|
বিশ্বের প্রধান বিনিময় মুদ্রা মার্কিন ডলার ও ইউরো বেশ কিছু কাল ধরে বেশ নাজুক সময় অতিক্রম করছে। বিশ্বজুড়ে এ দুটির মুদ্রার বিনিময় মূল্য বেশ উঠানামা করছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অনেক দেশ, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলো ডলার ও ইউরোর বদলে স্বর্ণ মজুদের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা মনে করছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট-পরবর্তীকালে ডলার ও ইউরোর দামের ওঠা-নামার প্রেক্ষাপটে একমাত্র সোনাই হতে পারে স্থিতিশীল সঞ্চয়যোগ্য দ্রব্য।
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর রাশিয়া স্বর্ণ কেনায় রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। তাদের সোনা সঞ্চয় আগের বছরের তুলনায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা ৭৮৪ টন বেড়েছে। দেশটি জানিয়েছে, ভবিষ্যতে নিজেদের আন্তর্জাতিক সঞ্চয়ের ভাণ্ডারে সোনার পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করবে তারা। এই সঞ্চয় সোনার মজুদের পরিমাণে রাশিয়াকে বিশ্বের শীর্ষ দেশে পরিণত করছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রাশিয়ার রিজার্ভে সোনার পরিমাণ ৭ শতাংশেরও বেশি, যেখানে অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ প্রায় অর্ধেক। গত বছর সৌদি আরবও প্রচুর সোনা কিনেছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, দুই দেশই বিশ্বের সবচেয়ে বড় খনিজ তেল সরবরাহকারী দেশ আর তাদের কোনো বড় মাপের বৈদেশিক ঋণ নেই।
পাশাপাশি চীন ও ভারতও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ সোনা কিনছে। গত আগস্টে চীন সোনা কিনেছিল ৪০০ টন আর ভারত ২০০ টন। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পরিমাণ মাত্র ৬০০ কোটি ডলার হলেও দেশটি রিজার্ভ হিসেবে ১৫ টন সোনা কিনে রেখেছে।
বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়ের একটা অংশ সংরক্ষণ করে সোনায়। এ জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংক বাজার থেকে সোনা কিনে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্বর্ণ কেনার পরিমাণ বাড়ালে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় বাজারেও সোনার বেড়ে যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোই কেবল রিজার্ভের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সোনায় বিনিয়োগ করছে না, ব্যক্তিখাতও স্বর্ণে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ব্যক্তিখাত স্বর্ণে বিনিয়োগকে একটা নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগ হিসেবে দেখছে। আর এর ফলে বেড়ে চলেছে সোনার দাম।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সোনার সূচক আবার ভাল সময়ে ফিরে আসছে। তাঁদের মতে, ইউরো অঞ্চলের সার্বভৌম ঋণ বিশ্বের অর্থনীতিকে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কঠিন সময় পার করছে। আর এটি সোনার দাম বাড়িয়ে রাখার ক্ষেত্রে একটা ভালো ভিত তৈরি করেছে।
অর্থনীতিবিদ গারেগিন তোসুনিয়ান বলেন, বিশ্বে সোনা ও বিনিময় মুদ্রার ভাণ্ডার প্রসারিত হচ্ছে। একসময়ে রিজার্ভের প্রায় ৮০ শতাংশ থাকত মার্কিন ডলারে, তারপর সেক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে ইউরো। কিন্তু সোনা যেহেতু সব সময়ই ছিল এবং অধিক স্থিতিশীল, সেকারণে বিনিময়যোগ্য বস্তু হিসাবে এটা থাকবে। তাই দেশগুলোর জন্য যুক্তিসংগত হবে তাদের সঞ্চয় অন্য কোনো দেশের মুদ্রায় সঞ্চিত না রেখে সোনাতেই রাখা।
(এসআর)
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |