|
সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রীয় মেধা স্বত্ব ব্যুরো থেকে জানা গেছে, বিশ্ব মেধা স্বত্ব সংস্থার সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দু' হাজার নয় সাল থেকে চীনের আন্তর্জাতিক পেটেন্টের আবেদনের পরিমাণ একটানা তিন বছর ধরে বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চীনের আন্তর্জাতিক পেটেন্ট আবেদনের পরিমাণ আরও বাড়বে।
চীনের রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন সম্প্রতি জানিয়েছে, ২০ মার্চ থেকে পেট্রুল ও গ্যাসোলিনের দাম প্রতি টনে ৬০০ ইউয়ান বাড়বে। এই কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ইরানের পরমাণু সংকটের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
চীনের লিফটার সমিতির মহা সচিব জেন লো শিয়াং সম্প্রতি একটি সাক্ষাত্কারে বলেন, বতর্মানে চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় লিফটার উত্পাদনকারি দেশ ও ভোক্তা দেশে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি শাংহাই মহানগরে আয়োজিত একটি অধিবেশন থেকে জানা গেছে, দু'হাজার এগারো সালে শাংহাই পুডং অঞ্চলের আমদানি-রফতানির পরিমাণ ২০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে তা দু'হাজার দশ সালের তুনলায় ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এতক্ষণ কয়েকটি সংক্ষিপ্ত অর্থনীতির খবর শুনলেন। এখন শুনবেন একটি প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটির শিরোনাম: " চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে আদান-প্রদান ও সহযোগিতা আরও মজবুত হবে"।
সদ্য সমাপ্ত চীনের রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের বার্ষিক অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী গুওয়াংসি জুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ভাইস চেয়ারম্যান জেন জাং লিয়েন সাংবাদিকদের দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে বলেছেন, দু'হাজার এগারো সালে চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৩৬ হাজার ২৮৫ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে তা দু'হাজার দশ সালের তুলনায় ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। তাছাড়া, দু'পক্ষের মধ্যে প্রযুক্তিগত আদান-প্রদান ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে। তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা আরও সম্প্রসারিত হবে।
জানা গেছে, দু'হাজার দশ সালের পয়লা জানুয়ারি চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর প্রতি বছরে চীনের গুওয়াংসি জুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী নাননিংয়ে চীনের নেতা ও আসিয়ানের দশটি দেশের নেতাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এখন গুওয়াংসি আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে চীনের যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই আদান-প্রদান প্ল্যাটফর্মে গুওয়াংসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কৃষি ক্ষেত্রে গুওয়াংসির ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভাইস চেয়ারম্যান ছেন জেন লিয়েন বলেন,
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতি বছর গুওয়াংসির নাননিংয়ে চীন-আসিয়ান মেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলা গুওয়াংসির নিজের উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে। বতর্মানে গুওয়াংসি আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা চালানোর ব্যাপারে মাথা ঘামাচ্ছে। কেননা, আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ কৃষিপ্রধান দেশ। সুতরাং এ সব দেশের সঙ্গে কৃষি ক্ষেত্রের সহযোগিতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের লোকসংখ্যা ১৯০ কোটি। দেশজ উত্পাদনের পরিমাণ প্রায় ৬ ট্রিলিয়ান মার্কিন ডলার,বাণিজ্যের পরিমাণ ৪ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ান মার্কিন ডলার। এই অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল হল উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত একটি অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল। বতর্মানে আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের সঙ্গে চীনের সহযোগিতা নিম্নলিখিত ক্ষেত্রের -
প্রথমত: কৃষিজাত পণ্যদ্রব্যের বিনিময়। ভাইস চেয়ারম্যান জেন জাং লিয়েন বলেন,দু'হাজার এগারো সালে চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৩৬ হাজার ২৮৫ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে যা ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।আসিয়ান দেশগুলোর কাছে চীনের রফতানির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়ে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দু'হাজার এগারো সালে আসিয়ান দেশগুলো প্রথম বারের মতো চীনের তৃতীয় বড় বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠেছে। দ্বিতীয়ত: যৌথভাবে কয়েক রকমের কৃষিজাত পণ্য উত্পাদন করা। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, বতর্মানে চীনের বাজারে পেপের অভাব দেখা যায়। সারা দেশের ৭০ শতাংশ পেপে গুওয়াংসিতে উত্পাদিত হয়। কিন্তু চীন একটি বিরাট দেশ। বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য অর্ধেক পেপে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। সুতরাং গুওয়াংসি এখন ভিয়েতনাম, ক্যাম্পুচিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা চালিয়েছে। কেবল পেপে চাষ করার ক্ষেত্রে দু'পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা চালানো নয়, মত্স্য ও ধান চাষ করার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা চালানো হচ্ছে। প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রের আদান-প্রদান ছাড়া, বৈজ্ঞনিক গবেষণা ও দক্ষ ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণও চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে চলছে। ভাইস চেয়ারম্যান জেন জাং লিয়েন বলেন,
গত বছর গুওয়াংসিতে বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করা হয়েছে। তা ছাড়া, দু'পক্ষের মধ্যে উচ্চ স্তরের আদান-প্রদানও শুরু হয়েছে। যেমন দু'পক্ষের মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রের বিনিময় জোরদার করা হচ্ছে। লাওস ও ক্যাম্পুচিয়ায় বিপুল পরিমাণের কৃষিজাত পণ্য রফতানি করা যায়। প্রতি বছর এ সব দেশ থেকে চীন অনেক কৃষিজাত পণ্য ও ফলমুল আমদানি করে। কিন্তু প্রযুক্তির দিক থেকে এ সব দেশের চাইতে চীন উন্নত। সুতরাং দু'পক্ষের মধ্যে সহযোগিতার ভবিষ্যত উজ্জ্বল।
দু'পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা চালানোর পাশাপাশি অবশ্যই বিভিন্ন ধরনের সমস্যাও দেখা যায়। কীভাবে এ সব সমস্যার সমাধান করা যায়, এ প্রসঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যান ছেন জেন লিয়েন বলেন,
বতর্মানে দু'পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা মোটামুটি ভাল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে কৃষি ক্ষেত্রের সহযোগিতায় অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। অধিক থেকে অধিকতর ব্যবসায়ী এখন আসিয়ান দেশগুলোতে ব্যবসা করতে চাচ্ছেন।
এক কথায় চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ভাল। দু'হাজার বারো সালে দু'পক্ষের মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রের সহযোগিতা আরও জোরদার করা হবে। আসিয়ান দেশগুলো থেকে চীনের বিভিন্ন জায়গা আরও বেশি ফলমুল ও শাকসবজি আমদানি করবে। ভাইস চেয়ারম্যান ছেন জেন লিয়েন বলেন, চীনের রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্য হিসেবে তিনি সদ্য সমাপ্ত দু'টি বার্ষিক অধিবেশনে দুটো প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। একটি হল: দারিদ্র্য বিমোচন জোরদার করা,আরেকটি প্রস্তাব হল, চীনের জলসেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন জোরদার করা ।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |