Thursday Apr 24th   2025 
Web bengali.cri.cn   
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অন্তর্ভূক্তির দশ বছরে চীন ও বিশ্বের বিজয়"
  2011-05-18 19:51:02  cri
একটি খবরে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে চীনে ৮১৫০টি বিদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি চীনের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের ১০৪টি দেশ ও অঞ্চলে পুঁজিবিনিয়োগ করেছে।

খবরে জানা গেছে, চীনের দশম নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোক্তা পণ্যদ্রব্যের আন্তর্জাতিক মেলা আগামী ৮ জুন চীনের জেচিয়াং প্রদেশের নিনপু শহরে অনুষ্ঠিত হবে। দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকা, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রসহ দশ বারোটি দেশ ও অঞ্চলের ৩০টিরও বেশী নাম-করা শিল্প প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় অংশ নেবে।

জানা গেছে, চীনের প্রথম আন্তর্জাতিক নতুন সামগ্রী উত্পাদন শিল্প সংক্রান্ত মেলা আগামি ৬ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশের হারবিন শহরে অনুষ্ঠিত হবে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পুঁজিবিনিয়োগ উন্নয়ন বিষয়ক বিভাগের মহাপরিচালক লিও জু জান সম্প্রতি একটি সাক্ষাত্কারে বলেছেন, আগামী কয়েক বছরে বিদেশে চীনের শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বাড়বে। তিনি এও বলেন যে, বিদেশে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় মূল্যয়ন ও গবেষণা চালাতে হবে এবং বিভিন্ন দিকের ঝুঁকিও বিবেচনা করতে হবে।

এতক্ষণ কয়েকটি সংক্ষিপ্ত খবর শুনলেন। এবারে শুনুন একটি প্রতিবেদন। আমার প্রতিবেদনটির শিরোনাম: "বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অন্তর্ভূক্তির দশ বছরে চীন ও বিশ্বের বিজয়" ।

প্রিয় বন্ধুরা, এ বছর হল বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীনের অংশগ্রহণের দশম বার্ষিকী। চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার পক্ষে 'বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীনের অন্তর্ভূক্তি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। গত দশ বছরে চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন দ্রুত গতিতে বিকশিত হয়েছে। এর পাশাপাশি বিশ্বও চীনের সৃষ্ট সুযোগের সদ্ব্যবহার করে আসছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীনের অংশগ্রহণ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার ইতিহাসে সবচেয়ে আদর্শ তাত্পর্য সম্পন্ন উভয় বিজয়ের ঘটনা হিসেবে গণ্য করা হয়।

১৫ বছরের কঠোর আলোচনার মাধ্যমে ২০০১ সালের ডিসেম্বর চীন আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় অংশগ্রহণ করে। এ ঘটনাকে স্মরণ করে চীনের প্রতিনিধি সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী, বোআও এশিয়া ফোরামের পরামর্শ কমিশনের সদস্য লং ইয়ং ঠু বলেন,

বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীনের অন্তর্ভূক্তির অর্থ এই নয় যে, চীনের কেবলমাত্র একটি বিশ্ব সংস্থায় অংশ নেয়া বরং এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চীনের অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ তরান্বিত করা। কেননা, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় অন্তর্ভূক্তির আলোচনা প্রক্রিয়া আসলে চীনের অভ্যন্তরীণ উন্মুক্তকরণের ওপর চিন্তাভাবনাকে একীভূত করা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান ও চীনাদের শিক্ষাদানের প্রক্রিয়া।

বিশ্ব সংস্থায় অন্তর্ভূক্ত হওয়া চীনের জন্য একটি দুঃসাহসী ও কঠোর বাছাই ।এর অর্থ এই যে, চীন বহুমুখী বাণিজ্যের নিয়ম গ্রহণ করবে । শিল্প, কৃষি, পরিসেবা শিল্প ও মেধাস্বত্বসহ অনেক ক্ষেত্রে চীনকে বাস্তবে তার প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে হবে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীনের অন্তর্ভূক্তি সম্পর্কীত আলোচনায় চীনেও ভিন্ন মত দেখা দিয়েছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীনের অন্তর্ভূক্তির প্রধান আলোচনা প্রতিনিধি লং ইয়ং ঠু বলেন, বিদেশ থেকে উত্পাদন শিল্প, সম্পদ ও দক্ষ ব্যক্তিকে আনা দেশের অভ্যন্তরের সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর আঘাত স্বরূপ। তাই এ ব্যাপারে তর্কবিতর্ক থাক স্বাভাবিক। যদি প্রথম থেকে আলোচনার পথ সুসম হয় তাহলে তা অস্বাভাবিক ব্যাপার।

বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক পাসকল লামি এক সময় ইইউ বাণিজ্য কমিশনের সদস্য ছিলেন। তিনি ইইউ বাণিজ্য কমিশনের পক্ষ থেকে চীনের সঙ্গে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীনের অন্তর্ভূক্তি সম্পর্কীত আলোচনায় অংশ নেন। সুতরাং তিনি চীনকে খুব জানেন। গত বছরের প্রথম দিকে সুইজারল্যান্ডে ডাভোস ফোরামে তিনি বলেন, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীনের অন্তর্ভূক্তি চীনের আইন, অর্থনীতি ও সমাজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর প্রতিকুল ছাপ ফেলে। এ জন্য চীন দারুণ মূল্য দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রী চেন দে মিন বলেন, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় অংশ নেয়ার জন্য চীন নানা ধরনের অসুবিধা অতিক্রম করে আসছে। চীন এখন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার একটি পাক্কা সমান অংশীদার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন,

গত দশ বছরে চীনের গড় শুল্ক কর বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেয়ার আগের ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৮ শতাংশে কমে গেছে। এর মধ্যে একশোটি পরিসেবা বাণিজ্য বিভাগ উন্মুক্ত হয়েছে। তিন হাজারেরও বেশী আইনগত বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে।

বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেয়ার প্রথম দিকে চীনের অভ্যন্তরে এ ব্যাপার নিয়ে অনেক তর্কবির্তক ছিল। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীনের অন্তর্ভূক্তির পর কী কী ঘটনা ঘটবে তাতে বিশ্বের কোন কোন দেশের সন্দেহ বেশী। তবে চীন নিজের সাফল্য দিয়ে এর উত্তর দিয়েছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেয়ার প্রথম দশ বছরে চীনের অর্থনীতি দ্রুতভাবে বিকশিত হয়েছিল। এ দশ বছরে চীনের রফতানি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯ গুণ হয়েছে। আমদানির প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৭ গুণ হয়েছে। জি ডি পি,র প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। মাথাপিছু জি ডি পি প্রথম দিকের ৮শো মার্কিন ডলার থেকে ২০১০ সালের ৪ হাজার মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রী চেন দে মিন আরও বলেন, বিশ্বের সঙ্গে মিশে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে পরস্পরের অনুপূরক উপাদান ও স্বার্থ এনে দিয়েছে। এতে চীনে পুঁজিবিনিয়োগকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,

(রেকডিং ৩)

২০১০ সালে চীনে বিদেশের পুঁজিবিনিয়োগের অর্থ ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছিল। গত দশ বছরে পুঁজিবিনিয়োগের পরিমাণ ৭০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। চীনে বিদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক মুনাফা অর্জন করেছে। বতর্মানে চীনে মোট ১৪০০টি গবেষণা সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রী চেন দে মিন বলেন, বতর্মানে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বড় আমদানিকারি দেশে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে চীন বিশ্বের দিকে আরও উন্মক্ত হবে। তিনি বলেন,

বতর্মানে চীন আমদানি ত্বরান্বিতকারি নীতি প্রণয়ন করছে। আগামী পাঁচ বছরে চীনের আমদানিকৃত পণ্যদ্রব্যের পরিমাণ বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর জন্য চীন যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে চীনের অভ্যন্তরীণ ভোক্তার প্রবৃদ্ধি টিকে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা, এতক্ষণ একটি প্রতিবেদন শুনলেন। আজকের অর্থনীতি অগ্রযাত্রা এখানে শেষ হল।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040