|
চীনের রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন ৩০ মে প্রকাশিত এক উপাত্তে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে এপ্রিল মাস পযর্ন্ত চীনের ৩১টি প্রদেশের ভূমিসম্পদের বিনিয়োগে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। গুয়েযো , শিংচিয়াং ও অন্তমঙ্গোলিয়ায় যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬ , ৬৫ দশমিক ৪ ও ৬০ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। এক উপাত্তে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে এপ্রিল পযর্ন্ত চীনের ভূমিসম্পদে এক ট্রিলিয়ান ৩৩৪০ কোটি রেন মিন পি বরাদ্দ করা হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় বৈদেশিক মূদ্রা ব্যবস্থাপনা ব্যুরো ৩০মে প্রকাশিত এক উপাত্তে জানা গেছে, ২০১০ সালের শেষ দিকে চীনের বৈদেশিক ব্যাংকিং পুঁজি দাঁড়িয়েছে ৪ ট্রিলিয়ান ১২৬০ কোটি মার্কিন ডর্লারে। ২০০৯ সালের এক সময়ের তুলনায় ১৯ শতাংশ বেশী।
চীনের কমিউনিষ্ট পাটির কেন্দ্রীয় কমিটির দক্ষ ব্যক্তি কর্ম সমন্বয় কার্যালয় ৩০ মে জানিয়েছে , গত বছরের শেষ নাগাদ, বিদেশে বসবাসরত ৩১৮জন উচ্চ পর্যায়ের দক্ষ ব্যক্তি পঞ্চম দফা ' দক্ষ ব্যক্তি পরিকল্পনায়' নির্বাচিত হয়েছে। এখন পযর্ন্ত মোট ১১৪৩জন বিশেষজ্ঞ এই পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য , ২০০৮ সাল থেকে চীনে ' দক্ষ ব্যক্তি পরিকল্পনা' চালু হয়। আগামী ৫ থেকে ১০ বছর পযর্ন্ত দেশের গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন প্রকল্প, গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠান ও হাইটেক উত্পাদন শিল্প উন্নয়ন অঞ্চলগুলোতে বিদেশ থেকে দক্ষ ব্যক্তিদের আনা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বতর্মানে বিশ্ব উদ্যান মেলা চীনের প্রাচীন নগর সিআন শহরে পুরোদম্যে চলছে। এ উদ্যান মেলায় অংশ গ্রহণকারীদের স্বাগত জানানোর জন্য সিআন শহরের সবর্ত্র সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। এবারের মেলা সিআনের পযর্টন শিল্পের জন্য একটি ভাল সুযোগ। ভবিষ্যতে সিআনের পযর্টন শিল্প আরও সমৃদ্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এতক্ষণ সংক্ষিপ্ত কয়েকটি অর্থনীতির খবর শুনলেন। এখন শুনুন একটি প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটির শিরোনাম: ' চীন পর্যটন অর্থনীতি উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণের সমস্যার সমাধান করছে'
এক সময় পযর্টন শিল্পকে ধূমবিহীন উত্পাদন শিল্প বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু উত্পাদন শিল্পের একটানা উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশের সমস্যা অধিক থেকে অধিকতর গুরুতর হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইউনেস্কোর ' মানুষ ও পরিবেশ' কর্মসূচীর উদ্যোগে চীনের গুওয়াংযৌ প্রদেশের লিবো জেলায় আয়োজিত এক বৈঠকে পযর্টন ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে ' দূষণমুক্ত পযর্টন' বিষয়ে বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে ' লিবো ঘোষণাও' প্রকাশিত হয়েছে। ঘোষণাটিতে পর্যটন অর্থনীতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের সমস্যার সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা হয়েছে।
কেন পরিবেশ সংরক্ষণ অঞ্চলে 'দূষণমুক্ত পর্যটন' চালু করা হয় ? এ প্রশ্নের উত্তরে চীনের 'মানুষ ও জীবানু মহলের' রাষ্ট্রীয় কমিশনের মহা সচিব ওয়াং ডিং ব্যাখ্যা করে বলেন, অধিকাংশ পরিবেশ সংরক্ষণ অঞ্চল স্বল্প উন্নত অঞ্চলে অবস্থিত। তবে এ সব অঞ্চলে মানুষ বসবাস করে। সুতরাং যদি এ সব অঞ্চলে পুরোপুরিভাবে রুদ্ধভাবে ব্যবস্থাপনা চালায় তাহলে পরিবেশ সংরক্ষণ অঞ্চলের সঙ্গে স্থানীয় জসসাধারণের দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ দেখা দেবে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে এ ধরনের দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ মোকাবেলা করা ' মানুষ ও পরিবেশ' কর্মসূচীর ধারণা। এ প্রসঙ্গে মহা সচিব ওয়াং ডিং বলেন,
আমাদের ধারণার প্রধান মর্ম এই যে, সংরক্ষণকে প্রথম স্থানে রাখা উচিত তা নি:সন্দেহে , কিন্তু এর পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণের চারদিকে মানবজাতির তত্পরতা অনুমোদন দেয়া উচিত। বিশেষ করে পরিবেশ সংরক্ষণ অঞ্চলের আহ্বানে স্থানীয় জনসাধারণের নানা ধরনের তত্পরতা চালাতে উত্সাহ দেওয়া উচিত। যেমন ধরুন, অতীতে স্থানীয় জনসাধারণ কাঠ কেঁটে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে থাকতো। এখন পরিবেশ সংরক্ষণ অঞ্চলের কর্তৃপক্ষের উচিত মিথেন গ্যাস তৈরীর জন্য জনসাধারণকে প্রযুক্তি আনা অথবা আর্থিক ভতুর্কি দেয়া।
সংরক্ষণ ও উন্নয়ন এক জোড়া দ্বন্দ্ব। অতএব ' দূষণমুক্ত পযর্টন' নতুন ধারণা। তবে ভিন্ন দিক থেকে বিবেচনার কারণে ' দূষণমুক্ত পযর্টন' বিষয়ে সংরক্ষণ অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা সংস্থা, স্থানীয় সরকার, পযর্টন শিল্পের ব্যবসায়ী এবং পযর্টকদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে।
পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিটের অধ্যাপক লি জে জোর দিয়ে বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়ার পর ' দূষণমুক্ত পযর্টনের' মর্ম তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং ' দূষণমুক্ত পযর্টন' কড়াকড়িভাবে অনুসরণ করতে হবে। অবশ্যই ' দূষণমুক্ত পযর্টন' মেনে চলার পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণের চেতনা সব সময় মনে রাখা উচিত।
স্থানীয় সংস্কৃতির মারিকতা রক্ষা করা বতর্মানে চীনের পযর্টন উন্নয়নের একটি বড় সমস্যা। চীনের সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে বৈচিত্রময় স্থানীয় সংস্কৃতি আছে। যদি বেপরোয়াভাবে পযর্টন শিল্প উন্নয়ন করা হয় তাহলে স্থানীয় সংস্কৃতির ওপর বড় আঘাত হানতে পারে। এ প্রসঙ্গে পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিটের অধ্যাপক লি ওয়েন জুন বলেন,
একটি জাতি যদি তার নিজস্ব সংস্কৃতির পরিবেশ থেকে বিছিন্ন করে তাহলে তার উত্পাদন ও জীবনযাত্রার পদ্ধতি আস্তে আস্তে বিলুত হয়ে যাবে। প্রাকৃতিক দৃশ্য গুরুত্বপূর্ণ , কিন্তু পরিবেশ রক্ষা না করলে চলবে না। নইলে স্থানীয় বৈচিত্রময় সংস্কৃতি বিধ্বস্ত হবে।
অধ্যাপক লি ওয়েন জুন মনে করেন, 'দূষণমুক্ত পযর্টন ' কার্যকর হলে জনসাধারণের চেতনা তৈরী করা উচিত। তাদের জানতে হবে আবর্জনা ইচ্ছামতো ফেলাতে পারে না এবং ফুল ও ঘাত ইচ্ছামতো কুড়াতে পারে না। তিনি বলেন,
গোটা সমাজ এ ধরনের পযর্টন পদ্ধতি ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। দূষণমুক্ত পযর্টনের তাত্পর্য যত বেশী লোক জানে ততই ভাল। এখন থেকে জনসাধারণের মধ্যে এই ধারণা জনপ্রিয় করে তোলা উচিত। যাতে পযর্টন এলাকার পরিবেশ সংরক্ষণ করা হয়।
পরিবেশ সংরক্ষণ অঞ্চলে প্রবেশ করার আগে জনসাধারণের চেতনা তৈরী করা উচিত তা বটেই, কিন্তু ভ্রমণ চলাকালে জনসাধারণের চেতনা তৈরী করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লি জি মনে করেন,
'দূষণমুক্ত পযর্টন' মানুষের মনে যে উপলব্ধি এনে দিয়েছে তা আজীবনে ভূলে যাবে না। কোন কোন সময় হয়তো একজন মানুষের জীবন পরিবর্তন করতে পারে। আমি দেখেছি, পরিবেশ রক্ষার জন্য অনেক লোক চারকি ছেড়ে দিয়েছেন। সুতরাং এটি এক ধরনের শিক্ষা।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |