|
চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটিতে ৩০ জুন গৃহীত এক প্রস্তাবে ২০১০ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট অনুমোদিত হয়েছে।
রাশিয়া সফররত চীনের বাণিজ্য উপমন্ত্রী জেন জিয়েন সম্প্রতি বলেছেন, বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদার করা চীন-রাশিয়া আর্থ-বাণিজিক সম্পর্ককে জোরদারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। এ ক্ষেত্রে দু'দেশের মধ্যে সহযোগিতার ভবিষ্যত উজ্জ্বল।
হংকং বিশেষ প্রশাসন অঞ্চলের সরকার ৪ জুলাই জানিয়েছে, হংকং ও তাইওয়ানের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতা ও আদান-প্রদান আরও বেগবান করার জন্য হংকং এ বছরের মধ্যে তাইওয়ানে 'হংকং আর্থ-বাণিজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যালয়' স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে।
এতক্ষণ সংক্ষিপ্ত কয়েকটি অর্থনীতির খবর শুনলেন। এখন শুনুন একটি প্রতিবেদন। এটির শিরোনাম: 'সেনডং ইয়েনথাই সামুদ্রিক সম্পদের ওপর নির্ভর করে নীল অর্থনীতির ব্যাপক বিকাশ'
বন্ধুরা, বতর্মানে একটি পরিভাষা খুব প্রচলিত হচ্ছে। সেটি হল নীল অর্থনীতি অর্থাত সমুদ্র অর্থনীতি। আধুনিক নীল অর্থনীতিতে অন্তর্ভূক্ত সামুদ্রিক সম্পদের উন্নয়ন ও প্রাসঙ্গিক পরিসেবামূলক কর্মকাণ্ড। এ সব উত্পাদন শিল্প অর্থনীতিকে আধুনিক নীল অর্থনীতি বলে গণ্য করা হয়।
সেনডং উপদ্বীপের নীল অর্থনীতি অঞ্চল হচ্ছে সারা চীনের সামুদ্রিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উত্পাদন শিল্প উন্নয়নের আদর্শ অঞ্চল। ২০১১ সালের প্রথম দিকে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে 'সেনডং উপদ্বীপ নীল অর্থনীতি অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মসূচি' অনুমোদন দেয়। এ থেকে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, সেনডং উপদ্বীপ নীল অর্থনীতি অঞ্চলের নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের কৌশলে রূপান্তরিত হয়ে উঠেছে। এক সাক্ষাত্কারে ইয়েথাই শহরের কমিউনিস্ট পার্টির কমিশনের প্রচার বিভাগের পরিচালক লিও ইয়েন লিন বলেন,
'চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে 'সেনডং উপদ্বীপ নীল অর্থনীতি অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মসূচি' অনুমোদন দিয়েছে। এটা হল দ্বাদশ পাঁচশালা পরিকল্পনা শুরুর বছরে দেশের কৌশল হিসেবে প্রথম অনুমোদিত প্রকল্প। এর পাশাপাশি এটা হল আমাদের দেশের প্রথম সামুদ্রিক অর্থনীতির ভিত্তিতে আঞ্চলিক উন্নয়ন কৌশল। বতর্মানে ইয়েনথাই এই সুযোগ নিয়ে সক্রিয়ভাবে নীল অর্থনীতি অঞ্চলের নির্মাণ কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।'
নীল সমুদ্র অর্থনীতিতে সবচেয়ে প্রাথমিক ও আদি উত্পাদন হল মত্স্য শিল্প। ২০১০ সালে ইয়েনথাই শহরের মত্স্য শিল্পের আকার ৫২৬০ কোটি রেন মিন পিতে দাঁড়ায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মত্স্য শিল্পের গঠনকাজকে দ্রুত বিকশিত করেছে। বতর্মানে ইয়েনথাইয়ে বেশ কয়েকটি বড় আকারের ও আধুনিক হিমায়িত রির্জাভ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। ভবিষ্যতে সারা বিশ্বে আরও ৩০টি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান ইয়েনথাইয়ের প্রতিবেশী। পূর্ব সাগরের বিপরীত তীরে এ দু'দেশ অবস্থিত। ইয়েনথাইয়ের অদ্বিতীয় ভৌগলিক অবস্থান ও তার অপেক্ষাকৃত কম দামি পরিসেবা দামের কারণে হিমায়িত রির্জাভ ক্ষেত্রে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা শক্তি প্রবল। এ প্রসঙ্গে আন্ডে জলজাত উত্পাদন কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক জন সি গ্যান বলেন,
'চীনের রফতানি পণ্যের ৮ থেকে ৯ শতাংশ ইয়েনথাই জলজাত পণ্যদ্রব্য কেন্দ্রের। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের বাজারে জলজাত পণ্যের চাহিদা বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। কারণ এখন চীনা জনগণের জীবণযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। সুতরাং এখানে দেশের তথা বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলজাত পণ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।'
সমূদ্র থেকে উত্পাদিত বিভিন্ন ধরনের পণ্যদ্রব্য সমুদ্র অর্থনীতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশাল সমুদ্রের প্রচুর জীবসম্পদকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে কাজে লাগানো হয়েছে। এই উদ্ভাবন মানবজাতির জন্য ইতিবাচক অবদান রেখেছে।
সেনডং প্রাচ্য সমুদ্র কোম্পানি ও চীনের বিজ্ঞান একাডেমির সমুদ্র গবেষণালয়ের যৌথ উদ্যোগে দেশের সমুদ্রশৈবাল গবেষণালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সেনডং প্রাচ্য সমুদ্র কোম্পানি ও চায়না সমুদ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে বেশ কয়েকটি বিশেষ ধরনের মাছের তেল উত্পাদিত হয়েছে। এ সব মাছের তেল অনেক হাসপাতলে ব্যবহার করা হয়। লিয়েই ওধুষ প্রস্তুত কোম্পানির কর্মকর্তা থিয়েন চিন ওয়ে ব্যাখ্যা করে বলেন,
'সমুদ্র থেকে আহরিত নানা উপাদান দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি করা যায়। এখন বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য করেছেন, সমুদ্রের অনেক উপাদান দিয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধ ও চিকিত্সার ওষুধ তৈরি করা যায়। জানা গেছে, অন্যান্য ওষুধেও সমুদ্র থেকে আহরিত উপাদান রয়েছে। সুতরাং এ কথা বলা যায় যে, সমুদ্রে মানবজাতির গবেষণার কোন অন্ত নেই।'
সমুদ্র পরিবহন ও সরবরাহ ক্ষেত্রে ইয়েনথাই তার আঞ্চলিক প্রাধান্য বাড়িয়েছে। যার ফলে 'বন্দর অবলম্বন করে শহর বিকশিত করার' কৌশল গতিশীল হয়েছে। ২০১০ সালে গোটা শহরের বন্দরে পণ্য খালাসের পরিমাণ ২০০৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ২৩ দশমিক ২ শতাংশ বেশি হয়। তা ছাড়া ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার পার্সন টাইম যাত্রী পরিবহণ করা হয়েছে। বতর্মানে ইয়েনথাই বন্দরের সম্প্রসারণ কাজ পুরোদ্যমে চলছে। জানা গেছে আগামি কয়েক বছরের মধ্যে ইয়েথাইয়ের পশ্চিম অঞ্চলের বন্দরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।
সামুদ্রিক সরঞ্জাম তৈরি ক্ষেত্রে ইয়েনথাই অনেক অগ্রসর হয়েছে। ইয়েনথাইয়ের সমুদ্র প্রকল্প লিমিটেড কোম্পানিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভারোত্তোলন যন্ত্র আছে। ২০১০ সালে এই কোম্পানি প্রথম গভীর সমুদ্রে তেল অনুসন্ধান প্লাটফর্ম তৈরি করে। এই তেল অনুসন্ধান প্লাটফর্মের সমস্ত সরঞ্জাম অত্যন্ত আধুনিক। এর আগে এ সব সরঞ্জাম সিংগাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করা হত। এ কোম্পানির কর্মকর্তা ওয়াংহাই ফং বলেন,
'সেনডং প্রদেশের বিভিন্ন সরকার আমাদের ওপর অত্যন্ত মনোযোগ দিচ্ছে। আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান সেনডং প্রদেশের আদর্শ শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে। অবশ্যই আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজে সেনডং প্রদেশের বিভিন্ন সরকার অনেক সাহায্য দিয়েছে। ভবিষ্যতে নীল সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়নে আমরা আরও প্রচেষ্টা চালাবো।
মত্স্য, সরবরাহ শিল্প ও নির্মাণ শিল্প ছাড়া সমুদ্র সংস্কৃতি পর্যটনও নীল অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইয়েনথাই একটি সৈকত শহর। এখানে অনেক দেখার মতো জায়গা আছে। চীনের চারটি বিখ্যাত প্যাগোডার অন্যতম পংলাই প্যাগোডা, তাও ধর্ম সংস্কৃতির অন্যতম উত্পত্তিস্থল থুয়েইসেনসহ বেশ কয়েকটি দশর্নীয় স্থান দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। তা ছাড়া, ইয়েনথাই হল দেশের সবচেয়ে বড় লাল মদ তৈরির কেন্দ্র। এখানে তৈরি লাল মদ দেশ ও বিদেশের বাজারে সমাদৃত।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |