|
এ বছরের শুরুর দিকে ভয়াবহ বন্য ও সাইক্লোনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির শনির দশা। গত সাত মাসে সে অবস্থা তো কাটেই নি, বরং দিন দিন তা আরো গুরুতর হয়েছে। অর্থনীতির এক সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন সমস্যা। এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদরা আশংকা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পথে এগুচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি এবং ধীরে ধীরে মন্দায় তলিয়ে যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বেকারত্বের হার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে যোগ হয়েছে উচ্চ সুদের হার, ভোক্তা ব্যয় হ্রাস এবং শিল্পোত্পাদনসহ বিভিন্ন খাতের দুর্বলতা। আর এ সব বিষয় অস্ট্রেলিয়াকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি মন্দার দিকে।
দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক - রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া (আরবিএ) - ইতোমধ্যে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির হার আগের থেকে কমিয়ে এনেছে। আরবিএ এর আগে বলেছিল, ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়া ৪.২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। এখন তারা বলছে, প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ৩.২৫ শতাংশে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি এখন যে গতি-প্রকৃতিতে তাতে ইতোমধ্যে বেড়ে যাওয়া বেকারত্বের হার আগামী দিনগুলোতে আরও বাড়বে। প্রসঙ্গত, জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বেকারত্ব আট মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫.১ শতাংশে পৌঁছায়। অর্থনীতিকে রক্ষা করতে গিয়ে এ বছরের মে মাসে দেশটি ২২ হাজার পূর্ণকালীন কর্মী ছাটাই করেছিল। কিন্তু তাতে উল্টো ফল হয়েছে। দেশের বেকারত্ব আরো বেড়েছে। ফলে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, বেকারত্বের পরিস্থিত যেখানে এসে ইতোমধ্যে ঠেকেছে এবং যেদিকে এগুচ্ছে, তাতে বেশ হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুদের হার কমানোর চিন্তাভাবন করতে হবে। তবে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সুদের এ হার অব্যাহত থাকবে এবং কোনোভাবেই তা কমানো হবে না।
বেকারত্বের হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনীতি। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশটির খুচরা বিক্রয় জুন মাসে আগের মাসের তুলনায় ০.১ শতাংশ কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, দেশে ক্রেতাদের আস্থা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নিচে নেমে গেছে। প্রসঙ্গত, বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি ১.২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল, যদিও আগের কয়েক বছর অর্থনীতি কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন ও ভারতের মতো উদীয়মান দেশগুলো থেকে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির অন্যতম খাত খনিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হলেও অন্য খাতগুলোর পরিস্থিতি খুব নাজুক। জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অস্ট্রেলিয়ার বিকশিত সম্পদ খাতকে কেন্দ্র করে দেশটির প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকে। কিন্তু এ প্রবৃদ্ধি ব্যাহত করে মূল্যস্ফীতি ও ভোক্তা ব্যয়; মন্থর হয়ে যায় অর্থনীতি। দেশটির অর্থনীতি সত্যিই গুরুতর সংকটের মধ্যে পড়বে, নাকি তার নেতৃত্ব শক্ত হাতে লাগাম টেনে সে অবস্থা থেকে তাকে বেরিয়ে আনবে তা-ই এখন দেখার বিষয়। (এসআর)
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |