|
অর্থনৈতিক সংকটে এখন নাকাল ইউরোপের দেশগুলো। ঋণ সংকট ও বাজেট ঘাটতির কারণে দুই বছর আগে গ্রিস থেকে যে সংকটের সূত্রপাত হয়েছিল তা ছড়িয়ে পড়েছে অভিন্ন মুদ্রা - ইউরো ব্যবহারকারী অঞ্চল তথা গোটা ইউরোপে। সংকট এমন গুরুতর আকার ধারণ করে যে, জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো অর্থনীতিগুলো প্রবল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে এবং ইউরো অঞ্চল ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়। অঞ্চলের পরিস্থিতি যখন এমন নাজুক, তখন ইউরোপের ২৭টি দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্ব নিল ডেনমার্ক। নতুন বছরের প্রথম দিনে জোটের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে দেশটি।
ইউরোপের ভবিষ্যত্ অর্থনীতি যে এখন মহাসংকটে সে কথাটি ফুটে উঠেছে জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির সরকারপ্রধানদের নতুন বছরের বাণীতেও। অঞ্চলের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল বলেছেন, ঋণের বিপুলতায় ইউরোপ টানাপড়েনপূর্ণ কয়েক দশকের দুর্ভোগে পড়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি এটিকে 'অসমাপ্ত' বলছেন। আর ইতালির প্রেসিডেন্ট জর্জিও নাপোলিতানো দেশের মানুষকে আরও বেশি 'আত্মত্যাগী' হতে বলেছেন।
ইউরোপের নেতাদের এমন আশংকার প্রতিধ্বনি শোনা গেছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের কাছে সমাদৃত বেশ কজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদের কাছ থেকেও। তাদের ওপর বিবিসি পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ২০১২ সালের মাঝামাঝি ইউরোপ এক মহামন্দার মুখোমুখি হবে। তাতে এক-পঞ্চমাংশ অর্থনীতিবিদের ধারণা, ইউরো জোনের ১৭ সদস্যভুক্ত বর্তমান কাঠামো অটুট থাকছে না; তা ৬০-৭০ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে অধিকাংশের বিশ্বাস। বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, চলতি বছর যুক্তরাজ্যে সুদের হার দশমিক শূন্য পাঁচে অবস্থান করবে।
ইউরো অঞ্চল ভেঙে যাওয়ার এমন আশংকার মধ্যে ইউরো চালু নেই - এমন দেশ ডেনমার্কের ওপর সভাপতিত্বের দায়িত্ব পড়ায় তার ভূমিকার দিকে সবাই তীক্ষ্ণ নজর রাখছে।
কূটনীতিকরা অবশ্য বলছেন, ডেনমার্কে ইউরো চালু না থাকলেও দেশটির অর্থনীতি ইউরোর সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। ব্রাসেলসের এক কূটনীতিক বলছিলেন, ইউরোর প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন হওয়ার মতো মোহ তাদের নেই।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী হেলে থরনিং স্মিত সকল সন্দেহ নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, তাঁর দেশ এই কঠিন সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আরও শক্তিশালী করতে প্রচেষ্টা চালাবে। ডেনমার্কের সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি বলেন, "আমরা অবশ্যই আস্থা, নিরাপত্তা এবং আশা জাগাতে কাজ করব।"
উনিশ শ তেয়াত্তর সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য ডেনমার্ক; কিন্তু প্রায় ৫৫ লাখ জনসংখ্যার এ দেশটিতে এখনও ইউরো চালু হয়নি। বরং সেখানে চালু আছে তাদের ঐতিহ্যবাহী ড্যানিশ ক্রোন। দেশটিতে এ পর্যন্ত দুই দফা ভোটাভুটি হয়েছে ক্রোনের পরিবর্তে ইউরো চালু করা হবে কি না – তা নিয়ে; কিন্তু ভোটের ফল নেতিবাচক। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তির আওতায় থাকলেও ইউরো চালু করার বাধ্যবাধকতা নেই দেশটির; যেমনটি নেই যুক্তরাজ্যের।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায়ও ইউরো চালুর ব্যাপারে ড্যানিশদের ঘোর বিরোধিতার চিত্র ফুটে উঠেছে। এখনও ইউরো চালুর বিপক্ষে মত ৭১ শতাংশ ড্যানিশ নাগরিকের। এ প্রসঙ্গে ডেনিশ এক ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ স্টেন বোসিয়ান জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএকে বলেন, চলমান ঋণ সঙ্কটের কারণেই মানুষের এমন মত। এ ছাড়া ডেনমার্ক এখন সুদের হার জার্মানির চেয়েও কম রাখতে সক্ষম।
ডেনমার্ক ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা ইউরো অঞ্চলের অখণ্ডতা রক্ষায় কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে তা বলা এখনি দুরূহ। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে তাদের প্রত্যয়ের কথা ব্যক্ত করলেও, কাজটি করা যে অতটা সহজ হবে না – তা এখনই বলা যায়। (এসআর)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |