|
বহু বছরের নাজুক পরিস্থিতির পর সোনালি সময় ফিরতে শুরু করেছিল বাংলাদেশের এক সময়কার সোনালি আঁশ পাটের। বিশ্বব্যাপী সিনথেটিক পণ্য বর্জন করার যে জোয়ার উঠেছিল সেটাই মূলত ফিরিয়ে এনেছিল পাটের সুদিন। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপকভাবে বেড়েছিল পাটজাত পণ্যের দামও। আর সে প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল বন্ধ পাটকল আবার চালু হতে এবং আরও নতুন নতুন কল স্থাপিত হতে। কিন্তু সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে পাটজাত কাঁচামাল, বিশেষ করে পাটের সুতোর দাম ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এতে আবার ঝুঁকির মুখে পড়েছে জুট স্পিনিং মিল বা পাটের সুতো তৈরি কারাখানাগুলো।
জানা গেছে, কার্পেট তৈরির অন্যতম কাঁচামাল পাটের সুতোর যে চাহিদা বিশ্বে রয়েছে, তার বেশির ভাগই যোগান দেয় বাংলাদেশ। তবে সম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাজারে কার্পেটের চাহিদা কমে যাওয়ার তার প্রভাব কমেছে পাটের সুতোর দামে।
বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশের হিসেব মতে, গত তিন মাসের ব্যবধানে প্রতি টন পাটের সুতোর দাম কমেছে ৩০০ থেকে ৪০০ ডলার। গত এপ্রিল মাসে এক টন পাটের সুতোর দাম যেখানে ছিল ১,৩০০ থেকে ১,৩৫০ ডলার সেখানে বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯০০ থেকে সাড়ে ৯০০ ডলারে।
জানা গেছে, বিশ্বে কার্পেট উত্পাদন কমে গেছে প্রায় ৪০ শতাংশের মতো। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সংকট এবং বিশ্ববাজারের খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে কার্পেটের চাহিদা কমে গেছে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই উত্পাদন কমিয়ে দিয়েছে কার্পেট মিলমালিকরা। আর এ কারণে পাটের সুতোর চাহিদা কমে গেছে।
জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশের সাবেক সভাপতি আহমেদ হোসেন স্থানীয় একটি সংবাদপত্রকে বলেন, বিশ্বে এখন কার্পেট কেনার লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কার্পেট উত্পাদন কমে যাওয়ায় পাটের সুতোর দামও কমে গেছে।
বিশ্বে বর্তমানে প্রতিবছর সাড়ে চার লাখ টন পাটের সুতোর চাহিদার মধ্যে বাংলাদেশই যোগান দেয় সাড়ে তিন লাখ থেকে তিন লাখ ৬০ হাজার টন। বিশ্বের কার্পেট উত্পাদনকারী প্রায় সব দেশেই পাটের সুতো রপ্তানি করা হলেও বাংলাদশের বড় বাজার তুরস্ক, ইরান, মিশর, বেলজিয়াম ও সিরিয়ায়। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্যমতে, গত ২০০৯-১০ অর্থবছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের পাটের সুতো রপ্তানি বাড়ে ২৫ শতাংশেরও বেশি। ওই অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যেখানে ৩৯৭.৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পাটের সুতো রপ্তানি হয় সেখানে গত অর্থবছরে এ পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, পাটের সুতোর চাহিদা ও দাম কমায় চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ও আয় দুটোই কমে যেতে পারে ।
দেশে বর্তমানে পাটের সুতো উত্পাদনকারী কারাখানা রয়েছে ৭৭টি। এর মধ্যে ৬৭টি কারখানা উত্পাদনে আছে এবং বাকি ১০টির খুব শিগগিরই উত্পাদন শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদা বাড়ার প্রেক্ষাপটে অনেক নতুন উদ্যোক্তাই পাটের সুতো তৈরির কারখানা স্থাপনে এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু দাম কমে যাওয়ায় পাট শিল্প আবারও সঙ্কটে পড়তে পারবে বলে আশঙ্কা করেছে অনেকে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য নতুন করে আশা জাগানিয়া পাট খাতে যে সঙ্কটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তা এড়ানোর জন্য আগেই উদ্যোগ নেওয়া দরকার; দরকার সময় থাকতে নতুন বাজার খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা নেওয়ার।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |