পেইচিং নিউ হুয়ামার্ট সুপার মার্কেটের অর্গানিক খাদ্য কাউন্টারের সামনে দোকান কর্মচারি হু য়া ঠিং ক্রেতাদের জন্য অর্গানিক শাকসবজি প্যাকেট করতে ব্যস্ত। প্রতি দিন ভোরবেলায় একশো কিলোগ্রাম টাটকা অর্গানিক শাকসবজি পেইচিংয়ের উপকন্ঠ থেকে শহরের কেন্দ্রীয় স্থানের সুপার মার্কেটে আনা হয়। দোকানকর্মচারি হু য়া ঠিং ব্যাখ্যা করে বলেন, বিশটিরও বেশি রকমের অর্গানিক শাকসবজি ও অর্গানিক খাদ্য ভালভাবে বিক্রি করা হয়। অর্গানিক শাকসবজি ও খাদ্যের দাম সাধারণ পন্যদ্রব্যের চেয়ে এক গুণের মতো বেশি। একটি সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন,

অনেক লোক বিশেষভাবে দোকানে অর্গানিক শাকসবজি কিনতে আসে। জানা গেছে, শিশুরা বেশি অর্গানিক খাদ্য খায়। এক কথায় এখন আস্তে আস্তে লোকেরা অর্গানিক শাকসবজি কিনতে আগ্রহী হচ্ছে। তাদের মতে অর্গানিক খাদ্য খেতে তারা স্বস্তি বোধ করে।

জানা গেছে, এ ধরনের সুপার মার্কেট পেইচিংয়ে বেশ কয়েকটি আছে। যেমন ক্যারেফোর ও হুয়ামার্টে এ সব অর্গানিক শাকসবজি ও খাদ্য বিক্রি করা হয়। বতর্মানে অর্গানিক খাদ্য আস্তে আস্তে চীনের জনসাধারণের মধ্যে প্রবেশ করছে। এ সব অর্গানিক খাদ্য টেবিলের নতুন ধরনের আইটেম হয়ে গেছে।

তাহলে অর্গানিক খাদ্য কাকে বলে? সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে, যে খাদ্য উত্পাদনের প্রক্রিয়ায় কোন রাসায়নিক সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি। অর্গানিক খাদ্য হল দূষণমুক্ত প্রাকৃতিক পণ্যদ্রব্য। চীন দু'হাজার সাল থেকে অর্গানিক খাদ্য শিল্প উন্নয়ন করতে শুরু করে। দু'হাজার নয় সাল পর্যন্ত অর্গানিক খাদ্যের ক্রয়ের পরিমাণ এক হাজার কোটি রেন মিন পিতে দাঁড়িয়েছে। এখন চীন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্গানিক খাদ্য বিক্রি-করা বাজারে পরিণত হয়েছে।

মি: ছেন চাও শিয়েন একজন সাধারণ পেইচিংবাসী। তিনি মাঝে মধ্যে অর্গানিক শাকসবজি কিনে থাকেন। তিনি বলেন, যদিও এ সব শাকসবজির দাম একটু বেশি, তবুও তিনি মনে করেন, এই মূল্য দেওয়া যুক্তিযুক্ত। তিনি বলেন,

যদি আপনি মনে করেন, এই জিনিস আপনার শরীরের জন্য হিতকর তাহলে একটু বেশি টাকা ব্যয় করা কোন ব্যাপার না। আমার মনে হয়, যে জিনিসের দাম বেশি অবশ্যই তা মানের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। রাসায়নিক সামগ্রী ব্যবহার না করা বা একেবারে ব্যবহার না করার কারণে এ সব শাকসবজির উত্পাদনকাল নিশ্চয়ই দীর্ঘ হয়। তা ছাড়া, শ্রমশক্তি ও সামগ্রীর ব্যয়ও অবশ্যই বেশি হতে পারে। সুতরাং এ ধরনের শাকসবজির দাম বেশি হওয়াই স্বাভাবিক ।

অর্গানিক খাদ্য বাজারের বিরাট বাণিজ্য সুযোগ রয়েছে বলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে অধিক থেকে অধিকতর শিল্প প্রতিষ্ঠান এই বৃত্তিতে প্রবেশ করছে। দু'হাজার সাত সালে গঠিত জেনগু পেইচিং কৃষি উন্নয়ন কোম্পানি লিমিটেড হল এদের মধ্যে অন্যতম। এই কোম্পানি লিমিটেড ৭০টিরও বেশি ধরনের অর্গানিক পণ্যদ্রব্য সরবরাহ করতে পারে। এই কোম্পানি লিমিটেডের উত্পাদন ও বিক্রির কেন্দ্র আছে। একটি সাক্ষাত্কারে এই কোম্পানি লিমিটেডের বোর্ড চেয়াম্যান জেন শিং ডং বলেন, একই কোম্পানিতে অর্গানিক খাদ্য উত্পাদন করা ও বিক্রি করা হলে ক্রেতারা কেবল এই কোম্পানির নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য পেতে পারে তাই নয় টেকসই উন্নয়নের ধারণা জনসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলা হয়। তিনি বলেন,

আমার মনে হয় অর্গানিক খাদ্য শিল্পের উন্নয়ন করতে চাইলে আমাদের উপলব্ধি করা উচিত যে, অর্গানিক খাদ্য গ্রহণ মানুষের শরীরের জন্য ভাল। তা ছাড়া, অর্গানিক শাকসবজির চাষ করা হলে আমাদের চার দিকের পরিবেশ আপনাআপনি উন্নত হবে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, দু'হাজার সাত সালে জেনগু পেইচিং কৃষি উন্নয়ন কোম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম দিকে অর্গানিক খাদ্যের বিক্রির পরিমাণ মাত্র ৮ লাখ ইউয়ান ছিল। কিন্তু দু'বছর পর, বিক্রির পরিমাণ ৫০ লাখ হয়েছে। বতর্মানে এই কোম্পানির নিয়মিত ক্রেতার সংখ্যা ৬০ হাজারেরও বেশি।

সম্প্রতি চীনে জেনগুর মতো চার হাজার অর্গানিক খাদ্য উত্পাদন কোম্পানি আছে। অর্গানিক খাদ্য চাষ করা জমির আয়তন ২৬ লাখ এক্টর। এই উত্পাদন শিল্প যাতে সুষ্ঠুভাবে বিকশিত হয় সেই জন্য চীনে অপেক্ষাকৃতভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে ২৬টি সংস্থা অর্গানিক খাদ্য উত্পাদনকারী কোম্পানিকে লাইসেন্স বিতরনের ব্যবসায় নিয়োজিত রয়েছে। এখন পযর্ন্ত মোট ৪৮০০টি লাইসেন্স বিতরন করা হয়েছে।

চীনে অর্গানিক খাদ্য উত্পাদন শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন ফ্রান্সের বার্তা সংস্থা ও ব্রিটেনের বার্তা সংস্থাসহ তথ্য মাধ্যমগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ সব তথ্য মাধ্যমে এ প্রসঙ্গে প্রচার করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বিশ্বের অনেক অর্গানিক উত্পাদন বিশেষজ্ঞ চীনে তাদের পেশা উন্নয়ন করতে এসেছেন। ক্লস হলেন জার্মানি থেকে আসা একজন বিশেষজ্ঞ। একটি সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, চীনে অর্গানিক খাদ্য উন্নয়নের ভাল ভিত্তি ও ঐতিহ্য আছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,

প্রাচীনকালে চীনের কৃষকরা অর্গানিক কৃষিজাত পণ্য উত্পাদন করতেন। তাদের পূর্বপুরুষরা বর্তমানের আধুনিক পদ্ধতি থেকে ভিন্ন উপায়ে চাষ করতেন। তারা কৃষিতে পরিত্যাক্ত আবর্জনা আবার জমিতে ছড়িয়ে দিতেন। এটা হল প্রাচীনকালের চীনের কৃষকদের এক ধরনের চাষ পদ্ধতি । তা ছাড়া এটা এক ধরনের প্রাকৃতিক চাষ পদ্ধতি।

মি: ক্লস পর পর পেইচিংয়ে বেশ কয়েকটি অর্গানিক খাদ্য কোম্পানি খুলেছেন। তিনি বলেন, জার্মানিতে অর্গানিক খাদ্যের নিয়মিত ভোক্তার সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ। কিন্তু চীনের লোকসংখ্যা ১৩০ কোটি। যদি ৫ শতাংশের অনুপাত হয় তাহলে এই ভোক্তার গোষ্ঠী অত্যন্ত বড় হবে।

তবে বতর্মানে চীনে অর্গানিক খাদ্য ক্রয়ের পরিমাণ মাত্র খাদ্য ভোক্তার মোটমূল্যের শতকরা শুন্য দশমিক শুন্য ২ থেকে শুন্য দশমিক শুন্য৩ ভাগ। অধিকাংশ লোক অর্গানিক খাদ্য সম্পর্কে বেশি অবগত নয়। পেইচিংবাসি মাডাম হো তাদের মধ্যে একজন। তিনি বলেন,

এর আগে আমি অর্গানিক খাদ্যের নাম শুনিনি। আমি কোন দিন এ ধরনের খাদ্যও কিনিনি। আমি সব সময় খোলা বাজার থেকে শাকসবজি কিনি।

তা ছাড়া, অর্গানিক খাদ্যের ওপর অনেক লোকের সন্দেহ আছে। যেমন চীনের একটি প্রভাবশালী ওয়েবসাইটের একটি জরীপ থেকে জানা গেছে, শতকরা ১৭ জন মনে করেন, অর্গানিক খাদ্যকে বিশ্বাস করা যায় না। এ থেকে বোঝা যায় যে, ভবিষ্যতে চীনে এই উত্পাদন শিল্প উন্নত করার জন্য জনসাধারণের মধ্যে অর্গানিক খাদ্যকে জনপ্রিয় করে তোলা একান্ত প্রয়োজন।

বতর্মানে বিশ্বজুড়ে অর্গানিক খাদ্য উত্পাদন শিল্প হচ্ছে একটি সম্ভাবনাময় উত্পাদন শিল্প। বিশ্বের একটি প্রভাবশালী গবেষণা সংস্থার এক রিপোর্টে দেখা গেছে, এই উত্পাদন শিল্প প্রতি বছর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দু'হাজার বারো সালে সারা বিশ্বে অর্গানিক খাদ্যের বিক্রির পরিমাণ ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে অধিক থেকে অধিকতর অর্গানিক খাদ্য চীনের সাধারণ পরিবারে প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।