|
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বব্যাংক। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ওয়াশিংটন-ভিত্তিক এ সংস্থার প্রধান পদে আধিপত্য বজায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিষ্ঠানের নবম প্রেসিডেন্ট স্যার জেমস ডেভিড উলফেনসন ছাড়া এ যাবত্কালের ১১ জন প্রেসিডেন্টের সবাই আমেরিকান। উলফেনসন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলেও যুক্তরাষ্ট্রের মনোনয়নে তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করে আগামী ৩০ জুন পদ ছাড়তে যাচ্ছেন। নতুন প্রেসিডেন্ট খুঁজে নিতে বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং এ প্রেক্ষাপটে জোয়েলিকের উত্তরসূরী নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা।
প্রেসিডেন্ট জোয়েলিক পরবর্তী মেয়াদে এ পদে একজন মার্কিন নাগরিককে বেছে নেওয়ার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রেরই নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। এ সংস্থার প্রধান হিসেবে একজন মার্কিন নাগরিকের থাকাটা যুক্তরাষ্ট্র ও ব্যাংকের জন্যও ভালো হবে। জোয়েলিকের উত্তরসূরি হিসেবে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে দুজন আমেরিকানের নাম। তাঁরা হলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং হোয়াইট হাউসের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অর্থমন্ত্রী লরেন্স সামারস।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ পদটি কুক্ষিগত করে রাখার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে উদীয়মান অর্থনৈতিক জোট ব্রিকস। জোয়েলিকের মন্তব্যের একদিনের মধ্যেই নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করেছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত এ জোট। ব্রিকস চায় শীর্ষস্থানীয় বহুমুখী এ দাতা সংস্থার প্রধান পদে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের শেষ দেখতে। তাদের অবস্থান বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে নাগরিকত্বের চেয়ে মেধাভিত্তিতে নির্বাচনের পক্ষে।
মেক্সিকোতে জি-২০ সম্মেলনে ব্রিকস দেশগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতো সংস্থাগুলোর প্রধান পদে নির্বাচন সব সদস্য দেশের জন্য উন্মুক্ত হওয়া দরকার। সেখানে ব্রাজিলের অর্থমন্ত্রী গুদিও মানটেঙ্গা বলেন, জাতীয়তার ভিত্তিতে নয় বরং মেধার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ এ পদে প্রার্থী নির্বাচন করা উচিত। দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থমন্ত্রী প্রাভিন গ্রোডহানও একই সুরে বলেন, এখনই সময় এসেছে দুটি প্রধান দাতা সংস্থার শীর্ষ পদে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের আধিপত্যের প্রথা ভাঙার। এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর একমত হওয়ার সময় এসেছে।
ব্রিকসের অবস্থানের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে লাতিন আমেরিকা এবং ইউরোপেও। সেখানেও দাবি উঠেছে মার্কিনিদের মধ্য থেকে কাউকে বেছে নেওয়ার রীতি বদলানোর। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ পরিবর্তনের দাবি আগামী দিনগুলোতে আরও জোরালো হবে।
তবে বিশ্বব্যাংকের এ পদের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধি দলের কাছে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করে আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। হাসিনার প্রস্তাবের পর প্রতিনিধিদলের প্রধান জ্যঁ ল্যামবার্ট ঢাকায় বলেন যে, তাঁরা এ প্রস্তাবকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। অবশ্য নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে ল্যামবার্ট বলেন, যদিও বিশ্বব্যাংকের এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ জোট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেই, তবে তাঁরা মনে করেন ইউনুসের মতো ব্যক্তির ওই পদে যাওয়া উচিত, যিনি বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর প্রয়োজন সম্পর্কে জানেন এবং তাদের জন্য কাজ করার অভিজ্ঞতা রাখেন।
হাসিনার প্রস্তাবের পর বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা বলেছেন, মুহাম্মদ ইউনুস বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হতে চাইলে তাঁকে ওই পদ দেওয়ার প্রস্তাব সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে তাঁর দেশ। ইউনুসের ব্যাপারে মার্কিন প্রসাশন সব সময় অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের টানাপড়েনও চলে অনেকদিন ধরে।
তবে ইউনুসের সমর্থক হলেও বিশ্বব্যাংকের প্রধান পদে যুক্তরাষ্ট্র তাকে চাইবে এমন সম্ভাবনা এখনো ক্ষীণ। (এসআর)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |