটির খাদ্যশস্য মজুদ অবকাঠামো উন্নত হয়নি। মজুদ খাদ্যশস্যের একটা অংশ গুদামের বাইরে রাখা হয়। এ অবস্থায় সহজেই খাদ্যশস্য পচে যায়। এছাড়া যথেষ্ট পরিমাণে পাটব্যাগ ও ত্রিপল না থাকার কারণে মাঝেমাঝে খাদ্যশস্য বর্জ্য রাখার স্থান বা শ্মশানে স্তূপ করে রাখা হয়।

বর্তমানে সরকারের কাজে জমা ৮ কোটি ২৪ লাখ টনের খাদ্যশস্য রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। কিন্তু সরকারের খাদ্য গুদামগুলোর মোট রংরক্ষণ সামর্থ্য মাত্র ২ কোটি টনের মতো।

এছাড়া ভারত সরকার কেনা মূল্যে খাদ্যশস্য বিক্রি করতে চায় না। অন্যদিকে অনেক রাজ্য সরকারের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ থাকে না, খাদ্যশস্য কিনে দরিদ্র মানুষদের দেওয়ার জন্য। এ কারণেই বর্তমানের এ অবস্থা দাঁড়িয়েছে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040