|
চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী জেন ডে মিন সম্প্রতি বলেছেন, ২০২০ সাল নাগাদ চীন বিশ্বের বৃহত্তম বাজারে পরিণত হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তা ছাড়া, চীনের আমদানির পরিমাণও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হবে। জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রীদের অষ্টম বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, অন্যান্য নবদিত অর্থনৈতিক গোষ্ঠির সঙ্গে চীনের সহযোগিতা বেশি, প্রতিযোগিতা কম। মৌলিকভাবে বলতে গেলে, আসিয়ান দেশগুলো, আফ্রিকান দেশগুলো ও দক্ষিণ আমেরিকার বেশির ভাগ দেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য ভারসাম্যপূর্ণ। তবে জেন ডে মিন সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বেশি হবে না। সুতরাং, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিস্থিতি কঠিন। কিন্তু আগামী বছর চীনের আমদানি-রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
দু'দিনব্যাপী চীনের সেবামূলক ট্রেডমার্ক উন্নয়ন সম্মেলন সম্প্রতি পেইচিংয়ে শেষ হলো। এবার সম্মেলনে কীভাবে চীনের সেবামূলক ট্রেডমার্ক গড়ে তোলা যায় এবং কীভাবে এ ক্ষেত্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শক্তি বাড়ানো যায় সে বিষয় নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা হয়েছে।
এতক্ষণ কয়েকটি সংক্ষিপ্ত অর্থনীতির খবর শুনলেন। এখন শুনুন প্রতিবেদন। আজকের প্রতিবেদনটির শিরোনাম: 'প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ওপর নির্ভর করে টেকসই উন্নয়নের পথে চলছে তাইছিন তেলক্ষেত্র'
তাইছিন তেলক্ষেত্র চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সনলেন সমভূমিতে অবস্থিত। উনিশ শ' উনষাট সালে তাইছিন তেলক্ষেত্রের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। গত ৫২ বছরে তাইছিং তেলক্ষেত্র দেশের জন্য মোট ২০৫ কোটি টন অশোধিত তেল উত্পাদন করেছে। দেশের বিভিন্ন নির্মাণ কাজের জন্য তাইছিন তেলক্ষেত্র গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানির নিশ্চয়তা বিধান করে আসছে।
গত ৫২ বছর ধরে তাইছিন তেলক্ষেত্র অজস্র উজ্জ্বলতা সৃষ্টি করেছে। উনিশ শ' ছিয়াত্তর সালে এ তেলক্ষেত্রে উত্পাদিত অশোধিত তেলের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টন ছাড়িয়ে যায় এবং এর মধ্য দিয়ে এ ক্ষেত্রটি বিশ্বের অতি বৃহত আকারের তেলক্ষেত্রের সারিতে উন্নীত হয়। এর পর একটানা ২৭ বছর ধরে ৫০ হাজার কোটি টনের বার্ষিক উত্পাদন হচ্ছে এখানে। তাইছিন তেলক্ষেত্রে সৃষ্ট বিস্ময় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বতর্মানে তাইছিন তেলক্ষেত্রে তেলসম্পদ দিন দিন কমে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এক দিন এখানে তেল অবশ্যই শেষ হয়ে যাবে। চীনের বড় আকারের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাইছিন তেলক্ষেত্র অনেক অসুবিধা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এক সাক্ষাত্কারে তাইছিন তেলক্ষেত্রের উপ-মহাব্যবস্থাপক শিয়ে জুন বলেন,
"বতর্মানে তাইছিন তেলক্ষেত্র যে দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হচ্ছে তা হলো প্রধানত তিন পক্ষের। প্রথমত, সম্পদ সরবরাহের দ্বন্দ্ব। দ্বিতীয়ত, আধুনিক প্রযুক্তির অভাবের দ্বন্দ্ব এবং তৃতীয়ত, পুঁজিবিনিয়োগের ফিটব্যাকের দ্বন্দ্ব। এ তিনটি দ্বন্দ্বের মুখে আমরা তেলক্ষেত্রের স্থিতিশীল উত্পাদনের পদ্ধতিতে বড় মাত্রার পুনর্বন্দোব্যস্ত করেছি। অতীতে উত্পাদন বাড়ানোর জন্য আমরা বেশি ক্ষেত্রে উত্তোলনের চেষ্টা করতাম। কিন্তু এখন আমরা প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে অর্থনীতির উন্নয়ন পদ্ধতির রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছি।"
সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে, তাইছিন তেলক্ষেত্র প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের উপর নির্ভর করে অর্থনীতি কাঠামোর রূপান্তর ও টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করেছে।
দু হাজার তিন সালে তাইছিন তেলক্ষেত্র 'শত বছরের তেলক্ষেত্র স্থাপনের' কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা প্রণয়ন করে। অশোধিত তেলের বার্ষিক উত্পাদনের পরিমাণ প্রথম বারের মতো আগের ৫ কোটি টন থেকে ৪ কোটি টনে কমিয়ে দেয়া হয়। এর পাশাপাশি সম্পদ অনুসন্ধানের তীব্রতাও কমিয়ে দেয়া হয়। তা ছাড়া, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে আরও বেশি নতুন সম্পদ অনুসন্ধানের অভিযান চালানো হয়। যেমন পানির চাপে তেল উত্তোলনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
তাইছিন তেলক্ষেত্রের উন্নয়ন বিভাগের উপ-পরিচালক লি ইয়েন সিং অত্যন্ত সহজ ভাষায় এই পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন,
"তেল তো ভূর্গভস্থলের পথের মাঝখানে থাকে। পথের মাঝখানের এই তেল স্পঞ্জের পানির মতন। তেলক্ষেত্রে কয়েকটি পানি ছড়ানো কুয়া খনন করা হলে ভূর্গভস্থলের চাপ আপনাআপনি বেড়ে যায়। যার ফলে তেল বের হয়ে আসে।"
বতর্মানে তাইছিন তেলক্ষেত্রের অশোধিত তেল পানির সঙ্গে মিশে যাওয়ার অবস্থা হয়ে গেছে। অশোধিত তেল উত্তোলন করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। এ পটভূমিতে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন সাধন করা তেলক্ষেত্রের সার্বিক অর্থনীতির কার্যকরিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাইছিং তেলক্ষেত্র কোম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক শিয়ে জুন বলেন,
"যে কোনও একটি তেলক্ষেত্র বা সম্পদসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। উচ্চ পরিমাণের উত্পাদন, স্থিতিশীল উত্পাদন, উত্পাদন হ্রাস ও উত্পাদন পতন এ কয়েকটি পর্যায়। বতর্মানে তাইছিন তেলক্ষেত্র উত্পাদন হ্রাস পর্যায়ে রয়েছে। এখন প্রতি বছর ৯ শতাংশের মতো উত্পাদন কমানো হয়। আমাদের লক্ষ্য হলো এই পর্যায়ে স্থিতিশীলভাবে উত্পাদন চালানো। বেশ ক্ষেত্র খনন করা নিঃসন্দেহে তেলের পরিমাণ বাড়ানোর একটি কার্যকর উদ্ধতি। কিন্তু এটা টেকসই উন্নয়নের পদ্ধতি নয়। বতর্মানে কোনও প্রতিষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো।"
প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন জোরদার করা ও টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নের পাশাপাশি তাইছিন তেলক্ষেত্রের বৈদেশিক বাজার সম্প্রসারণের ধাপ ক্রমেই দ্রুততর হচ্ছে। বতর্মানে এশিয়া ও আফ্রিকার কোনও কোনও দেশে তাইছিন তেলক্ষেত্রের সহযোগিতা প্রকল্প আছে। অনুসন্ধান, প্রযুক্তি সেবা ও তেলক্ষেত্র উত্তোলনসহ নানা প্রকল্পে এ সব দেশের সঙ্গে তাইছিন তেলক্ষেত্রের সহযোগিতা রয়েছে। তাইছিন তেলক্ষেত্রের টেকসই উন্নয়নের ভবিষ্যত প্রত্যাশা করে তাইছিন তেলক্ষেত্র কোম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক শিয়ে জুন বলেন,
"সম্প্রতি আমরা তাইছিন তেলক্ষেত্রের টেকসই উন্নয়নের কর্মসূচি প্রকাশ করেছি। এ কর্মসূচিতে তিনটি কৌশলগত কতর্ব্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমত, শত বছরের তেলক্ষেত্র নির্মাণ করা। দ্বিতীয়ত, তাইছিন তেলক্ষেত্রকে একটি বড় আকারের আন্তর্দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা এবং তৃতীয়ত, একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি আমাদের কর্মীদের সুখসূচি আরও বাড়ানো।"
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |