|
উছাং একটি জেলার নাম। এই জেলা চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উছাং চীনের সুগন্ধী চালের রাজধানী বলে পরিচিতি পেয়েছে। উছাং জেলা পর্যায়ের একটি নগর। দীর্ঘকাল ধরে উছাং জেলায় প্রধানত ধানচাষ করা হয়। এই জেলা চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সফল উত্পাদনের কেন্দ্র। সেখানে চাষ-করা চালের গুণগতমানের দেশজুড়ে সুনাম আছে। দু'হাজার এগারো সালে উছাং জেলা থেকে জাপানে ১৩০ কিলোগ্রাম চাল রফতানি করা হয়। কেন উছাং অঞ্চলের উত্পাদিত চাল এত সুস্বাদু? কেন এই চাল সারা দেশে এত ভালো বিক্রি হয়? এ প্রসঙ্গে উছাং শহরের পৌর সরকারের ভাইস মেয়র দু ছে ছুং ব্যাখ্যা করে বলেন,
প্রাকৃতিক অবস্থার দিক থেকে এখানকার মাটির রং কালো । সাধারণত কালো রংয়ের মাটি উবর্র । কোন কোন জায়গায় কালো মাটির গভীরতা এক দশমিক তিন মিটার। এ ধরনের মাটি চাল চাষ করার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তা ছাড়া, উছাং জেলার মধ্যে মোট ২৭০টি নদী আছে। এ সব নদীর পানিতে প্রাকৃতিক খনিজ পদার্থ রয়েছে। সুতরাং এ কথাও বলা যায় যে, উছাংয়ের চাল প্রাকৃতিক খনিজ পানি খেয়ে খেয়ে পরিপক্ক হয়ে যায়। বছরে এখানে সুর্য আলো পড়ার সময় ২৬০০ ঘন্টারও বেশি। দিনের বেলা ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান ১৫ ডিগ্রি। তাই এই তাপমাত্রায় চালে আরও বেশি জীবনীশক্তি বজায় রাখা যায়। তা ছাড়া, চাল রোপনের সময় অনেক প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হয়।
বতর্মানে উছাং জেলার উত্পাদিত চাল সারা দেশে বিক্রি করা হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চাল কেনার জন্য অর্ডার আসে । কৃষকরা কখনো চাল বিক্রি করার ব্যাপারে মাথা ঘামাতে চায় না। সংশ্লিষ্ট মহল চাল সংগ্রহ করতে আসে। এই ধরনের চালের উত্পাদন আরও বাড়ানোর জন্য প্রতি বছর স্থানীয় সরকারের প্রযুক্তি মহল কৃষকদের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ দেয়।
কৃষকদের সহযোগিতা সংস্থা প্রাথমিক স্তরের ধানচাষী কৃষকদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কৃষকদের অধিকার ও স্বার্থ নিশ্চিত করা, চাল চাষ করার প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করে তোলা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কৃষকদের যোগাযোগ ও আলোচনাকে কার্যকর করার ব্যাপারে কৃষকদের সহযোগিতামূলক সংস্থার ভূমিকা অদ্বিতীয়। কৃষক লি ইউয়ু শায়াং এ জেলার একজন নাম-করা ব্যক্তি। তিনি প্রথমে তাঁর গ্রামে কৃষকদের সহযোগিতামূলক সংস্থা গড়ে তুলেছেন। তাঁর উত্পাদিত চাল প্রথমে 'লি ইউয়ু শায়াং' নামক ট্রেডমার্ক পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে তার গ্রামের উত্পাদিত চাল দেশের বিভিন্ন বাজারে প্রবেশ করেছে। দু'হাজার বারো সালে কৃষকদের সহযোগিতা সংস্থার পরিকল্পনা প্রসঙ্গে লি ইউয়ু শায়াং আবেগের সঙ্গে বলেন,
আমি আশা করি, সহযোগিতা সংস্থার সংখ্যা ৩৫টি থেকে ১০০টি পর্যন্ত বাড়তে পারে। বতর্মানে আমাদের সহযোগিতা সংস্থার জমির আয়তন ২০ হেক্টর। আমি আশা করি, দু'হাজার বারো সালের শেষ নাগাদ তা ৫০ হেক্টর থেকে ৭০ হেক্টর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারে। তা ছাড়া, আমি একটি কাজ করতে চাই। এটা হল 'এক ফেনের পরিকল্পনা' তহবিল সংস্থা গড়ে তুলতে চাই। এর মানে হলো অর্ধেক কিলোগ্রাম চাল বিক্রি করা হলে 'সহযোগিতা সংস্থা, সহযোগিতার অংশীদারি, এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানে' এক ফেন প্রদান করা। তাহলে প্রতি মু জমিতে তিন শো ইউয়ান পাওয়া যাবে। যদি এ বছর আরও ২০ হেক্টর পাওয়া যায় তাহলে আমরা ৬০ হাজার ইউয়ান সংগ্রহ করতে পারবো। সংগ্রহ-করা এ সব তহবিল সহযোগিতা সংস্থায় ব্যবহার করা হয়। যেমন, গ্রামে কেউ অসুস্থ হলে এ সব তহবিল কাজে লাগানো যায়।
উছাং চাল উত্পাদন শিল্পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হল প্রক্রিয়া ও ক্রয় শিল্প প্রতিষ্ঠান। প্রক্রিয়া ও ক্রয় শিল্প প্রতিষ্ঠান উছাং চাল অর্থনীতি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সারা উছাং নগরে মোট ১৮০টি চাল প্রক্রিয়াকরণ কারখানা আছে। এ সব প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থানীয় অর্থনীতি উন্নয়ন করার জন্য অনেক অবদান রেখেছে। তা ছাড়া, বতর্মানে উছাং নগরে নিজের গবেষণালয় আছে। এ গবেষণালয়ের কর্মচারীরা মাঝে মাঝে স্থানীয় কৃষকদের জন্য নানা প্রশিক্ষণ দেয়। বতর্মানে উছাং চাল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার বাজারগুলোতে উছাং চাল পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে চাল গবেষণালয়ের পরিচালক শিও ছিং ইউয়ু ব্যাখ্যা করে বলেন,
আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানে গবেষণা, উত্পাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও ক্রয় সংস্থা আছে। বতর্মানে ২০টিরও বেশি রকমের ধানবীজ আছে। গবেষণালয়ের দায়িত্ব হল, ধানের বিভিন্ন প্রকারের উন্নয়ন করা, কৃষকদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা, কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ধানচাষ করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া পরিচালনা করা । অবশেষে গবেষণালয় কৃষকদের কাছ থেকে উচ্চ মূল্যে উচ্চ মানের চাল সংগ্রহ করে। কৃষকরা গবেষণালয়ের সঙ্গে স্বেচ্ছায় চুক্তি স্বাক্ষর করতে চায়। কারণ এর মাধ্যমে তারা এক দিকে উচ্চ মূল্যে চাল বিক্রি করতে পারেন, অন্য দিকে তারা রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং ট্রাকটরসহ সামগ্রী কেনার ক্ষেত্রে সমর্থন পেতে পারেন। প্রতি বছর কৃষকদের জন্য বৈজ্ঞানিক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আসা-যাওয়ার খরচ এবং খাওয়া-দাওয়ার খরচ শিল্প প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করে।
উছাং চালের বাজার আরও মানসম্পন্ন করার জন্য এবং সারা দেশে এই চালের প্রভাব সম্প্রসারণ করা জন্য উছাং জেলা অনেক কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। উছাং পৌর সরকারের ভাইস মেয়র দু ছে ছুয়াং সাংবাদিকদের বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উছাং পৌর সরকার চাল উত্পাদন শিল্প ব্যবস্থাপনা পরিসেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। তা ছাড়া উছাং চাল সমিতি গড়ে তোলা হয়েছে। এই সমিতি চালের বিক্রি ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে। উছাং চাল সমিতি শাংহাই, সিআন ও ছেনদুসহ কয়েকটি জায়গায় চাল মেলার আয়োজন করেছে। দেশের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান উছাং চাল সমিতির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
উছাং চালের খ্যাতি বাড়ার পাশাপাশি দেশের কোন কোন বাজারে নকল উছাং চাল দেখা যায়। এ সব নকল চাল উছাং চালের খ্যাতি নষ্ট করে। সুতরা দু'হাজার দশ সাল থেকে উছাং চাল কড়াকড়িভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার করার পর নকল প্রতিরোধ মার্ক দেওয়া হয়ে থাকে। ভোক্তারা যদি বাজারে কোন নকল উছাং চাল পান তাহলে সংশ্লিষ্ট মহলকে টেলিফোন করে জানাতে পারেন।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |