|
বিশ্ব নাগরিক সমাজের নেতারা মনে করেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর নাগরিকদেরকে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এ ক্ষেত্রে। তাদের ভূমিকা হলো যাতে নিজ নিজ দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী হয় এবং তাদের নেতারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন তার নিশ্চিত করার জন্য প্রচেষ্টা নেওয়া।
সরকার, আন্তঃসরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, উন্নয়ন অংশীদার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ আট সহস্রাধিক প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। ইস্তাম্বুল কর্মসূচি গ্রহণের মধ্য দিয়ে ১৩ মে এ সম্মেলন শেষ হবে।
সম্মেলনে ভাষনদানকালে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট হোসে ম্যানুয়েল বারোসা বলেন, নিজেদের উন্নয়নের প্রাথমিক দায়-দায়িত্ব স্বল্পোন্নত দেশগুলোরই। তিনি বলেন, "ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবাধিকার, লিঙ্গসাম্য, গণতন্ত্র, সুশাসন এবং শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে অর্থনৈতিক অগ্রগতির আন্তঃসম্পর্কের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়।"
বারোসার মতে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর নাজুক পরিস্থিত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বেসরকারি খাতেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা দরকার। তিনি বলেন, "সম্পদ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে বেসরকারি খাত।"
দরিদ্র দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রাথমিক দায়িত্ব নিজেদের - বারোসের এ মন্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিশ্বের নেতৃস্থানীয় সমাজ ও উন্নয়নকর্মীরা। তবে তারা দেশগুলোর দারিদ্র বিমোচনে উন্নত দেশগুলোর অঙ্গিকার পালনে ব্যর্থতাও তুলে ধরেন।
এবারের সম্মেলনের সামাজিক ফোরামের মুখপাত্র অর্জন কারকি বলেন, "উন্নয়নশীল দেশগুলোর দারিদ্র মোচনে জাতিসংঘের অধীনে একটা বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিষদ গঠনের মাধ্য বিশ্বের সুশাসন জোরদার করা এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোতে ঢালাও সংস্কার আনা দরকার।"
তিনি বলেন, ইস্তাম্বুল কর্মসূচির বাস্তবায়নে নাগরিক সমাজকে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট থাকতে হবে।
সামাজিক কমিটির সদস্য দেমবা মুসা দেমবেলে বলেন, এর আগের সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে যে সহায়তা, বিশেষ করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার অঙ্গিকার করেছিল তা পালনে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর খবরদারিত্ব এবং অর্থ সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অসামর্থ্য তুলে ধরেন।
দেমবেলে বলেন, "নিজেদের অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের আর্থিক নীতি প্রণয়নের স্বাধীনতা নেই স্বল্পোন্নত দেশগুলোর। দেশগুলোর অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি কী হবে এখনো আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক তা ঠিক করে দেয়।"
আফ্রিকা বিকল্প ফোরামের পরিচালক দেমবেলে বলেন, ২০০১ সালে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সম্মেলনে গৃহীত ব্রাসেলস কর্মসূচি দেশগুলোর সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিতে এবং দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল।
তার মতে, দরিদ্র দেশগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক সম্পদ গঠন এবং তাদের জনগণের অন্ন সংস্থানের ক্ষেত্রে শক্ত ভিত খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবচেয়ে গুরুতর ক্ষুধা-পীড়িত - বিশ্ব খাদ্য সংস্থার এ ভাষ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষুধা দেশগুলোর জন্য এখনো বড় চিন্তার বিষয় হয়ে রয়েছে।
একথা সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন যে ব্রাসেলস কর্মসূচি বাস্তবায়ন তেমন একটা হয়নি। সে প্রেক্ষাপটে এবারের কর্মসূচি কতটা বাস্তবায়িত হবে এবং এ সম্মেলনের কল্যাণে স্বল্পোন্নত দেশগুলো দারিদ্রের অভিশাপ থেকে কতটা বেরোতে পারবে সেটি বড় প্রশ্ন হয়ে থেকে যাচ্ছে।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |