|
কেন এই সবুজ অর্থনীতির উন্নয়ন করতে হবে? চীনের আত্মনির্ভর উত্পাদনে ট্রেডমার্ক গাড়ি বিয়াডি কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান হুয়াং ছুয়েন ফু এভাবে ব্যাখ্যা করে বলেছেন,
চীনের সম্মুখীন সবচেয়ে বড় চাপ হল তেল সংকট। গত বছর চীনের গাড়ির দ্রুত উন্নতি হয়েছে। আগামি দশ বারো বছরের মধ্যে প্রতিটি পরিবারে একটি গাড়ি থাকবে তা হাস্যকর কথা নয়। তাহলে চীনে ৪০ কোটি পরিবার আছে। যদি প্রতিটি পরিবারে একটি করে গাড়ি থাকে তাহলে ৪০ কোটি গাড়ি হবে। যদি বছরে একটি গাড়িতে ২ টনের মত তেল ব্যবহার করা হয় তাহলে ৪০ কোটি গাড়িতে ৮০ কোটি টনের মত তেল ব্যবহার করা হবে। তার মানে চীনকে ৮০ কোটি টন তেল আমদানি করতে হবে। এত বেশি তেল কেনা তো অসম্ভব। সুতরাং তেলের নিরাপত্তা দেশের নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
মানব জাতির অর্থনীতি উন্নয়নের পদ্ধতি পরিবর্তন করা, নতুন সবুজ জ্বালানি দিয়ে শিল্প উন্নয়ন করা বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি উন্নয়নের প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ক্ষেত্রে চীন অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। সদ্য সমাপ্ত চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেস ও চীনের রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের বার্ষিক অধিবেশনে সরকারি কার্যবিবরণী পেশ করার সময় চীনের প্রধান মন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও আগামী পাঁচ বছরে বিষাক্ত গ্যাস নি:সরণের পরিমাণ ও জ্বালানী ব্যয় কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন,
আগামী পাঁচ বছরে তেলের বদলে অন্যান্য জ্বালানীর অনুপাত এক দশমিক চার শতাংশ বাড়বে। ইউনিট জি ডি পির মোটমূল্যের ব্যয় ও কার্বনডাই অক্সাইডের নি:সরণের পরিমাণ ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ হ্রাস পাবে। প্রধান দূষিত সামগ্রী নিষ্কাশনের পরিমাণ ৮ থেকে ১০ শতাংশ হ্রাস পাবে।
তাহলে কেমন করে এ সব ক্ষেত্র বাস্তব সম্মত হতে পারে ? এ প্রসঙ্গে একটি সাক্ষাত্কারে চীনের রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান জেন পিং আগামি পাঁচ বছরে এ সব লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ ব্যাখ্যা করে বলেছেন-
এ সব লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকার বিষদ পদক্ষেপ নিয়েছে। এ সব পদক্ষেপে রয়েছে অর্থনীতির কাঠামো পুনবিন্যাস করা, সেকেলে সরঞ্জাম বাতিল করা, অতিরিক্ত জ্বালানী ব্যবহৃত শিল্প প্রতিষ্ঠানের উন্নতির ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণ করা, নবোদিত উত্পাদন শিল্প ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করা এবং পরিসেবামূলক শিল্প ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করা। তা ছাড়া, প্রযুক্তিগত প্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। জ্বালানী সাশ্রয় করতে হবে। বিষাক্ত গ্যাসের নি:সরণের পরিমাণ কমাতে হবে।
এ প্রসঙ্গে চীনের রেন মিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিং মিং মনে করেন, দ্বাদশ পাঁচশালা পরিকল্পনা চলাকালে সবুজ অর্থনীতি উন্নয়নের ওপর চীন সরকার যে সমর্থন করেছে তা নজীরবিহীন। তিনি বলেন,
আমরা এভাবে বলতে পারি যে, সবুজ উন্নয়নের ধারণা পুরোপুরি উপলব্ধি করেছি কেবল দ্বাদশ পাঁচশালা পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করার পর। দ্বাদশ পাঁচশালা পরিকল্পনায় ষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে , আগামী পাঁচ বছরে নতুন জ্বালানী, পরিবেশ সংরক্ষণ ও হাইটেক শিল্প ক্ষেত্রে বিশেষভাবে মনোযোগ দেয়া হবে। সবুজ অর্থনীতির উন্নয়নে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ নীতি প্রণয়ন করেছে। অনেক প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার অনেক অর্থ বরাদ্দ করেছে। আগামি পাঁচ বছরের মধ্যে নিম্ন কার্বন থাকা শহুরে বসবাস-করা নাগরিকরা জীবন যাপন করবে। এক কথায় সবুজ উন্নয়নে চীন সরকার যথেষ্ট সমর্থন দিয়েছে।
বাস্তবিকভাবে চীনের সবুজ অর্থনীতি একটু দেরিতে বিকশিত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। দু'হাজার দশ সালে চীনের বায়ু চালিত বিদ্যুত উত্পাদনের পরিমাণ বিশ্বের প্রথম স্থানে উঠে আসবে । চীনে সৌর শক্তি উত্পাদিত বিদ্যুতের পরিমাণও বিশ্বের প্রথম সারিতে রয়েছে। এ কথা বলা যায়, আরও বড় আকারের সবুজ বিপ্লবের সুত্রপাত শুরু হবে। চীনের নবোদিত জ্বালানী উত্পাদন শিল্প উন্নয়ন সংক্রান্ত কর্মসূচীতে স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, দু'হাজার বারো সাল থেকে দু'হাজার বিশ সাল পযর্ন্ত বাতাসে ও সৌর শক্তি চালিত বিদ্যুত উত্পাদনে ৫ ট্রিলিয়ান রেন মিন পি বরাদ্দ করা হবে।
জানা গেছে, বিশ্বের অনেক দেশে নতুন জ্বালানী উন্নয়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নবোদিত জ্বালানীকে তার অর্থনীতি পুনজ্জীবিত করে তোলার হাতিয়ার হিসেবে গণ্য করে। দু'হাজার তেরো সালের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সবুজ অর্থনীতির উন্নয়নে দশ হাজার পঞ্চশ লাখ কোটি ইউরো বরাদ্দ করবে। সম্প্রতি জাপান জানিয়েছে, একাবিংশ শতাব্দিতে জাপান নিম্ন কার্বন বিপ্লবের নেতৃত্ব দেবে। এখানে উল্লেখ করতে হয় যে, সবুজ অর্থনীতি উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় যদিও চীনের নৈপুন্য ভাল, তবুও যুক্তরাষ্ট্র , ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের তুলনায় দু'পক্ষের মধ্যে ব্যবাধান এখনও অত্যন্ত প্রকট। এ প্রসঙ্গে চীনের রেন মিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিং মিং বলেন, বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর চেয়ে চীনে সবুজ অর্থনীতি উন্নয়ন করা আরও কঠিন। তিনি বলেন,
সত্যি কথা বলতে গেলে, আমাদের পক্ষে সবুজ অর্থনীতি উন্নয়ন করা অপেক্ষাকৃত কঠিন। আমাদের সম্মুখীন চাপও বেশী। কারণ আমাদের শিল্পায়ন পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। চীন একটি উন্নয়নশীল দেশ। চীন এখনও ভারী শিল্প উন্নয়নের পর্যায় রয়েছে। কিন্তু পাশ্চাত্য দেশগুলো শিল্পায়ন সম্পন্ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো দেশ অনেক আগেই শিল্পায়ন সম্পন্ন করেছে।
চীনের আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষণালয়ের বিশ্ব অর্থনীতি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ছেন ফেন ইন মনে করেন, বতর্মানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নতুন ধরনের জ্বালানীর উন্নয়ন করছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে চাইলে প্রযু্ক্তিগত উদ্ভাবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তিনি বলেন,
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন। কয়লা হোক, তেল হোক বা প্রাকৃতিক গ্যাসও হোক ভবিষ্যত এক দিনে তা নি:সন্দেহে শেষ হয়ে যাবে। এ সব জ্বালানী শেষ হওয়ার আগে আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। আমাদের আগে থেকে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন করা উচিত। আসলে ভবিষ্যতে নতুন জ্বালানী উন্নয়নের ব্যাপারে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও চীনের মধ্যে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
এ প্রসঙ্গে চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি, গুওয়াংডং প্রদেশ সরকারের মহাসচিব, গুওয়াংডং প্রদেশের বিজ্ঞান একেডেমির পরিচালক ছেন ইয়াং মনে করেন ,
বতর্মানে আমাদের কেন্দ্রীয় প্রযুক্তি গত শতাব্দীর সত্তর দশকের মানে রয়েছে। এখন পরিবেশন সংরক্ষণে অনেক প্রযুক্তি পাশ্চাত্য দেশগুলো থেকে আমাদানি করতে হবে। সুতরাং এ অবস্থা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিবর্তন করা উচিত। আমাদের উচিত নিজের শক্তির ওপর নির্ভর করে এ সব প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন সম্পন্ন করা।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |