|
বতর্মানে ঠাছং জেলায় ১৬টি বাণিজ্য পথ ও একটি রাষ্ট্রীয় শ্রেণীর স্থল বন্দর আছে যার বোঝাই ও খালাসের পরিমাণ বছরে ২ কোটি টনের। এই স্থল বন্দরের নাম হোচিও স্থল বন্দর। সুতরাং ঠাংছং অঞ্চলের অবকাঠামো অত্যন্ত ভাল। এ প্রসঙ্গে ঠাংছং জেলার বাণিজ্য বিভাগের পরিচালক লি রি ব্যাখ্যা করে বলেন,
হোচিও স্থল বন্দর হল চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল থেকে দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশে যাওয়ার সবচেয়ে নিকটবর্তী একটি স্থল বন্দর। ঠাংছং জেলার রাজধানী থেকে মিয়ানমারের মিজি যেতে মাত্র দু'শো কিলোমিটারের দূরত্ব পার হতে হয়। মিজি থেকে মিয়ানমার-ভারত সীমান্তে যেতে মাত্র ৬শো কিলোমিটারের মতো দূরত্ব পেরোতে হয়। ভারতে পৌছলে গোটা দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশে যাওয়া যায়। তাই, ঠাংছং সত্যিই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।
বৈদেশিক ও সীমান্তের বাণিজ্য অনবরত বিকশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিনিময়ের সামগ্রী বৈচিত্রময় হয়ে উঠেছে। বতর্মানে ঠাংছংয়ের বৈদেশিক ও সীমান্তের বাণিজ্যের প্রধান পণ্য হলো কাঠ, খনিজ শিল্প, দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিস, যন্ত্র, ইলেক্ট্রোনিক পণ্য, বস্ত্রবয়নজাত পণ্য ইত্যাদি। চীন-মিয়ানমার সীমান্ত অঞ্চল বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ। সুতরাং স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনেকে কাঠ প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে নিয়োজিত হয়। গুলিন নামক কাঠ প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানি লিমিটেড এ সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি। এই কোম্পানি লিমিটেড একটি বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। বেশ কয়েক বছর আগে এই কোম্পানি লিমিটেডে কাঠ প্রক্রিয়াকরণের ব্যবসা চালু হয়। এই কোম্পানির বেশির কাঁচামাল প্রধানত আশেপাশের দেশগুলো থেকে আমদানি করা হয়। তারপর উত্পাদিত পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, দক্ষিণ কোরিয়াসহ কাঠ রফতানিকারি দেশে রফতানি করা হয়। জানা গেছে, দু'হাজার দশ সালে এই কোম্পানি লিমিটেডের রফতানির পরিমাণ ৩০ হাজার ১৫ কোটি মার্কিন ডলারে পৌছেছে। এ কোম্পানি লিমিটেডের রফতানিকৃত পণ্য উত্তর আমেরিকায় সমাদৃত হয়েছে। কারণ এ কোম্পানি লিমিটেড পণ্যদ্রব্যের গুণগতমানের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করে। এই কোম্পানি লিমিটেডের মহা ব্যবস্থাপক গুয়াং ফু ডং বলেন,
রফতানিকৃত পণ্যদ্রব্যের গুণগতমান নিশ্চিত করার জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগে গুণগতমাণ পরীক্ষক আছে। যে সব পণ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে না সে সব পণ্য বিদেশে পাঠানো হবে না। এ সব রফতানিকৃত পণ্যের গুণগতমাণ নিশ্চিত করার জন্য শ্রমিকদেরকে কঠোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যেন প্রত্যেক শ্রমিকের মনে গুণগতমানের বোধ থাকে।
মহা ব্যবস্থাপক গুয়াং ফু ডং বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা কেবল পণ্যদ্রব্যের গুণগতমান উদ্ধার করার জন্য, কিন্তু কাঠ প্রক্রিয়াকরণের সময় বিভিন্ন ধাপের গুণগতমান নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। সুতরাং এই শিল্প প্রতিষ্ঠানে রফতানিকৃত পণ্যদ্রবের উপর ৪০টি ধাপের পরীক্ষা-নিরীক্ষার রেকর্ড থাকে। পরীক্ষার পদক্ষেপ অত্যন্ত কঠোর। তিনি বলেন,
রফতানিকৃত পণ্যের বিস্তারিত রেকর্ড আছে। কোন শ্রমিক নির্মান করেছে , কোথায় নির্মান করা হয়েছে, সবকিছুর রেকর্ড আছে। যদি কোন পণ্যদ্রব্যে ঘাটতি লক্ষ্য করা হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ও এই বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে তলব করা যায়।
পণ্যদ্রব্যের গুণগতমান পরীক্ষা-নিরীক্ষার সম্পূর্ণ ও কঠোর পদক্ষেপ কার্যকর করার ফলে এই কোম্পানি লিমিটেডের রফতানিকৃত পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে এই কোম্পানি লিমিটেডের রফতানিকৃত পণ্য সমাদৃত হয়েছে।
অর্থনীতির সুষ্ঠু কার্যকারিতা অর্জনের পাশাপাশি কীভাবে বন সম্পদের উন্নয়ন ও প্রয়োগ করা যায়? গুলিন কাঠ প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানি লিমিটেড এক বছরে ৪ লাখ টনেরও বেশি কাঁচা মাল শেষ করে দেয়। তাহলে স্থানীয় বন কি ধ্বংস করা যাবে? বাস্তবে গুলিন কোম্পানি লিমিটেড প্রথম দিক থেকে টেকসই উন্নয়ন ও কাঁচা মালের অবকাঠামো গঠনের ওপর মনোযোগ দিয়ে আসছে। বতমানে তাদের প্রাসঙ্গিক পরিকল্পনা কার্যকর করা হচ্ছে। ফুওয়েডং বলেন,
উত্পাদন সম্প্রসারণের জন্য কাঁচা মাল একটানা আসতে হবে। স্থানীয় সরকার আমাদেরকে তিন হেক্টর আয়তনের জমি দিয়েছে। এ সব জমিতে গাছ রোপন করা হবে। পঞ্চাশ বছর পর এ সব গাছ বড় হয়ে যাবে। তখন আমাদের কাঁচা মালের অভাব হবে না। সুতরাং আমাদের বড় সমস্যার সমাধান করা হবে।
দীর্ঘকাল ধরে গুলিন কোম্পানি লিমিটেড বন ও কাঠ সম্পদের সার্বিক প্রয়োগ করে আসছে। তারা সব সময় ছোট সামগ্রী বড় করে প্রয়োগ করা, বড় সামগ্রী বিবেচনা করে প্রয়োগ করা এবং পরিত্যাক্ত সামগ্রী প্রয়োগ করার মূলনীতি অনুসরণ করে আসছে । তারা পর পর জর্মানি ও সুইডেন থেকে আধুনিক উত্পাদন লাইন রফতানি করেছে। যার ফলে শ্রেষ্ঠ কাঠের ব্যবহার কমানো হয়েছে এবং উত্পাদনের মূল্য কমানো হয়েছে। অনেক কাঠের সম্পদ সাশ্রয় করা হয়েছে।
ঠাংছংয়ে বৈদেশিক বাণিজ্য ও সীমান্তের বাণিজ্য বিকশিত ও সম্প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে স্থানীয় বৈদেশিক ও সীমান্তের বাণিজ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর যোগাযোগ নিবিড় হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনীতির সংকট বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঠাংছুংয়ের বৈদেশিক ও সীমান্তের বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দু'হাজার আট সাল থেকে ঠাংছুং জেলার প্রক্রিয়াকরণ শিল্প বিশ্ব মন্দার প্রভাবে সঙ্কুচিত হয়েছে। বিদেশ থেকে অর্ডার আসা রাতারাতি কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার কৃষি সহযোগিতা সংস্থার মাধ্যমে আমদানি-রফতানি পণ্যদ্রব্যের কাঠামো পরিবর্তন করেছে।স্থানীয় সরকারের পরিচালনায় গুলিন কোম্পানি লিমেটেড পর্যায়ক্রমে তার উত্পাদিত পণ্যদ্রব্য ও বাজার পুনর্বিন্যাস করেছে। এ প্রসঙ্গে এই কোম্পানি লিমিটেডের মহা ব্যবস্থাপক ফু ওয়েন ডং বলেন,
আমাদের ক্রয় বাজার সম্প্রসারন করার জন্য আমরা আগে থেকে উত্পাদনের কাঠামো পুনর্বিন্যাস করেছি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক নতুন পণ্য সম্পর্কে গবেষণা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও কানাডার সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক মজবুত হয়েছে।
অর্থনীতির সংকট চলাকালে অনেক অভ্যন্তরীণ শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্মচারি ছাঁটাই করেছে। কিন্তু গুলিন কোম্পানি লিমিটেড একজন কর্মচারিও ছাঁটাই করে নি বরং কর্মচারির সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। দু'হাজার আট সালে বিশ্ব মন্দা শুরু হওয়ার সময় মাত্র আট শো কর্মচারি ছিল, কিন্তু এখন এক হাজার দু'শো কর্মচারি ।
বতর্মানে ঠাংছুংয়ের বৈদেশিক ও সীমান্তের বাণিজ্য স্থিতিশীল উন্নয়নের সময়পর্বে উন্নীত হয়েছে। এ পর্যন্ত সারা জেলায় মোট ১৩৬টি বৈদেশিক ও সীমান্তের শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। দু'হাজার দশ সালে আমদানি-রফতানির মোট পরিমাণ ৮০ দশমিক ২ কোটি রেন মিন পিতে দাঁড়িয়েছে । পরিকল্পনা অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার ঠাংছুং জেলাকে দক্ষিণ এশিয়ার দিকে চীনের ইয়ান্নান প্রদেশের প্রথম উন্মুক্ত জেলা হিসেবে তৈরি করছে।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |