ছেন-ইউয়ু অর্থনীতি অঞ্চল চীনের পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে ইঞ্জিনের ভূমিকা পালন করেছে
2011-10-20 15:31:47 cri
পাঁচ দিনব্যাপী চীনের আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল মেলা ২০১১, ১৭ অক্টোবর শেষ হয়েছে। এ মেলা চলাকালে মোট ১৫০টি বিমান বিক্রি হয়েছে। জানা গেছে, মোট ১৮০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে। মেলায় ১০৬০ কোটি ইউয়ানের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চতুর্থ চীন-আসিয়ান মেধা কৌশল ফোরাম ১৭ অক্টোবর চীনের গুয়াংসির নাননিন শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিংগাপুর, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনসহ আসিয়ানের কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা এ ফোরামে অংশ নিয়েছেন। তারা 'নতুন পরিস্থিতিতে চীন-আসিয়ান সহযোগিতা' নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বিশ্বজোড়া অর্থনীতির তথ্যমাধ্যম 'ফকস' পত্রিকার চীনা ভাষার কলামে চীনের মূল ভূভাগের শ্রেষ্ঠ বাণিজ্য শহরের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। চীনের গুয়াংযৌ নির্বাচিত দশটি শহরের মধ্যে প্রথম স্থান পেয়েছে। ২০১১ সালে চীনের মূল ভূভাগের দশটি শ্রেষ্ঠ শহর হল: গুয়াংযৌ, সেনঝেন, হাংযৌ, শাংহাই, নানচিন, নিনপুও, উশি, সুযৌ , পেইচিং ও থিয়েচিন।
সম্প্রতি চীনের থিয়েচিন শহর থেকে পাওয়া একটি খবরে জানা গেছে, এ শহরের কেন্দ্রীয় মত্স বন্দর ১৬ অক্টোবর চালু হয়েছে। এই মত্স বন্দর চীনের উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মত্স প্রচলন, লেনদেন ও প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই কেন্দ্রীয় মত্স বন্দরে বার্ষিক মাল বোঝাই ও খালাসের পরিমাণ ৪৮ লাখ টনে পৌঁছবে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।
এতক্ষণ কয়েকটি সংক্ষিপ্ত অর্থনীতির খবর শুনলেন। এখন শুনুন একটি প্রতিবেদন । প্রতিবেদনটির শিরোনাম: " ছেন-ইউয়ু অর্থনীতি অঞ্চল চীনের পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে ইঞ্জিনের ভূমিকা পালন করেছে"
চীনের ছেনতুতে পাকিস্তানের কনসুলার দপ্তরের সাবেক কাউন্সিলর মাসুদ আখহতার তাঁর কার্যমেয়াদে জেনতুন সম্পর্কে অনেক কবিতা লিখেছেন। সে জন্য ছেনতুর নাগরিকদের সঙ্গে তাঁর খুব পরিচয় হয়েছে। 'সারা জীবনের বন্ধু' শিরোনামে একটি কবিতায় তিনি ছেনতুর প্রতি তাঁর অনুভূতি এভাবে লিখেছেন। ' ভবিষ্যতে কোথাও যাবো যাই হোক না কেন , ছেনতু চিরকাল আমার সঙ্গে থাকবে। মনে রাখতে হবে আমরা আজীবন বন্ধু'।
চীনের জেনতু ও ছংছিয়াং চীনের পশ্চিমাঞ্চলের এ শহর দুটো কেমন করে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে? 'করেছে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের শক্তি'। ইন্টেল কোম্পানির প্রধান প্রশাসক ক্রেগ আ বারেট এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। ২০০৩ সালের আগষ্ট মাসে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। ছেনতুতে একটি বড় আকারের চিপ প্যাকিজিং ও পরীক্ষার কারখানা নির্মাণে ৩৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ করা হয়। এটা হল সারা বিশ্বে ইন্টেল কোম্পানির পঞ্চম নির্মাণ কেন্দ্র। যার ফলে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি চালু হওয়ার পর এটা হল ছেনতুতে বৈদেশিক অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
তথ্য প্রযুক্তি খাতের একজন ব্যক্তি বলেন, এই ঘটনা ঘটার পর, চীনের পশ্চিমাঞ্চল বিশ্বের তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রের বড় বড় কোম্পানির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এখন বহজাতিক কোম্পানির চীনের পশ্চিমাঞ্চলে আগমনের প্রবণতা দেখা দিয়েছে। বাস্তবতা থেকে প্রতিপন্ন হচ্ছে যে, ইন্টেল কোম্পানি চীনের ছেনতুতে প্রবেশ করার পর ছেনতুতে অনেক বহুজাতিক কোম্পানির পুঁজিবিনিয়োগের ধাপ দ্রুততর হয়েছে। বতর্মানে বিশ্বের প্রথম ৫০০ সেরা শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনেকেই ছেনতুতে পুঁজিবিনিয়োগ করতে এসেছে।
সিছুয়ানের শিল্পপতি লি তিয়েন পু বলেন, গাড়ি ও মোটরসাইকেল নির্মাণ, ও জ্বালানী সরবরাহ ক্ষেত্রে ছেনতুর কোন প্রাধান্য নেই। তবে ছেনতুর প্রাধান্য হল ব্যাংকিং, বাণিজ্য, ইলেকট্রোনিক, পযর্টন। উচ্চ গতির রেলপথ ছেতু ও ছাংছিন এ দু'টো শহরকে একটি শহরে পরিণত করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
আমার মনে হয়, পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুততর করা, পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ব্যবধান কমানোর জন্য ছেনতু ও ছংছিনের মধ্যে সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দুই জায়গার অর্থনীতি অঞ্চলের উন্নয়ন সম্প্রসারিত হওয়ার পর চীনের পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতি ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়ন আরো জোরদার করা হয়েছে।
এ বছরের এপ্রিল মাসে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে 'ছেনতু-ছুংছিন অর্থনীতি অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মসূচী'র অনুমোদন দিয়েছে। চীনের পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন অভিযান জোরদার করার জন্য এই কর্মসূচী অনুমোদিত হয়।
'ছেনতু –ছুংছিন অর্থনীতি অঞ্চলের' ধারণা প্রথমে ৮৫ বছর বয়স্ক বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ, সিছুয়ান প্রদেশের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীর প্রবীণ উপদেষ্টা অধ্যাপক লিন লিন বলেন,
দেশের উন্নয়ন কৌশলের দিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে দেখা গেছে, চীনের পূর্বাঞ্চলে তিনটি অর্থনীতি অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন সমন্বয় করা উচিত। তাহলে কে পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে? ছেনতু ও ছুংছিন এ দু'টো জায়গাকে বেছে নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ছেনতুর পেশাগত প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ইয়াং শিং পিং একটি সাক্ষাত্কারে বলেন,
বতর্মান ও ভবিষ্যতের অর্থনীতির উন্নয়ন অবস্থা থেকে বোঝা যায় যে, ছেনতু ও ছুংছিনের মধ্যে বাস্তব সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ দু'পক্ষের মধ্যে এ ধরনের সহযোগিতা সম্প্রসারিত হলে চীনের পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়িত হতে পারে।
৩৫ বছর বয়স্ক গাইট লি ওয়েন চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লোক। তিনি দশ বছর ধরে ছেনতুতে গাইট হিসেবে কাজ করেছেন। ছেনতুতে বাসা স্থাপন করা তার দীর্ঘকালের আশা-আকাংক্ষা। এখন তার স্বামী উত্তর-পূর্ব চীন থেকে ছেনতুতে এসেছেন। তিনি সংবাদদাতাকে বললে, তিনি ও তার স্বামী সিছুংয়ের পরিবেশ খুব পছন্দ করেন। তিনি বলেন,
সিছুয়ান একটি পযর্টনের জায়গা। ওখানে অনেক দর্শনীয় স্থান আছে। গাইট হিসেবে আমার আশা কেবল সিছুংয়ের বড় উন্নয়ন তাই নয়, ওখানের প্রাকৃতিক দৃশ্য সুন্দরভাবে রক্ষা করা।
ছুংছিং শহরের নাগরিক চৌচি বতর্মানে ছেনতুর একটি কোম্পানিতে কাজ করেন। প্রতি সপ্তাহান্তে তিনি দেড় ঘন্টার রেল ভ্রমণ করে ছুংছিংয়ের বাসায় ফিরে যান। দু'শহরের মধ্যে অবকাশের ব্যবধান কমানোর সঙ্গে সঙ্গে দুই শহরের 'একীকরণের' প্রবণতা ক্রমেই ষ্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন,
ইতিহাসে ছেনতু ও ছুংছিন একটি পরিবার। ছুংছিং কেন্দ্রীয় স্বায়ত্তশাসিত শহর হিসেবে হওয়ার পর এ ধরনের রক্তের সম্পর্ক কোন দিন বদলে যায়নি। এখন ছুংছিং ও ছেনতু শহরে অর্থনীতির অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমার মনে হয় এটা খুব ভাল। এখন আমি প্রতি সপ্তাহে পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারি। আমার পক্ষে দু'শহরের মধ্যে ব্যবধান প্রায় নেই বললেই চলে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা