|
বিশ্ব নেতারা যখন এমন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তখন তাঁদের কর্তব্যকে আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিল আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম। সংস্থা তার এক প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্ব নেতারা বৈশ্বিক খাদ্যব্যবস্থা সংস্কারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে আগামী ২০ বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
'একটা উন্নত ভবিষ্যত গঠন' শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেকসই চর্চা শুরু করা এবং কার্বন নির্গমনসহ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আন্তর্জাতিক খাদ্য সঙ্কট মানব উন্নয়নকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে।
এতে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও সম্পদের ওপর চাপ বৃদ্ধির কারণে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রধান প্রধান খাদ্যের দাম ১২০ থেকে ১৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এ মূল্যবৃদ্ধি ক্ষুধাপীড়িত মানুষের সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় বিপুল পরিমাণে বাড়িয়ে দেবে এবং একটা আন্তর্জাতিক সঙ্কট ডেকে আনবে।
অক্সফামের প্রধান নির্বাহী বারবারা স্টকিং বলেন, "আমরা একটা সঙ্কট যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। বিশ্বে প্রতিদিন প্রতি সাতজনে একজন মানুষ ক্ষুধার্ত হচ্ছে। যদিও বিশ্ব তাদের সবাইকে খাওয়াতে সক্ষম।"
তবে বারবারা থেকে আরো এক ধাপ এগিয়ে অক্সফামের প্রচারণা ব্যবস্থাপক অ্যাডাম অ্যাস্কিউ বলেন, "এ মুহূর্তে আমরা যেটা মোকাবিলা করছি, সেটা হলো প্রথম দফা আন্তর্জাতিক খাদ্য সঙ্কট। বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যে ভেঙ্গে পড়েছে।... এখন আমরা যেটা বলতে চাই, তা হলো সমস্যা নিরসনের একটা উপায় সরকারগুলোকে খুঁজে বের করতেই হবে।"
ক্রমবর্ধমান খাদ্য সঙ্কটের প্রধান কারণগুলো কী হবে তার একটা তালিকাও অক্সফাম তৈরি করেছে। এগুলো হলো জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদের নিঃশেষণ, খাদ্য ব্যবস্থায় অসমতা, জৈব জ্বালানির বিষয়ে দায়িত্বহীন নীতি, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং পানি ও ভূমির চাহিদা বৃদ্ধি।
অ্যাস্কিউয়ের মতে, খাদ্য সঙ্কটে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে দরিদ্র জনগোষ্ঠি, যারা তাদের আয়ের বেশিরভাগই ব্যয় করে খাদ্য ক্রয়ে। তিনি বলেন, "আপনি যখন আপনার আয়ের শতকরা ৮০ ভাগই খাদ্যের পেছনে ব্যয় করছেন, তখন খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির অর্থ দাঁড়ায় এরকম যে, আপনি আপনার পরিবারের জন্য টেবিলে প্রয়োজনীয় খাদ্যের যোগান দিতে পারছেন না।"
অক্সফাম প্রতিবেদনে একটা টেকসই ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারগুলোর প্রতি আহবান জানানো হয়। এতে জৈব জ্বালানির ব্যাপারে সরকারগুলোর নীতির সমালোচনা করে পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি নিয়ে গবেষণা ও এর উন্নয়নে বিনিয়োগের প্রতি জোর দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, "আমরা মনে করি খাদ্য ব্যবস্থার জন্য জৈবজ্বালানি খুব, খুব হানিকর। আপনি যখন মানুষের বদলে যন্ত্রকে খাদ্য খাওয়াচ্ছেন, আপনি প্রকারন্তরে ভূমিই নিয়ে নিচ্ছেন, যেখানে মানুষের জন্য খাদ্য উত্পাদনের কথা। কিন্তু তার বদলে আমরা গাড়ির তেলাধারে খাদ্য দিচ্ছি।"
পরিস্থিতি মোকাবিলায় অক্সফাম খাদ্য বাজার নীতিমালা উন্নতকরণ এবং বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলে আরো অধিক পরিমাণে বিনিয়োগ করার জন্যও বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানায়। প্রসঙ্গত, এর আগে বিশ্বব্যাংকও খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে বিশ্ব নেতাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিল।
শুধু অক্সফাম বা বিশ্বব্যাংকই নয়, মানবজাতির ভবিষ্যত নিয়ে ভাবে এমন প্রতিটি সংস্থা-সংগঠন বৈশ্বিক খাদ্য সঙ্কট নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশ্ব নেতারা যত গুরুত্বসহকারে এ আশু সঙ্কট মোকাবিলার প্রচেষ্টা নেবেন বিশ্বের জন্য ততই মঙ্গল; নইলে সামনে সমূহ বিপদ। (শিয়াবুর রহমান)
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |