|
বিগত ২০০৯ সালের শেষ দিক থেকে গ্রিসে যে ঋণ সংকটের সূচনা হয়েছিল পরবর্তীকালে তা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে একক মুদ্রা ইউরো ব্যবহারকারী অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে; উদ্বিগ্ন করে তোলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলের নীতিনির্ধারকদের। ইউরোপীয় নেতারা দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা করছিলেন সংকট নিরসনের একটা উপায় বের করা জন্য। অবশেষে তারা এমন একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন, যাতে মনে হচ্ছে দুবছর ধরে চলমান সংকটের অবসান হতে যাচ্ছে। ব্রাসেলেসে এক দীর্ঘ বৈঠক শেষে এ চুক্তির কথা জানান ইউরোপীয় নেতারা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রিসের ঋণের বোঝা কমানোর লক্ষ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলো বন্ড বিনিয়োগে স্বেচ্ছায় ৫০ শতাংশ লোকসান গ্রহণ করবে। এর পাশাপাশি ইউরোপীয় আর্থিক স্থিতিশীলতা তহবিল ও ব্যাংকগুলোর পুঁজি বাড়ানো হবে। অঞ্চলের নেতাদের এমন ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা এবং চীন ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশ। পাশাপাশি দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে দুলতে থাকা বিশ্ব শেয়ারবাজার আবারও ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।
ইউরোপীয় নেতাদের ওই বৈঠকে বেসরকারি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর প্রধান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপ্রধান ও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তিনটি পরিকল্পনাকে প্রাধান্য দিয়ে করা চুক্তিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে গ্রিসের ঋণসংকট মোকাবিলায় বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট করার বিষয়টি।
এ চুক্তি অনুযায়ী বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বেচ্ছায় সম্মত হয়েছে গ্রিসের ঋণের বোঝা কমানোর লক্ষ্যে তাদের বন্ড বিনিয়োগে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ লোকসান মেনে নিতে। এতে গ্রিসের ঋণের বোঝা ১০০ বিলিয়ন ডলার কমবে। পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, ২০২০ সাল নাগাদ গ্রিসের ঋণের পরিমাণ মোট দেশজ উত্পাদন বা জিডিপির ১২০ শতাংশে নামিয়ে আনার। বর্তমান দেশটির ঋণের পরিমাণ তার জিডিপির ১৬০ শতাংশ।
সংকট মোকাবিলায় ইউরোপীয় আর্থিক স্থিতিশীলতা তহবিল বর্তমানে ৪৪০ বিলিয়ন ইউরো থেকে এক ট্রিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তহবিল থেকে ইতোমধ্যে আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল ও গ্রিসকে সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ভবিষ্যত্ সংকট মোকাবিলায় ২০১২ সাল নাগাদ ব্যাংকগুলোর আরো ১০৬ বিলিয়ন ইউরো পুঁজি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে যেকোনো সরকারকে ঋণখেলাপি হওয়ার আশঙ্কা থেকে রক্ষায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাল হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারবে।
চুক্তি শেষে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ঘোষণা করেন, সংকট নিরসনে যা করা প্রয়োজন ছিল তা অঞ্চলের নেতারা করতে সক্ষম হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধান ক্রিস্টিনা লাগার্দে এটিকে কার্যকর অগ্রগতি হিসেবে অভিহিত করেছেন। আর ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট হোসে ম্যানুয়েল বারোসো বলেছেন, ঋণসংকট দূরীকরণের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে ইউরোপ। তিনি বলেন, একান্ত দুঃসময়ে যে ইউরোপ এক হতে পারে তা প্রমাণিত হয়েছে। তবে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান জাঁ ক্লদ ট্রি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সংকট মোচনে এখনো প্রচুর কাজ প্রয়োজন এবং তা খুব দ্রুত করতে হবে।
নতুন এ চুক্তির ফলে একক মুদ্রা ইউরো ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি প্রাণ ফিরে পায় বিশ্ব শেয়ারবাজার। ইউরোপীয় নেতাদের চুক্তির খবরে ইউরোপের প্রধান প্রধান শেয়ারবাজার সূচক দুই থেকে পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে আর এশিয়ার প্রধান প্রধান শেয়ারবাজারেও সূচক বাড়ে গড়ে প্রায় দুই শতাংশ করে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে এই মুহূর্তে খুব জরুরি ছিল ইউরোপের ঋণ সংকট মোকাবিলায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার। ইউরোপের নেতারা সেই কাজটি প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে চূড়ান্ত সাফল্য নির্ভর করছে এ চুক্তির বাস্তবায়নের ওপর। চুক্তিটি যদি যথোপযুক্তভাবে কার্যকর না হয়, তাহলে আশাভঙ্গের কারণ হবে সবার; সারা বিশ্বের। (এসআর)
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |