|
সম্প্রতি পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত একটি প্রাসঙ্গিক অধিবেশনে জানা গেছে, দু'হাজার দশ সালের পর তথ্যায়নের পদ্ধতিতে আমদানি-রফতানির পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। যার ফলে আমদানি-রফতানি পণ্যদ্রব্যের গুণগতমান নিশ্চিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি খবরে বলা হয়েছে, চীনের নির্মানকারী আন্তর্জাতিক কোম্পানি জাম্বিয়ায় একটি বড় আকারের সিমেন্ট কারখানা নির্মান করবে। এই কারখানা নির্মিত হওয়ার পর বছরে ১৫ লাখ টন সিমেন্ট উত্পাদন করা হবে। জানা গেছে, এই কারখানা এক হাজারটিরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে পারবে।
চীনের নাননিন হুওয়ানান নগরের কোম্পানি লিমিটেডের উপ মহাব্যবস্থাপক জেন লি ইয়াং সম্প্রতি বলেছেন, আগামি সেপ্টেম্বর মাসে এই নগরে অবস্থিত চীন-আসিয়ান বাণিজ্য বিনিময় কেন্দ্রে নবম চীন-আসিয়ান মেলার আয়োজন করা হবে। তখন আসিয়ান দেশগুলোর পণ্য এই মেলায় প্রদর্শিত হবে।
এতক্ষণ কয়েকটি সংক্ষিপ্ত অর্থনীতির খবর শুনলেন। এখন রয়েছে একটি প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটির শিরোনাম: "চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয়ভাবে উন্নয়নের পদ্ধতি রূপান্তর করছে"। গত বছরের আগস্ট মাসের পর ইউরোপীয় ঋণ সংকট তীব্রতর হয়ে উঠেছে। বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অস্থিতিশীল রয়েছে । এই পরিস্থিতিতে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য বিশেষ করে আমদানি-রফতানি প্রবৃদ্ধির গতি ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্য উন্নয়নের পদ্ধতি রূপান্তরের গতি কীভাবে দ্রুততর করা হবে? বৈদেশিক বাণিজ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সুখের সময় আর কত দূরে ? এ প্রসঙ্গে সি আর আইয়ের নিজস্ব সংবাদদাতা চীনের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলের নির্মাণ শিল্প কেন্দ্র থেকে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।
পৃথিবীতে প্রতি দশ জনের মধ্যে একজন মানুষ চীনের ওয়েনচৌর তৈরি জুতা পরে। বছরে ওয়েনচৌর উত্পাদিত লাইটার লাইনে বেঁধে পৃথিবীকে দুই খন্ড করা যায়। সম্প্রতি সি আর আইয়ের নিজস্ব সংবাদদাতা ওয়েনচৌ শহরের শুয়াংইউ নগর পরিদর্শন করেছেন। তিনি লক্ষ্য করেছেন, এই নগরের রাস্তার দু'পাশে অগুন্তি ছোট-বড় জুতার দোকান আছে। কিন্তু বিশ্ব মন্দা ও ইউরোপীয় ঋণ সংকট শুরু হওয়ার পর বিদেশ থেকে অর্ডরের পরিমাণ অনেক কমেছে। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে এ সব জুতার দোকানের দিন কাটছে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে চীনের আমদানি-রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি শূন্যের কোঠায়। আন্তর্জাতিক বাজারে জুতার চাহিদা অনেক কমেছে। এর পাশাপাশি শ্রম শক্তির মূল্যও বেড়েছে। সুতরাং এ সব শ্রমবহুল শিল্প প্রতিষ্ঠানে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রযুক্তিগত সংস্কার চালানো উচিত। উত্পাদনের পদ্ধতির রূপান্তর করা উচিত।
ওয়েনচৌ জুই কোম্পানি লিমিটেড দিনে ৩০ হাজার জুতা তৈরি করে। এই কোম্পানি লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কোম্পানি লিমিটেডের সরঞ্জাম সম্পূর্ণভাবে বদলে গেছে। নতুন সরঞ্জামের ব্যবহারে শ্রম শক্তি ও সময় সাশ্রয় করা যায়। তা ছাড়া এর কার্যকরিতা গতানুগতিক প্রকল্পের দশ গুণেরও বেশি। একটি ওয়ার্কশপে এই কর্মকর্তা একটি কম্পিউটার লেজারের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে ব্যাখ্যা করে বলেছেন,
এই লেজার দিয়ে এ সব জুতাতে ফুলের নকশা করা হয়। এ সব কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয়।ফলে এ কাজের গুনগতমান নিশ্চিত হয়। প্রতিটি জুতার ওপর ফুল দেখতে একেবারে একইরকম। কিন্তু অতীতে শ্রমিকদের হাতে এ সব কাজ সম্পন্ন করা বেশ কঠিন কাজ ছিল।
নতুন সরঞ্জাম বসানোর পর এই শিল্প প্রতিষ্ঠানের উত্পাদন কার্যকরিতা ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে। এখন একজন শ্রমিক আগের আটজন শ্রমিকের কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম । পণ্যদ্রব্যের গুণগতমান ভাল এবং নির্মানের প্রযুক্তি চমত্কার বলে দেশ-বিদেশের ট্রেডমার্ক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্ডার একটানা পাওয়া যাচ্ছে। এ সব শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের জন্য প্রক্রিয়াকরণ কাজ করার আবেদন জানিয়েছে। জুই কোম্পানি লিমিটেডের উপ মহাব্যবস্থাপক লো লি ব্যাখ্যা করে বলেন,
বিশ্বের বেশ কয়েকটি ট্রেডমার্ক জুতার প্রক্রিয়াকরণ কাজ এখানে সম্পন্ন করা হয়। এ থেকে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, ওয়েনচৌর জুতা তৈরির প্রযুক্তি বিশ্বের উচ্চ মানে উপনীত হয়েছে। প্রক্রিয়াকরণের কাজে তারা হয়তো প্রতি জোড়া জুতার জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ৮০ ইউয়ান দেয়, কিন্তু স্বদেশে নিয়ে যাওয়ার পর ৫০০ ইউয়ানের মতো দামে বিক্রি করা যায়।
সত্যি কথা এই যে, এ সব মোটা মুনাফার সঙ্গে চীনের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর খুব বেশি সম্পর্ক নেই। ওয়েনচৌর তৈরি এক জোড়া জুতার গড় রফতানির দাম দশ মার্কিন ডলার। কিন্তু জুতার ওপর যদি বিদেশের শ্রেষ্ঠ ট্রেডমার্কের সিল লাগানো হয় তাহলে এক জোড়া জুতার দাম কয়েক শো মার্কিন ডলার হয়ে যাবে। সুতরাং চীনের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো মাত্র কিছুটা পরিশ্রমের মূল্য অর্জন করতে পারে।
রফতানির ওপর নির্ভর-করা চীনের এ সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের একমাত্র পথ হল নিজেদের উন্নয়নের পদ্ধতিকে বদলানো। শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ট্রেডমার্ড তৈরি করা। নইলে চিরকাল অন্যদের জন্যই মুনাফা সৃষ্টি করতে হবে।
ওয়েনচৌর খ্যাংনেই কোম্পানি লিমিটেড বছরে এক কোটিরও বেশি জোড়া জুতা উত্পাদন করতে পারে। এখানে তৈরিকৃত জুতা উচ্চ মানের। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই কোম্পানি লিমিটেডের তৈরি জুতা বিশ্বের অনেক দেশের বাজারে সমাদৃত হয়েছে। এই কোম্পানি লিমিটেডের উপ মহাব্যবস্থাপক চৌ চিন সেন ব্যাখ্যা করে বলেন, দু'হাজার এক সালে ফ্রান্সের প্যারিসে এই কোম্পানি লিমিটেডের ট্রেডমার্ড জুতার বিশেষ ক্রয় দোকান বা আউটলেট স্থাপিত হয়েছে।
খ্যাংনেই কোম্পানি লিমিটেডের তৈরি জুতার রফতানি দাম মাত্র ৩০ মার্কিন ডলার অর্থাত ২৩ ইউরোর মতো। কিন্তু এই বিশেষ দোকানে জুতার দাম ৭০ ইউরো। কোন কোন সময় এক জোড়া জুতা দু'শো ইউরোতে বিক্রি করা যায়।
দু'হাজার এক সালে খ্যাংনেই বিদেশের বাজারে প্রবেশ করার পর, চীনের চামনা সমিতি সারা দেশের জুতা নির্মান শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে বলে, পাঁচ বছরের মধ্যে তিন থেকে পাঁচটি আন্তর্জাতিক ট্রেডমার্ড পণ্য তৈরি করা হবে। ১১ বছর পার হয়ে গেছে, এই লক্ষ্য কি বাস্তবায়িত হয়েছে? এ প্রসঙ্গে ওয়েনচৌ শহরের বাণিজ্য ব্যুরোর উপ পরিচালক শিয়া লিন হং বলেন, চীনের তৈরি ট্রেডমার্ক পণ্যের বিদেশে প্রবেশ করা খুব সহজ কাজ নয়। তিনি বলেন,
একটি ট্রেডমার্ক পণ্য সৃষ্টি করা এক বছর তথা দশ বছরের ব্যাপার নয়। একটি ট্রেডমার্ক সৃষ্টি করতে কেবল অনেক অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ করতে হবে তাই নয় অন্যান্য ক্ষেত্রের বরাদ্দও দরকার। যেমন ধরুন ইতালির জুতা শিল্পের অনেক বছরের ইতিহাস আছে। সুতরাং একটি ট্রেডমার্ক সৃষ্টি করা সহজ কাজ নয়।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেনডেন বলেন, চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য অসুবিধার মুখে পড়বে।
জানা গেছে, এ বছর চীনের প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১০ শতাংশের কাছাকাছি বৃদ্ধি পাবে। এই লক্ষ্যবস্তু বাস্তবায়নের জন্য চীনের সংশ্লিষ্ট মহল নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন ধরুন রফতানি শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সাহায্য ও পরিসেবা জোরদার করা উচিত।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |