|
গত বছরের জুন মাসে ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ৬.৭ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু উন্নয়ন সহযোগী ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রবৃদ্ধির সে হারকে নাকচ করে দিয়ে নিজেরা যে প্রাক্কলন করেছিল, তা ছিল সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। তারা মনে করেছিল, গত ২০০৯-১০ অর্থবছরে যেখানে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র ৫.৯ শতাংশ, সেখানে এক লাফে তা বেড়ে ৬.৭ শতাংশে পৌঁছানো অসম্ভব হবে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছিল ৬.৩ শতাংশ, বিশ্বব্যাংক ৬.২ শতাংশ, জাতিসংঘের এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন ৬.৪ শতাংশ এবং স্থানীয় গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করেছিল ৫.৯ শতাংশ।
তবে তাদের আশঙ্কার মধ্যেও সরকার অবশ্য আশাবাদী ছিল যে, প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, "আগামী অর্থবছরে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ৬.৭ শতাংশ। আমরা আশা করছি, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে সহায়তা প্রদান, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের উদ্যোগসহ ঋণের জোগান বৃদ্ধির মাধ্যমে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে বেগবান করা এবং মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রেখে বৈদেশিক খাতকে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রাখার মাধ্যম কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন সম্ভব।"
সরকার মনে করেছিল, সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির একটা ভালো সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। সে সক্ষমতাকে যদি যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোনো দুরূহ কাজ হবে না।
পরিসংখ্যান ব্যুরো জিডিপির লক্ষ্য অর্জনের যে সর্বশেষ প্রাক্কলন করেছে তাতে শিল্প খাতের উচ্চ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বোরোর বাম্পার ফলন বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো এ বছর শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ৯.৫২ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে। আর কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪.৮২ শতাংশ, যদিও বোরোর উত্পাদনের হিসেব এখনো পায়নি এ ব্যুরো।
তবে বাংলাদেশের কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ বিশ্বাস রাখতে পারছেন না পরিসংখ্যান ব্যুরোর এ প্রাক্কলনের বস্তুনিষ্ঠতায়; তারা বলছেন এ প্রাক্কলন অতিরঞ্জিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই প্রাক্কলন গ্রহণযোগ্য নয়। আমার মতে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের মতো ৬ শতাংশের মতোই থাকবে।"
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে উচ্চহারে রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি আমদানিও হয়েছে। এতে বাণিজ্য-ঘাটতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আবার গত বছরের তুলনায় রেমিটেন্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধিও কমেছে।
অর্থবছর শেষে হিসেব মিলিয়ে যদি দেখা যায়, সত্যি সত্যিই ৬.৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, তবে তা হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি রেকর্ড। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৬.৬৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। এর পর থেকেই প্রবৃদ্ধির হার কমতে থাকে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নিচে নেমে যায়। সে বছর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫.৭৪ শতাংশ। তার আগে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫.৯৬ শতাংশ।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |