|
জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ভারত। একশ' কোটি মানুষের এই দেশটি বিভক্ত নানা মত ও পথে। স্বাধীনতার পর ৬৫ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশটির অর্থনীতিতে দুটি ধারা বজায় রয়েছে। দেশটিতে বহুকাল ধরে বজায় ছিল ধীরগতির প্রবৃদ্ধি, আমলাতন্ত্র ও লালফিতার দৌরাত্ম। তবে ১৯৯০ সালে মুক্তবাজার অর্থনীতির দুয়ার খুলে দেওয়ার পর থেকে অর্থনীতির চেহারা বদলে যেতে শুরু করে। হতাশার পরিবর্তে নতুন সম্ভাবনার দেখা মেলে নতুন শতকের শুরুর দিকে। নতুন উদ্যোক্তাদের আশাবাদের স্থানে পরিণত হয় এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশটি। পশ্চাত্পদ ও স্থবির সরকারি খাতের বাধা ডিঙিয়ে এসব উদ্যোক্তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে অর্থনীতি নতুন পথে যাত্রা শুরু করে। তাদের কারণে দেশটির প্রবৃদ্ধি যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি ভৌগোলিক বৈচিত্র্যতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে উজ্জীবিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, পর্যায়ক্রমিক সংস্কার এবং সরকারের সদিচ্ছার পাশাপাশি জনগণের সঞ্চয় ও বিনিয়োগের আগ্রহ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলে। তবে এসব ইতিবাচক বিষয়গুলোর পাশাপাশি রয়েছে রাজনৈতিক বাধা, যা দেশটির অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করতে পারার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে।
ভারতের প্রবৃদ্ধির হার গত আশির দশকেও ছিল মাত্র ৬ শতাংশ। ওই দশকের শেষ দিক থেকে এ হার বাড়তে শুরু করে। অনেকেই তা ১০ শতাংশ ছুঁয়ে যাওয়াকে স্বাভাবিক বলে মনে করছিলেন। আবার অনেকে আশা করেছিলেন, তা আরো বেশি গতি লাভ করবে এবং কেবল দারিদ্র্য ও ক্ষুধাপীড়িত কোটি কোটি মানুষের এ দেশটির নয় - পুরো এশিয়ার চেহারা বদলে দেবে। বিশ্বের সেরা সব প্রতিষ্ঠান বিশাল মধ্যবিত্তের বাজার ধরতে ভারতমুখী হতে শুরু করে ওই সময়।
ভারতের অর্থনীতি আরও ভালো অবস্থানের দিকে যাবে - এ নিয়ে কোনো সংশয় হয়ত নেই। তবে যে গতিতে তা যাওয়ার কথা ছিল সেটি হচ্ছে না বলে ধারণা অনেকের। সর্বশেষ প্রান্তিকে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৬.১ শতাংশে। যদিও সরকার মার্চে শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা ছাড়েনি এখনও। তবে সর্বশেষ তিনটি সিদ্ধান্ত এ পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুচরা বাজার খাতে বিদেশি বিনিয়োগ উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে কয়েক দিনের মধ্যে সরে আসা, তুলা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা এবং সুপ্রিমকোর্টের সিদ্ধান্তের পরও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ট্যাক্স কোড পরিবর্তন অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অনেকের সংশয় দেশটির সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক - আইনের শাসন এখন ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের একের পর এক সিদ্ধান্তহীনতা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতির পুরনো ধারা এখনও বজায় থাকার পাশাপাশি সাম্প্রতিক রাজ্য নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়িতে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে, যার ফলে বাড়ছে মূল্যস্ফীতির হার। রাজনৈতিক কারণে সরকার বড় ধরনের সংস্কারের পথেও পা বাড়াতে পারছে না। অবশ্য অনেকে আশা করছেন, এবার কাঙ্ক্ষিত সংস্কার শেষ হবে। বিশ্লেষকদের মত হলো কাঙ্ক্ষিত সংস্কার এবার সম্পন্ন হলে বেসরকারি খাত দেশটির জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। আর যদি তা না হয়, তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা ও বিনিয়োগ কমে আসা বিস্ময়কর কিছুই হবে না। (এসআর)
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |