Web bengali.cri.cn   
আশা-নিরাশার বাজেট
  2011-06-09 16:39:45  cri
বাংলাদেশের সংসদে পেশ হলো আগামী ১লা জুলাইয়ে শুরু পরবর্তী অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট। ১ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার এ বাজেটে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। চলতি ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার বেড়েছে ৩১ হাজার কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উত্পাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ শতাংশ, যেখানে চলতি অর্থবছরের বাজেটে তা ধরা হয়েছিল ৬.৭ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে, এ বছর দেশের অর্থনীতি প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে যাচ্ছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এবার প্রবৃদ্ধির হার ৬.৬৬ শতাংশ পৌঁছাচ্ছে।

অন্যদিকে নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭.৫ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে ধরা হয়েছিল ৬.৫ শতাংশ এবং পরে সংশোধন করে করা হয়েছিল ৮ শতাংশ। তবে মূল্যস্ফীতি সে সংশোধিত হারকে অতিক্রম করেছে ইতোমধ্যে। অর্থনীতিবিদদের ধারণা হলো, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার দুই অঙ্কে পৌঁছে গেছে, যার ফলে জীবনযাপন কঠিন হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে। মানুষের দাবি, বাজেট হোক বাজারবান্ধব; নিয়ন্ত্রণে থাকুক মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়া। কিন্তু উন্নয়নের গতি অব্যাহত রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যে কোনো অর্থনীতির পক্ষেই দুরূহ কাজ; এক্ষেত্রে নেই কোনো যাদুমন্ত্র। তার পরও সেই দুরূহ কাজটি সম্পাদনের প্রচেষ্টা নিতে হবে সরকারকে। কিভাবে সেটি করা যেতে পারে তার পথও বাতলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, চলতি অর্থবছরের অন্যতম প্রধান শিক্ষাটি মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার উদ্যোগ, বিশেষ করে, খাদ্যমূল্য সম্পর্কিত। তাঁর মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা, খোলাবাজারে খাদ্য বিক্রির ব্যবস্থা, দুস্থদের জন্য খাদ্য বিতরণের ব্যাপক কর্মসূচি চালু রাখা এবং বড় আকারে খাদ্য মজুদ মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অর্থনৈতিক ক্রিয়া-প্রকরণগুলোর বিচক্ষণ মিশ্রণ ঘটাতে হবে।

তিনি বলছেন, মধ্য ও নিম্ন আয়ের নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে আয় বৃদ্ধিকারী কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে, যেমনটি বলেছেন দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও। ব্যবসায়ী নেতারা তাদের বাজেট পরামর্শে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য 'বিনিয়োগবান্ধব' একটি বাজেট প্রণয়নের কথা বলেছেন।

অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়ও ফুটে উঠেছে বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়ানোর আশাবাদ। তিনি বলেছেন, ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্বপ্রাপ্তির যে রেকর্ড লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জন সম্ভব হবে বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে।

তবে প্রত্যেক বছরের মতো বাজেট নিয়ে সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জটা এবারও সরকারের সামনে থাকবে তা হলো এর বাস্তবায়ন। বলা যায়, বড় বাজেট সেই চ্যালেঞ্জকে আরো খানিকটা বাড়িয়ে দেবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ইতোমধ্যে যে ৩৯টি বাজেট ঘোষিত হয়েছে, তার একটিও পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। আর সেকারণে সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যও অর্জিত হতে পারেনি পুরো মাত্রায়।

পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আরোহণকারী বর্তমান সরকারের কাছে দেশের জনগণের প্রত্যাশা স্বভাবতই একটু বেশিই। সে প্রত্যাশা পূরণে নতুন বাজেট কতটা সফল হবে - তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে সব মহলে। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় আশার বাণী শুনিয়েছেন যে, এ বাজেট সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে বড় অবদান রাখবে। তবে বাস্তবতা হলো এই যে, গত ৪০ বছর ধরেই বাজেট পেশের সময় জনগণ এমনই আশার কথা শুনে আসছে। কিন্তু তাদের ভাগ্যে কতটা পরিবর্তন হয়েছে, তার সবচেয়ে বড় সাক্ষী তারা নিজেরাই। এবারের আশার বাণী কি গতানুগতিক আশার বাণীই থাকবে, নাকি সত্যিই তা কিছুটা হলেও বাস্তবে রূপ নেবে - সেটা দেখা যাবে আগামী এক বছরে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040