|
সারা বিশ্বে শহুরে জনসংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। তবে এ বৃদ্ধিহার আফ্রিকা ও এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, আগামী ৪ দশকে আফ্রিকা ও এশিয়ার নগরবাসীর সংখ্যা হবে সারা বিশ্বের শহুরে জনসংখ্যার ৮৬ শতাংশ। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভাগ প্রকাশিত 'বিশ্ব নগরায়ন পূর্বাভাস-২০১১' শীর্ষক ওই প্রতিবদনে নগরবাসীর সংখ্যার এমন বৃদ্ধির ফলে কর্মসংস্থান, আবাসন ও অবকাঠামো ক্ষেত্রে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জের ওপরও আলোকপাত করা হয়।
পুনর্মূল্যায়িত প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ আফ্রি
কায় শহরবাসীর সংখ্যা এখনকার ৪১৪ মিলিয়ন থেকে বেড়ে পৌঁছাবে ১.২ বিলিয়নে। অন্যদিকে একই সময় এশিয়ার শহুরে জনসংখ্যা ১.৯ বিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৩.৩ বিলিয়নে।
তবে ওই সময়ে জনসংখ্যা সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়বে ভারত, চীন, নাইজেরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইন্দোনেশিয়ার শহরগুলোতে। ভারতে শহুরে জনসংখ্যা বাড়বে ৪৯৭ মিলিয়ন, চীনে ৩৫১ মিলিয়ন, নাইজেরিয়ায় ২০০ মিলিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রে ১০৩ মিলিয়ন এবং ইন্দোনেশিয়ায় ৯২ মিলিয়ন। ওই সময়ে ভারত ও নাইজেরিয়ার নগরবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার হবে বিগত ৪০ বছরের চেয়ে বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শহরাঞ্চলে বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান, আবাসন, জ্বালানি ও অবকাঠামো জোগানো দেশগুলোর জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। পাশাপাশি বাড়বে শহুরে দারিদ্র, বৃদ্ধি পাবে বস্তি ও বস্তিবাসীর সংখ্যা এবং খারাপ হবে শহরের পরিবেশ।
এতে নগরবাসীদের জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সৃষ্ট ঝুঁকিও তুলে ধরা হয়। প্রাথমিক বিশ্লেষণের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, গত বছর ১ মিলিয়ন বা তার বেশি জনসংখ্যা ছিল এমন ৪৫০টি শহর এলাকার মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ অন্তত একটি বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মধ্যে বাস করে।
এতে বলা হয়, জনসংখ্যা বৃদ্ধি বেশ কটি খাতে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করলেও পাশাপাশি আফ্রিকা ও এশিয়ার শিক্ষা ও গণসেবা খাতে নতুন সুযোগ বয়ে আনবে। কারণ জনসংখ্যার ঘনবসতির কারণে তাদের কাছে সেবা পৌঁছানো এসব খাতের জন্য সহজ হবে।
নিউ ইয়র্কে এ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক জাতিসংঘ সহকারি মহাসচিব জোমো কোয়ামে সুন্দরম সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা হলো মহানগরগুলোর ব্যাপক কলেবর বৃদ্ধি।" তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭০ সালে মাত্র ৩৯ মিলিয়ন মানুষ 'তথাকথিত' মহানগরগুলোতে বাস করতো। আর অন্য শহরগুলোতে বাস করতো মাত্র ১০ মিলিয়ন মানুষ। অর্থাত্ সেই সময় শহুরে নাগরিকের সংখ্যা ছিল তখনকার বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ৩ শতাংশ।
সুন্দরম আরো উল্লেখ করেন, ২০১১ সালে এসব মহানগরের মোট জনসংখ্যা পৌঁছায় ৩৫৯ মিলিয়ন বা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৯.৯ শতাংশে। আগামী ২০২৫ সালে মহানগরগুলোর লোকসংখ্যা দাঁড়াবে সেই সময়ের মোট জনসংখ্যার ১৩.৬ শতাংশ বা ৬৩০ মিলিয়নে।
প্রতিবেদনে আগামী জুন মাসে ব্রাজিলের রিও-তে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে টেকসই নগর তৈরিতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়নে বিশ্ব নেতাদেরকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, বর্তমানে যেহেতু বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা শহরে বাস করছে, তাই এ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। (এসআর)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |