|
চীন ও জাপানের অর্থ মন্ত্রীদের চতুর্থ বৈঠক সম্প্রতি টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চীনের অর্থমন্ত্রী শিয়ে শু রেন ও জাপানের অর্থমন্ত্রী জু আজুমি মিলিতভাবে এবারের বৈঠক পরিচালনা করেন। বৈঠকের পর প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে দু'দেশের অর্থমন্ত্রীদ্বয় রাজি হয়েছেন যে, চীন ও জাপান জি ২০ গোষ্ঠিসহ আসিয়ান দেশগুলোর বহুমুখী কাঠামোতে নিবিড়ভাবে সহযোগিতা চালাবে। এবারের বৈঠকে চীন ও জাপানের অর্থমন্ত্রীদের মধ্যে কর সংস্কার ও সমাজ নিশ্চয়তা ব্যবস্থার সংস্কারসহ অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
চীনের শিল্প ও তথ্যায়ন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি প্রকাশিত একটি পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, দু'হাজার পনেরো সাল নাগাদ চীনের সফটওয়ে ও তথ্য প্রযুক্তির পরিসেবা ব্যবসার আয় ৪ ট্রিলিয়ান রেন মিন পি ছাড়িয়ে যাবে। এ পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, চীনে মোটামুটি উত্পাদন শিল্পের উদ্ভাবন ব্যবস্থা গঠিত হবে। নিজের শক্তিতে উন্নয়নের সামর্থ্য লক্ষ্যণীয়ভাবে বাড়বে।
আন্তর্জাতিক অবকাঠামো, স্থাপনা, পুঁজিবিনিয়োগ ও নির্মাণ সংক্রান্ত তৃতীয় শীর্ষ ফোরাম এ মাসের শেষ দিকে চীনের ম্যাকাওয়ে অনুষ্ঠিত হবে। এবার শীর্ষ ফোরামের প্রতিপাদ্য হবে 'দেশ-বিদেশের সহযোগিতার অভিন্ন উন্নয়ন'। জানা গেছে, চীন, জাপান, ফিলিপাইন, শ্রীলংকা, ট্যানজানিয়া, ফ্রান্স ও সুইজল্যান্ডসহ বিশটিরও বেশী দেশের ঠিকাদার সমিতি এবং প্রাসঙ্গিক সংস্থা এই শীর্ষ ফোরামে অংশ নেবে।
চীনের বে সামরিক বিমান পরিবহণ ব্যুরো ও শাংহাই মিনিসিপালের মধ্যে সম্প্রতি একটি সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তি স্বাক্ষর শাংহাই আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজের জন্য অত্যন্ত তাত্পর্যসম্পন্ন। উল্লেখ্য, শাংহাই হল চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমান বন্দর। সুতরাং শাংহাইয়ের বেসামরিক বিমান পরিবহণের উন্নয়ন বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
এতক্ষণ কয়েকটি সংক্ষিপ্ত অর্থনীতির খবর। এখন শুনবেন প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটির শিরোনাম: 'লাসার একটি পরিবার পরিসেবা কোম্পানির মালিকের আত্মকথা'। লোইয়াং ১৯৭৫ সালে সিছুয়াং প্রদেশের শিয়েনিন জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি বতর্মানে তিব্বতের রাজধানী লাসাতে একটি পরিবার পরিসেবা কোম্পানি খুলেছেন। সম্প্রতি সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি তার ব্যবসার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বর্ণনা করে কিছু কথা বলেছেন। আজকের এ প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লাসাতে তার ব্যবসার গল্প শুনতে পারবেন। তিনি বলেন, তিনি কৃষক পরিবারের ছেলে। গ্রামে তিনি বড় হয়েছেন। জুনিয়ার হাইস্কুল থেকে স্নাতক পাশ করার পর তিনি তার জন্মস্থানে রান্নার কাজ শিখতে শুরু করেন। তখন তিনি ভাবলেন যে, একটি রন্ধন শিল্প রপ্ত করলে তিনি নিজেই উপার্জন করে জীবনযাপন করতে পারতেন। কয়েক মাসের পর তিনি রান্নার প্রশিক্ষণ শেষ করে একটি রেস্তাঁরা খুলেছেন। পরে তিনি একজন বন্ধুর কাছ থেকে শুনেছেন লাসাতে ব্যবসা চালাতে দেশের অন্যান্য জায়গার চাইতে একটু সহজ বলে মনে করা হয়। সুতরাং দু'হাজার দু সালে তিনি তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে জন্মস্থান থেকে তিব্বতের রাজধানী লাসাতে ঠান্ডা খাবার ব্যবসা চালাতে যান। কিন্তু এক বছর পর তিনি টের পেলেন লাসাতে এ ধরনের ব্যবসা সহজভাবে চালানো যায় না। তখন তার বয়স বেশি ছিল না । তিনি বেশ চিন্তা না করে লাসা থেকে জন্মস্থানে চলে গেলেন। দু'হাজার চার সালে তিনি তার শ্যালকের সঙ্গে আবার লাসাতে এলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বার তিনি নির্মান কাজে নিয়োজিত হন। প্রথমে তিনি তার শ্যালককে সাহায্য করেন । তাদের কাজ ছিল স্থানীয় জনসাধারণের বাড়িঘর নির্মান করা ও মেরামত করা। তিনি বলেন, দু'জন আত্মীয়স্বজন সম্পর্ক বলে তার শ্যালক সমস্ত গারিগরি তাকে শিখে দিয়েছেন। সুতরাং তিনি শীঘ্রই সমস্ত কারিগরি কাজ শিখে ফেলেন। তার শ্যালকের সঙ্গে তিন মাস কাজ করার পর তিনি একাই ব্যবসা করতে শুরু করেন।
আসলে এই বৃত্তি শুরু করা অত সহজ কাজ নয়। শুরুতেই ব্যবসার জন্য তার বেশি টাকাপয়সা ছিল না। তা ছাড়া এ ধরনের ব্যবসা করতে পরিচিত ব্যক্তিদের সাহায্য দরকার। সুতরাং সাধারণত প্রথম পাঁচ বছরে কেবল ভিত্তি স্থাপন করা যায়। পাঁচ বছর পর উপার্জন করা যায়। তিনি বলেন, লাসাতে আসার প্রথম তিন বছর তার জীবন অত্যন্ত কঠিন ছিল। তখন দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিস কেনা কঠিন ছিল। কিন্তু এখন তার অবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। জাচিস মন্দিরের কাছাকাছি তার ভাড়ার ঘর আছে। ঘরের সামনে বিজ্ঞাপন লাগানো রয়েচে। সুতরাং যাত্রিরা তার ঘরের সামনে দিয়ে পার হওয়ার সময় বুঝতে পারে যে তিনি এ ধরনের ব্যবসা করেন। মাঝে মাঝে তারা বন্ধু, পরিচিত লোক ও আত্মীয়স্বজনদেরকে পরিচয় দেন। বতর্মানে তার ব্যবসা মোটামুটি ভাল। বিশেষ করে মেরামতের কাজ আগের চেয়ে অনেক বেশী।
তিনি বলেন, কোন কোন সময় তাদের হাতে কাজ বেশি থাকে, আবার কোন কোন সময় তাদের হাতে কাজ কমও হতে পারে। কিন্তু মৌলিকভাবে বলতে গেলে তাদের ব্যবসা মোটামুটি স্থিতিশীল। সাধারণত: প্রতি বছরের এপ্রিল মাসে তাদের প্রকল্প শুরু হয় আর নভেম্বর মাসে শেষ হয়ে যায়। তবে মেরামত কাজ সারা বছরই থাকে। প্রতি দিন সকাল আটটা থেকে কাজ শুরু হয়ে সন্ধ্যাবেলায় শেষ হয়। তিব্বতের নব বর্ষ চলাকালে তারা সবচেয়ে ব্যস্ত সময় কাটান। অবশ্যই সেই মাসে তাদের আয়ও সবচেয়ে বেশি হয়। কারণ নভেম্বর মাসের পর লাসার তাপমাত্রা মাইনাস ১৫-এর কাছাকাছি হয়, তাই তখন অনেক পরিবারের পানির পাইপ বিকল হয়ে যায়। মেরামত কাজ আপনা আপনি বেশি হয়ে যায়।
লোইয়াং বলেন, দু'হাজার চার সাল থেকে তার আয় প্রতি বছর দ্বিগুন হচ্ছে। এখন প্রতি বছর তার আয় কমপক্ষে এক লাখ রেন মিন বি। কিন্তু দু'হাজার চার সালের আগে তার আয় মাত্র কয়েক হাজার ছিল। গত বছর তিনি এক লাখ চল্লিশ হাজার রেন মিন বি উপার্জন করেছেন।
লোইয়াং বলেন, যখন কাজ বেশি তখন অন্যদের সাহায্য দরকার। তাদের মধ্যে হ্যান ও তিব্বত জাতির কর্মচারি আছে। হ্যান জাতির কর্মচারিরা দিনে ১৮০ ইয়ান, তিব্বত জাতির কর্মচারিরা দিনে ৯০ ইয়ান পান। কারণ একজন হ্যান জাতির কর্মচারি তিব্বত জাতির কর্মচারির চেয়ে দু থেকে তিন গুণ পরিমাণের কাজ করতে সক্ষম। সত্যি কথা বলতে কি, তিব্বত জাতির কর্মচারির চেয়ে হ্যান জাতির কর্মচারির যোগ্যতা বেশি। সুতরাং তাদের মধ্যে বেতন ভিন্ন। অন্য দিকে, হ্যান জাতির কর্মচারিরা ভালভাবে কারিগরি কাজ রপ্ত করেছেন, কিন্তু সাধারণত তিব্বত জাতির কর্মচারিরা তা পারেন না।
তিব্বত জাতি ও হ্যান জাতির মধ্যে সম্পর্ক প্রসঙ্গে লোইয়াং বলেন, মৌলিকভাবে বলতে গেলে দু'জাতির জনসাধারণের মধ্যে সম্পর্ক ভাল। তিনি বলেন, তিনি প্রায় ৮০ শতাংশ তিব্বত জাতির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কারণ পরিবার পরিসেবা বৃত্তির শতকরা ৮০ ভাগ তিব্বত জাতির জন্য। তিনি বলেন, তিব্বতে তার অনের তিব্বতি বন্ধু আছে। তাদের মধ্যে সম্পর্ক মন্দ নয়। তিনি মাঝে মাঝে তিব্বতীদের সঙ্গে আড্ডা দেন। তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে পারষ্পরিক শ্রদ্ধা থাকা দরকার। পরষ্পরের মধ্যে আন্তরিকতা ও স্বদিচ্ছারও প্রয়োজনীঁয়তা অনেক বেশি থাকতে হবে।
প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা, এতক্ষণ আজকের প্রতিবেদন শুনলেন। আজকের অর্থনীতি অগ্রযাত্রা এখানে শেষ হল। আমার সঙ্গে থেকে অনুষ্ঠানটি শোনার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |