Web bengali.cri.cn   
" চীন বিশ্বের বৃহত্তম দ্রুত গতির রেলপথ জাল গড়ে তুলেছে"
  2012-05-10 19:44:48  cri
বতর্মানে দ্রুত গতির রেলপথ আধুনিক সমাজের এক ধরনের নতুন পরিবহণের পদ্ধতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরাপত্তা, দ্রুতি , অর্থনীতি ও পরিবেশ সংরক্ষণসহ ক্ষেত্রে দ্রুত গতির রেলপথের ষ্পস্ট প্রাধ্যনা আছে। নতুন শতাব্দিতে প্রবেশ করার পর চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি বাস্তবায়নের জন্য চীনের রেলপথের কতৃর্পক্ষ দ্রুত গতির যাত্রীবহন রেলগাড়ি উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীন নিজস্ব উত্পাদনে দ্রুত গতির রেলপথ নির্মানের নীতি অনুসরন করে আসছে। গত দশ বছরের চেষ্টার মাধ্যমে চীনে বেশ কয়েকটি দ্রুত গতির রেলপথ নির্মান করা হয়েছে এবং আগের পুরাতন রেলপথগুলোর সংস্কার করা হয়েছে। সংস্কারের পর এ সব পরাতন রেলপথ আধুনিক হয়ে উঠেছে। বতর্মানে চীনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আকারের এবং সবচেয়ে দ্রুত গতির রেলপথ জাল আছে। দু'হাজার এগারো সালে পেইচিং—শাংহাই দ্রুত গতির রেলপথসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লাইন চালু হয়েছে। এখন চীনের দ্রুত গতির রেলপথের পরিবহনের মোট দূরত্ব ১৩ হাজার কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে।

চীন একটি বিশাল দেশ। চীনের লোকসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। বিভিন্ন অঞ্চলে অর্থনীতির উন্নয়ন ভারসাম্যহীন । সুতরাং চীনের প্রধান যানবাহণ হিসেবে রেলপথের পরিবাহণ সবর্দাই বিরাট চাপের সম্মুখীন হয়। তবে গত বিশ বছর বা আরও বেশী সময় আগে দ্রুত গতির রেলপথের উন্নয়নে বিশ্বের কোন কোন শিল্পোন্নত দেশগুলোর তুলনায় চীন পিছিয়ে পড়েছে। দু'হাজার চার সালে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ 'দীর্ঘ ও মাঝারি মেয়াদের রেলপথ জালের পরিকল্পনা' প্রকাশ করেছে। এটা ছিল চীনের রেলপথের ইতিহাসে প্রথমটি দীর্ঘ ও মাঝারি মেয়াদের উন্নয়ন পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনায় দু'হাজার বিশ সাল পযর্ন্ত সারা চীনে রেলপথের চলাফেলা দূরত্ব এক লাখ কিলোমিটারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়। এক লাখ কিলোমিটারের মধ্যে বারো হাজার কিলোমিটার হবে ঘন্টার গতি দু'শো কিলোমিটারের ওপর। চীনের রেল মন্ত্রণালয়ের সিনিয়া ইনজেনিয়ান হো হুয়া উ বলেন, দু'হাজার চার সালে শহুরে রেলপথ চীনের প্রথমটি দীর্ঘ-মাঝারি মেয়াদের রেলপথ জাল হিসেবে নির্ধারন করা হয়। তবে চার বছর পর অথার্ত দু'হাজার আট সালে দ্রুত গতির রেলপথ সম্ভব হয়ে উঠেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,

আমরা সব সময় মনে করি যে, সবস্ত শক্তিকে কেন্দ্রভূত করে বড় কাজ সম্পন্ন করা যায়। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা যেমন আগের সঞ্চয় সম্পন্ন করেছি তেমনি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এনে নিয়েছি। উদ্ভাবন সাধনের মাধ্যমে আমরা সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বিশ্বের প্রথম শ্রেনীর দ্রুত গতির রেলপথ নির্মান করেছি। পেইচিং-থিয়েচিন আর্ন্তনগর রেলপথ এদের মধ্যে একটি প্রতীকি প্রকল্প।

পেইচিং-থিয়েনচিন আর্ন্তনগর রেলপথ হল চীনের প্রথমটি মানদন্ড দ্রুত গতির যাত্রাবাহী রেলপথ লাইন। গোট লাইন প্রায় ১২০ কিলোমিটার। এই লাইনের মাধ্যমে রাজধানী পেইচিং ও কেন্দ্রীয় শাসিত মহা নগর থিয়েনচিন সংযু্ক্ত করা হয়েছে। দু'হাজার পাচ সালের ৪ই জুলাই এই লাইনের নির্মান কাজ শুর হয়। দু'হাজার সাত সালের ১৫ই ডিসেম্বর নির্মান কাজ শেষ হয়। দু'হাজার আট সালের ১ আগ্যস্ট লাইনটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। এই আর্ন্তনগর রেলগাড়ির গতি হল ঘন্টায় ৩৫০ কিলোমিটার। এ থেকে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, চীনের দ্রুত গতির রেলপথের প্রযুক্তি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানে উন্নীত হয়েছে। পেইচিং-থিয়েনচিন আর্ন্তনগর রেলপথের নির্মান কাজ সম্পন্ন হওয়া হচ্ছে চীনের দ্রুত গতির রেলপথের ইতিহাসে একটি মাইলফলক । চীনের রেল মন্ত্রণালয়ের পরিবহন ব্যুরোর মহা পরিচালক জেন সু গুয়াং মনে করেন, এই লাইন নির্মানের আগে রেল মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পের ওপর পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালিয়েছে। অবশেষে নির্ধারিত হয়েছে যে, চীনা লোক নিজেই এই দ্রুত গতির রেলপথ নির্মান করবে। তিনি বলেন,

কেবল বিদেশ থেকে আমদানিকৃত আধুনিক প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। কেননা, যে কোন দেশ চীনের এই প্রকল্প সম্পন্ন করতে পারে না। চীনে দ্রুত গতির রেলপথ নির্মাণ কাজ একটি বিরাট প্রকল্প। চীনের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির বৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য দ্রুত গতির রেলপথ বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। সুতরাং আমরা এই সুযোগ বিদেশকে নিশ্চয়ই দেবো না।

দু'হাজার দশ সালে ঘন্টায় ৩৫০ কিলোমিটারের শাংহাই-নানচিন ও ঘন্টায় ২৫০ কিলোমিটারের বেশ কয়েকটি দ্রুত গতির রেলপথ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। এর আগে দু'হাজার দশ সালের শেষ দিকে পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত সপ্তম বিশ্ব দ্রুত গতির রেলপথ সংক্রান্ত সম্মেলনে আন্তর্জাতিক রেলপথ সংঘের মহা সচিব লুবিনু চীনের দ্রুত গতির রেলপথের ভূয়সী প্রসংশা করেছেন। তিনি বলেন,

বতর্মানে চীনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আকারের দ্রুত গতির রেলপথ জাল আছে। আগামি দশ থেকে বিশ বছরের মধ্যে এই রেলপথ জাল আরও দু থেকে তিন গুণ সাম্প্রসারিত হবে। চীনের দ্রুত গতির রেলপথ বিশ্বকে নেতৃত দেব।

জানা গেছে, দু'হাজার বারো সাল নাগাদ চীনে রেলপথের চলাচল দূরত্ব এক লাখ দশ হাজার কিলোমিটারেও বেশী হতে পারে। ইয়াংসি নদীর বদ্বীপ, জুচিয়াং নদীর বদ্বীপ, উত্তর-পূর্বাঞ্চল , মধ্য অঞ্চল এবং উহানসহ উন্নত অঞ্চলে ও জনবহুল অঞ্চলে আন্তনগর রেলপথ পর পর চালু হবে। দ্বাদশ পাঁচশালা পরিকল্পনা কলাকালে চীন দ্রুত গতির রেলপথ নির্মাণে আরও বেশি অগ্রগতি অর্জন করতে পারবে। চীনে দ্রুত গতির রেলপথ চীনের পরিবহণ কাঠামো পরিবর্তন করেছে। দ্রুত গতির রেলপথ জ্বালানি সাশ্রয় করতে পারে এবং পরিবেশ রক্ষা করতে পারে। তা ছাড়া রেলপথ লাইনের বরবার এলাকার প্রাসঙ্গিক উত্পাদন উন্নয়নও আপনাআপনি সম্প্রসারিত হতে পারে। এ প্রসঙ্গে চীনের উপ প্রধানমন্ত্রী জেন ডে জিয়াং বলেন,

চীনের দ্রুত গতির রেলপথের উন্নতি দ্রুততর করার ফলে চীনের রেলপথের আধুনিকিকরণের মান উন্নত হয়েছে। এর পাশাপাশি রেলপথের পরিবহণের ক্ষমতাও বেড়েছে। যার ফলে চীনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দ্রুত গতিতে বিকশিত হয়েছে। তা ছাড়া , দ্রুত গতির রেলপথ চালু হওয়ার পর লাইন বরাবর এলাকাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের পরিসেবমূলক শিল্পের দ্রুত উন্নতি হযেছে। উত্পাদনের কাঠামো উন্নত হওয়ার পর জমির ব্যয় পরিমান কমানো হয়েছে , জ্বালানি সাশ্রয় করা হয়েছে এবং বিষাক্ত গ্যাস নি:সরণের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। জনসাধারণের জীবিকা উন্নত করার ব্যাপারে দ্রুত গতির রেলপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

চীনের দ্রুত গতির রেলপথ কেবল অর্থনীতির উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে এসেছে তাই নয় জনসাধারনের ভ্রমণের জন্য অনেক সুবিধা এনে দিয়েছে। আসলে চীনের দ্রুত গতির রেলপথ অজান্তে জনসাধারনের জীবনকে পরিবর্তন করছে। একটি সাক্ষাত্কারে একজন যাত্রী বলেন,

তিনি বলেন, আগে তিনি রেলগাড়িতে চড়ে তার জন্মস্থানে গেলে তিন ঘন্টা লাগতো। এখন দ্রুত গতির গাড়িতে চড়ে মাত্র এক ৪০ মিনিট লাগে। মনে হয় দুটো জায়গার মধ্যে দূরত্ব অনেক কমে গেছে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040