Web bengali.cri.cn   
দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য বাধা
  2012-05-18 19:49:50  cri
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা, বিশেষ করে বাণিজ্যিক সহযোগিতার মহাপরিকল্পনা নিয়ে ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্ক। প্রতিষ্ঠার পর বিগত ২৭ বছরে আঞ্চলিক বাণিজ্য উন্নয়নে এ সংস্থা কতটুকু ভূমিকা রেখেছে - এ প্রশ্ন যদি তোলা হয়, তাহলে নিশ্চিত করে বলা যায় তেমন ইতিবাচক জবাব মিলবে না। ভারতের বাণিজ্যবিষয়ক দৈনিক পত্রিকা 'বিজনেস লাইন' সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে এ বিষয়টির প্রতি আলোকপাত করেছে। 'সার্ক বাণিজ্য, একটি দুঃখের উপাখ্যান' শীর্ষক ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক সহযোগিতার লক্ষ্যে গঠিত সার্ক কাগজে-কলমে চমত্কার একটা ধারণা হয়েই আছে। বাস্তবিক সহযোগিতা তেমন হয়নি, যদিও চীনের চেয়ে দেড় গুণ বেশি জনসংখ্যা এবং তিন লাখ কোটি ডলারের সমন্বিত মোট দেশজ উত্পাদন বিশিষ্ট সার্কের বাজারে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে তরুণ, কঠোর পরিশ্রমী ও উজ্জীবিত ভোক্তাগোষ্ঠীর বড় একটা অংশ।

আঞ্চলিক বাণিজ্য উন্নয়নে কী কী বাধা রয়েছে, সেগুলো সবিস্তারে তুলে ধরা হয় ওই নিবন্ধে। বলা হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিরোধ এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। এরপর আছে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা, অবকাঠামো ও আঞ্চলিক সম্পৃক্ততার ঘাটতি, পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস এবং রাজনৈতিক সমীকরণের পরিবর্তন। অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি থাকলেও এসব কারণে তাদের মধ্যে তেমন বাণিজ্য হতে পারেনি। দু' হাজার ছয় সালে এটি কার্যকর হওয়ার গত ৫ বছরে চুক্তির আওতায় মাত্র ১ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে।

তবে বিজনেস লাইন বলছে, অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে এই যে বাণিজ্য-বাধা তা অপসারণ করার একটা ভাল অস্ত্র হতে পারে অভিন্ন ব্র্যান্ড অর্থাত্ সার্ক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা পণ্য বাণিজ্য আটকে দিতে অনেক বেশি কার্যকর। কিন্তু বাণিজ্য উন্নয়নে সদস্য দেশগুলোয় সার্ক ব্র্যান্ডের অনুপস্থিতির প্রভাব এগুলো দিয়ে ঢাকা দেওয়া যায় না।

নিবন্ধে প্রশ্ন রাখা হয়েছে, ভারতীয়রা তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর কয়টি ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ করতে পারবে? ইন্টারনেটে গুগলের সাহায্য নেওয়া ছাড়া বেশির ভাগ ভারতীয়ই নেপালের ওয়াই ওয়াই নুডলস, ভুটানের ড্রুক জ্যাম ও জুস এবং শ্রীলঙ্কার জাতীয় ক্রিকেট দলকে পৃষ্ঠপোষকতার কারণে শ্রীলঙ্কার দিলমাহ চায়ের বাইরে কিছু বলতে পারবে না।

গত মাসে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে পাকিস্তানি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের এক প্রদর্শনীতে উপচেপড়া ভিড় হয়েছিল, যেখানে সচ্ছল থেকে সাধারণ দিল্লিবাসী সবাই দলে দলে ভিড় জমিয়েছিল। সেই প্রদশর্নীর উপমা টেনে বিজনেস লাইন বলছে, পাকিস্তানি ডিজাইনারদের পোশাক ও ব্র্যান্ড সামগ্রী এত জোরালো ও স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছে যে তারা যদি পরদিনই দিল্লিতে দোকান খুলতে পারত, তাহলেও ভালো বিক্রি হতো। কিন্তু বাস্তবে তেমন দোকান খেলা কবে সম্ভব হবে তা কেউ জানে না।

ওই নিবন্ধকারের মতে, ব্র্যান্ডের দিক থেকে চিন্তা করলে সার্কের বাজার খুব সহজেই বিস্তার ঘটানো যায়। কেননা, ভৌগোলিকভাবে এটা এক বিস্তৃত-অভিন্ন বাজার। গ্রাহকদের ধরনও প্রায় একই রকম। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে ভারতীয় চা হিসেবে যা বিক্রি হয়, তা আসলে শ্রীলঙ্কা থেকে বিপুল পরিমাণে আমদানি করা চা। এই চা মোড়কজাত করে বাজারে ছাড়া হয়। আবার কোহিনূর বা লালকিল্লা বাসমতী চাল ভারতীয় হলেও পাকিস্তানি বাসমতী চালকে এগুলো থেকে আলাদা করা প্রায় অসম্ভব এবং উপসাগরীয় দেশগুলোতে এর ব্যাপক চাহিদা আছে। বাংলাদেশের প্রাণ আচার নিয়ে পূর্ব ও উত্তর ভারতে বিপুল উৎসাহ আছে। শ্রীলঙ্কার জুস ব্র্যান্ড অনজুস প্রায়ই ভারতে ভারতীয় ব্র্যান্ড বলে ভুল করা হয়।

বিজনেস লাইন যেমনটি বলেছে - আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে রাজনৈতিক বাধাগুলো দূর করার পাশাপাশি একটা সার্ক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করা দরকার। সেটি সম্ভব হলে আঞ্চলিক বাণিজ্যকে চূড়ান্তভাবে শুল্কমুক্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার যে লক্ষ্য সাফটার রয়েছে, সেটা খানিকটা এগিয়ে যাবে। তবে তার আগে ঠিক করে নিতে হবে এটা চালু হলে কিভাবে অঞ্চলের ক্ষুদ্র দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষিত হবে। নিশ্চিত করতে হবে এর ফলে ছোট দেশগুলো কেবল যেন বড় দেশগুলোর পণ্যের বাজারে পরিণত না হয় এবং উত্পাদন খাত ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সেটা যদি নিশ্চিত করা সম্ভব না হয়, তাহলে এ উদ্যোগ হিতে বিপরীত হতে পারে।(এসআর)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040