|
এবারের ফোরামে চীনের বৈদেশিক ঠিকা প্রকল্প চেম্বারের 'চীনের বৈদেশিক ঠিকা প্রকল্প উন্নয়ন সম্পর্কিত রিপোর্ট ২০১১- ২০১২ ' প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্ট দেখা যায়, দু হাজার এগারো সালে ইউরোপীয় ঋণ সংকটের প্রভাবে নবোদিত অর্থনৈতিক সত্ত্বাগুলোর প্রবৃদ্ধি-গতি কমে গেছে। তা ছাড়া, পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক ঠিকা প্রকল্প বাজার দু হাজার দশ সালের মতো সরগরম থাকেনি।
চীনের উপ বাণিজ্যমন্ত্রী ছেন জিয়েন ব্যাখ্যা করে বলেন, বিশ্বের জটিল ও পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাজার সম্প্রসারণের জন্য দু হাজার এগারো সালে চীনের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে, যার ফলে চীনের বৈদেশিক ঠিকা প্রকল্প ঠিক মতো উন্নয়ন হচ্ছে।
গত বছর চুক্তি ও ব্যবসার পরিমাণ যথাক্রমে ১৪ হাজার ২শো ৩০ কোটি এবং ১০ হাজার ৩ শো ৪০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ছেন ডেমিন বলেন,
"দু'হাজার এগারো সাল নাগাদ চীনের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো মোট ৮ কোটি ৪ লাখ ১৬ হাজার মার্কিন ডলারের বৈদেশিক ঠিকা প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর করে। ওই সময় ব্যবসার পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৩ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। বতর্মানে বিশ্বের ১৮০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে চীনের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা আছে।"
ওই রিপোর্টে বলা হয়, দু 'হাজার বারো সালে আন্তর্জাতিক ঠিকা প্রকল্প বাজারের পরিস্থিতি কঠিন হবে। মৌলিকভাবে বলতে গেলে, দু'হাজার বারো সালে অনেক অনির্দিষ্ট উপাদান বিশ্ব অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে। সুতরাং আন্তর্জাতিক ঠিকা প্রকল্প বাজার এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এবারের ফোরামে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিরা মনে করেন, চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সুযোগও রয়েছে। চীনের বৈদেশিক ঠিকা প্রকল্পের উন্নয়নে স্পষ্ট অনুকূল উপাদানও রয়েছে। প্রথমত, বিশ্বজুড়ে গণজীবিকা ও গণঅবকাঠামো উন্নয়নের প্রবণতা অপরির্বতিত রয়েছে। দ্বিতীয়ত, শহরায়নের একটানা প্রক্রিয়া ঠিকা প্রকল্প ব্যবসার জন্য অপেক্ষাকৃত দীর্ঘস্থায়ী প্রবৃদ্ধির সুযোগ যুগিয়ে দিয়েছে এবং তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক ঠিক প্রকল্প বাজারে চীনের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা অল্প সময়ের মধ্যে অদ্বিতীয় হয়েছে। এ প্রসঙ্গে চীনের রেলপথ নির্মাণ কোম্পানি লিমিটেডের বোর্ড চেয়ারম্যান মন ফন চাও বলেন,
"শিল্পোন্নত দেশগুলোর অবকাঠামো নির্মাণ কাজ অনেক দিন আগে সম্পন্ন হয়। এসব অবকাঠামো পুরানো হয়ে গেছে। সুতরাং এসব অবকাঠামো আবার উন্নত করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। কোনো কোনো উন্নত দেশ অর্থনীতির পুনরুদ্ধার বাস্তয়নের জন্য পুরানো অবকাঠামোগুলোতে সংস্কার কাজ চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে। তাই, এসব পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক অবকাঠামোতে পুঁজিনিবিয়োগ এবং নির্মাণের জন্য নতুন বাজার সম্প্রসারণ করেছে।"
চীনের ইলেকট্রনিক বৃত্তির উদাহরণ থেকে বোঝা যায় যে, দু'হাজার এগারো সাল নাগাদ চীনের বিদ্যুত্ উত্পাদনের পরিমাণ বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছেছে। চীনের বিদ্যুত্ শিল্পের জরিপ ও ডিজাইন, নির্মাণ কাজ এবং সরঞ্জামের মান আরও উন্নত হয়েছে।
চীনের জ্বালানি নির্মাণ কোম্পানি লিমিটেডের বোর্ড চেয়ারম্যান ইয়াং জি শিয়ে ব্যাখ্যা করে বলেন, দু'হাজার এগারো সালে চীনের বিদ্যুত্ শিল্প বিদেশের সঙ্গে ৩১০৭ কোটি মার্কিন ডলারের নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ ক্ষেত্রে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তার পরিমাণ প্রথম বারের মতো আবাসন নির্মাণ এবং পরিবহণ খাতকে ছাড়িয়ে গেছে। তিনি অনুমান করেন যে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চীনের বৈদেশিক ঠিকা প্রকল্প আরও ব্যাপকভাবে বিকশিত হবে। তিনি বলেন,
"বতর্মানে চীনের জ্বালানি নির্মাণ কোম্পানি লিমিটেড সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশ ও পশ্চিম আফ্রিকায় বৈদ্যুতিক জাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিচ্ছে। আমরা আমাদের এ ক্ষেত্রের প্রাধান্যকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলকে সাহায্য দিতে চাই।"
এবারের ফোরামে অংশ গ্রহণকারী বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিরা বলেন, বতর্মান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে উন্মুক্ততা ছাড়া উন্নয়ন অর্জন অসম্ভব। উভয়ের বিজয় অর্জন করতে চাইলে, তা করতে হবে কেবল সহযোগিতার মাধ্যমে। স্বাগতিক দেশ হোক, আর ঠিকাদার ব্যবসায়ী হোক উন্মুক্ততা ও সহযোগিতা হলো উভয়ের বিজয় অর্জনের একমাত্র পদ্ধতি। সুতরাং, বিভিন্ন দেশকে ইতিবাচক উন্মুক্ততার মনোভাবে অবকাঠামো খাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চালাতে হবে।
পাকিস্তানের পরিবহণমন্ত্রী ড. আবাব আলমগীর খান ফোরামে বলেন, গত দশ বছরে সম্পদ ক্ষেত্রে পাকিস্তান নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু তা স্বত্ত্বেও পাকিস্তান অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ চালিয়ে আসছে। পাকিস্তান চীনের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজি বিনিয়োগে আমন্ত্রণ জানায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবকাঠামো নির্মাণে চীন যে আন্তরিক সাহায্য দিয়েছে পাকিস্তান তার জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে। চীনের সাহায্যে পাকিস্তানের করাচি পোতাশ্রয় সম্প্রসারিত হয়েছে। নিরাপদ স্থাপনাসম্পন্ন এক শ' কিলোমিটার দীর্ঘ হাইওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন,
"প্রতি বছর করাচি পোতাশ্রয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ পণ্যদ্রব্য আমদানি-রফতানি করা হয়, তা পাকিস্তানের মোট আমদানি-রফতানির ৯৫ শতাংশ। সুতরাং এই সড়কের অবকাঠামো পাকিস্তানের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া এই সড়ক মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ লাইন। এই সড়ক নির্মাণে চীন ২৫ কোটি মার্কিন ডলার দিয়েছে।"
চীনের বৈদেশিক ঠিকা প্রকল্প চেম্বারের মহাপরিচালক ডিও ছুং হো ভবিষ্যদ্বাণী করেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চীনের বৈদেশিক ঠিকা ব্যবসা স্থিতিশীল গতিতে বিকশিত হবে। যদি লিবিয়ার মতো আকস্মিক ঘটনা না ঘটে, তাহলে দু'হাজার বারো সালে চীনের বৈদেশিক ঠিকা ব্যবসা ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশের বৃদ্ধি পেতে পারে।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |