|
যে কোনো দেশের উন্নয়নের প্রধান নির্ভরতা দেশটির নাগরিকদের কাছ থেকে সরকারের সংগৃহীত কর। তবে এশীয় অঞ্চলের নাগরিকদের ওপর এ করের বোঝা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক কম। তা সত্ত্বেও এ অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা একটু বেশি। হ্যাঁ এমনই তথ্য জানাচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।
ম্যানিলা-ভিত্তিক এডিবির গত ১২ জুলাই প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এবং এমন কি আফ্রিকার চেয়েও এশীয় অঞ্চলে করের বোঝা অনেক কম। এশিয়াকে অধিক কর ফাঁকিপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রতিবেদনে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়। বলা হয়, এ জন্য কর অডিট বাড়াতে হবে এবং কর আদায় পদ্ধতি আরো কার্যকর করতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ার দেশগুলো যদি উন্নয়ন কাজে আরো বেশি অর্থ ব্যয় করতে চায়, তবে তাদের উচিত করের পরিমাণ বাড়ানো এবং কর সংগ্রহ পদ্ধতি উন্নত করা।
এডিবির বিশেষ দায়িত্বে নিয়োজিত জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জর্জ মার্টিনজ ভেজকুয়েজ বলেন, এশিয়ায় বিভিন্ন ধরনের কর পদ্ধতি রয়েছে। সে কারণে কোনো একটিকে এ অঞ্চলের মডেল হিসেবে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, "যদিও এশিয়ার অর্থনীতি উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ; কিন্তু এগুলো সমজাতীয় নয়। কর আরোপে নীতিগত অভিন্নতা তৈরির জন্য এখানে কোনো একক কর্তৃপক্ষ নেই। তাই কর পদ্ধতি এখানে ভিন্ন ভিন্ন রকমের।"
এডিবি প্রতিবেদনে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনামকেই জিডিপি অনুপাতে সর্বোচ্চ করের দেশ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, তারপরও দেশটির করের হার অনেক ইউরোপীয় দেশের অর্ধেক। অন্যদিকে জিডিপির অনুপাতে পাকিস্তান ও নেপালে করের পরিমাণ সবচেয়ে কম। করের হার কম হওয়ার একটি বিশেষ সুবিধা হলো, এতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা হয় তা হলো, এতে সরকারের আয়ের পরিমাণ কমে যায়। ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোর মতো মৌলিক খাতগুলোতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যয় করতে পারে না। ফলে সমাজ একটা অসম অবস্থার দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
এশিয়ার অনেক দেশে এখনো বিশাল অঙ্কের লুকায়িত অর্থ রয়েছে - এমন মন্তব্য করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এর অর্থ হচ্ছে এসব অর্থ কর ফাঁকি থেকে পুঞ্জিভূত হয়েছে। থাইল্যান্ডের উদাহরণ দিয়ে এতে বলা হয়, লুকায়িত অর্থের পরিমাণ দেশটির জাতীয় উত্পাদন বা জিএনপির ৫৩ শতাংশ। আর গোটা এশিয়ায় এ হার ২৬ শতাংশের মতো।
প্রতিবেদনে পরোক্ষ করের ওপর এশীয় দেশগুলোর নির্ভরতা তুলে ধরে বলা হয়, এসব করের মধ্যে রয়েছে মূল্য সংযোজন ও বিক্রয় কর এবং বৈদিশিক বাণিজ্য কর। প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় এশিয়ার দেশগুলোতে কর প্রশাসন অদক্ষ এবং মানের দিক থেকে দূর্বল এবং এখানকার কর প্রশাসন ও কর আদায় ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। তাই কর প্রশাসনের সংস্কার এবং এর আধুনিকায়ন এশিয়ার দেশগুলোর একটি নীতিগত কর্মপরিকল্পনা হওয়া উচিত। যারা কর ফাঁকি দিয়ে সম্পদ গড়ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে এডিবি বলেছে, এমনকি গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে তাদের প্রকাশ্যে লজ্জাও দেওয়া যেতে পারে।
এডিবি প্রতিবেদনে কর ফাঁকির তথ্যউপাত্ত এবং তার কতগুলো
কারণও তুলে ধরা হয়েছে। তবে যেটি স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়নি সেটি হলো করের অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় না হওয়া থেকে সৃষ্ট অনিহা। উন্নত দেশগুলোতে কর প্রদানের সময় একজন নাগরিক জানেন যে, তার কষ্টার্জিত অর্থ দেশের কল্যাণে ব্যয় হবে কিংবা নিজের কোনো ভবিষ্যত বিপদ বা প্রয়োজনে আজকের দেওয়া করের সুফল পাওয়া যাবে। কিন্তু সরকারের কর্মকাণ্ডের কারণেই এশীয় অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষের মনে এমন ধারণা জন্ম এখনো নেয়নি। তারা মনে করে, কর হিসেবে যে অর্থ দেওয়া হচ্ছে তার সুফল তারা তেমন একটা পাবে না, যেমনটা একটা কল্যাণ রাষ্ট্রের নাগরিক পায়।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |