|
এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ভারতে সদ্যসমাপ্ত বছরে বিনিয়োগ প্রস্তাব কমেছে ব্যাপকভাবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রশাসনিক জটিলতাকে প্রধানত এজন্য দায়ী করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে চলতি বছর দেশটির অর্থনৈতিক মন্দা আরও গুরুতর হবে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া প্রলম্বিত হবে, অর্থনীতির গতি বাড়ানো লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দফায় দফায় সুদের হার কমানো সত্ত্বেও।
ভারতীয় অর্থনীতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উপাত্তে দেখা যায়, সদ্যসমাপ্ত বছরে দেশটিতে টাকার অঙ্কে বিনিয়োগ প্রস্তাব তার আগের বছরের তুলনায় ৪৫ শতাংশ কমে ১০,৪৬০ বিলিয়ন রুপিতে দাঁড়িয়েছে। আগের বছর বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা পড়েছিল ১৮,৮৮০ বিলিয়ন রুপি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘকাল ধরে দুর্বল বিনিয়োগ পরিস্থিতি চলার কারণে কোম্পানিগুলো ঋণখেলাপি হয়ে যেতে পারে কিংবা ঋণ পুনতফসিলীকরণের আবেদন জানাতে পারে, যা প্রকারান্তরে ব্যাংকের মুনাফা কমিয়ে দিতে পারে।
বিমানবন্দর ও পরিসেবা খাত পরিচালনাকারী জিএমআর গ্রুপের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা এ সুব্বা রাও বলেন, "বিনিয়োগ-চালিত প্রবৃদ্ধি যদি না ঘটে, তাহলে আগামী ৩ থেকে ৫ বছর আমাদেরকে সাড়ে ৬ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।"
তিনি বলেন, "বিনিয়োগ পরিস্থিতি এখন দুর্বল এবং সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে পরিস্থিতি একটা অচলাবস্থায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে। সেকারণে অবস্থার উন্নয়নে সরকারের দরকার দিনরাত কাজ করা এবং সংস্কারকে এগিয়ে নেওয়া এবং আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত নীতি অনুমোদন করা।"
বিশ্লেষকরা বলছেন, নীতি অনুমোদনে সরকারের ঢিলেমি কোম্পানিগুলোর মুনাফার সুযোগ নষ্ট করে দিচ্ছে, বিশেষ করে বিদ্যুত্ খাতের পরিস্থিতি সবচেয়ে নাজুক – যেখানে একেকটি প্রকল্পে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে বহু সংখ্যক বিভাগের অনুমোদন লাগে। আর এ কারণে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ থেকে দূরে রয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্র সম্পদ সৃষ্টির চেয়ে কল্যাণ কর্মকাণ্ডকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের গতিও শ্লথ হয়ে যাচ্ছে।
তারা বলছেন, অনুমোদন প্রক্রিয়ায় অনেক প্রকল্প আটকে যাওয়ার কারণে ব্যাংকও প্রকল্পগুলোতে ঋণ দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে – এই ভয়ে যে পাছে সেগুলো কুঋণ হয়ে পড়ে।
অর্থনীতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উপাত্তে দেখা যায়, গত বছর ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ কমেছে ৪৮ শতাংশ আর রাষ্ট্রীয় খাতে ৪০ শতাংশ। তবে কর্পোরেট খাতের সবচেয়ে পছন্দের রাজ্য গুজরাটের বিনিয়োগ পরিস্থিতি ছিল অনেকটা ভিন্ন। উপাত্তে দেখা যায়, গত বছর সারা ভারতে যে বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা হয়, তার ১৮ শতাংশই হয় ওই রাজ্যে। আর পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় রাজ্যের বিনিয়োগ প্রস্তাব বাড়ে ১৪ শতাংশ। ওই রাজ্যে যেসব নতুন বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা হয় তার মধ্যে রয়েছে দেশটির অন্যতম প্রধান গাড়িনির্মাতা মারুতি সুজুকির একটা বৃহত্ সম্প্রসারণ প্রকল্প। অন্য বড় কোম্পানিগুলোর মতো মারুতি সুজুকিও গুজরাটে বিনিয়োগ সম্প্রসারণে বিশেষ আগ্রহী। কারণ হরিয়ানা রাজ্যে এ কোম্পানির একটি প্রকল্প নানা সংকটে পড়েছে – যেসব কারণে ওই রাজ্যের বিনিয়োগ প্রস্তাবও প্রায় ৯০ শতাংশ কমে গেছে।
তবে গত বছরের ধূসর বিনিয়োগ পরিস্থিতি সত্ত্বেও কোনও কোনও বিশ্লেষক আশা করছেন, এবার পরিস্থির মোড় ঘুরবে। কারণ প্রশাসনিক জটিলতার ফল সরকার ইতোমধ্যে দেখতে পেয়েছে। সরকার নতুন বছরে তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে বলে তাদের আশা। অবশ্য এরই মধ্যে সে রকম লক্ষণও দেখা গেছে – বিনিয়োগ আকর্ষণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কয়েক দফা কমিয়েছে। (এসআর)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |