Web bengali.cri.cn   
নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিক
  2011-04-14 09:45:30  cri
'নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিককে' বলতে সাধারণত বিংশ শতাব্দীর ৮০ দশকের পর জন্ম গ্রহণকারী কৃষক শ্রমিকদের বোঝায়। বতর্মানে চীন দেশের বিভিন্ন জায়জায় কর্মরত ১৫ কোটি কৃষক শ্রমিকের মধ্যে ৬০ শতাংশ হলেন নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিক। তাদের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি।

২০১০ সালের মে মাস থেকে জুন মাস পযর্ন্ত দেশের ২৫টি শহরে চীনের ওয়ার্কাস ইউনিয়নের চালানো জরীপে দেখা গেছে, জরীপ গ্রহণকারী ৪৪৫০ জনের মধ্যে ২৭৭০ জন ছিলেন নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিক। মাত্র ১৭৪২ জন কৃষক শ্রমিক ৮০ দশকের আগে জন্ম গ্রহণ করেছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ি, নব প্রজন্মের কৃষকৱদের সংখ্যা জরীপ গ্রহণকারীদের ৬০.৯ শতাংশ অধিকার করে আছে। এ গড়পড়তা প্রায় চীনের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যাণ ব্যুরোর প্রকাশিত সংখ্যার ৬০.৬ শতাংশের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, এই জরিপ মোটামুটি নির্ভরযোগ্য এবং মোটামুটি নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিকদের বর্তমান অবস্থানের চিত্র ধরে তুলেছে।

জরীপে দেখা গেছে, নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিকদের মধ্যে যারা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষা গ্রহণ করেছেন তাদের অনুপাত ৬৭.২ শতাংশ। কিন্তু তাদের পেক্ষাগত দক্ষতার অভাব রয়েছে। আশির দশকের আগে জন্ম গ্রহণ-করা কৃষক শ্রমিকরা তাদের মতো শিক্ষা পাননি। কিন্তু শিক্ষার বিষয়বস্তুতে দেখা যায়, নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিকদের শিক্ষা সাধারণত বাধ্যতামূলক নয় বছরের শিক্ষা ও সাধারণ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে মাত্র ৩৭.৫ শতাংশ পেশাদার স্কুলে নানা ধরনের দক্ষতা শিখেছেন।

জরীপ অনুযায়ি, নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিকদের মধ্যে অর্ধেক অবিবাহিত। তাদের জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা অপেক্ষাকৃতভাবে কম।২০ বছর থেকে ৩০ বছর বয়স্ক বয়সের নব প্রজন্মের কৃষক শ্রকিদের মধ্যে ৫৯.৯ শতাংশ অবিবাহিত । তাদের মধ্যে মাত্র ৩৯.৫ শতাংশ বিবাহিত । কিন্তু যে সব কৃষক শ্রমিক আশির দশকের আগে জন্ম গ্রহণ করেছেন সে সব কৃষক শ্রমিকের মধ্যে ৯৩ শতাংশ বিবাহিত।

জরীপে দেখা গেছে, নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিকরা প্রধানত: চীনের পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চলে নানা ধরনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তাদের জন্মস্থান ত্যাগ করে বাইরে কাজ খোঁজার আগ্রহ খুব বেশী । কিন্তু তাদের মধ্যে ৭০.৯ শতাংশ বাইরে চাকরির খোঁজে বের হওয়ার আগে চীনের পূবাঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চল অথবা চীনের উন্নত অঞ্চলে বসবাস করতো। তাদের জীবনযাত্রার মান চীনের অন্যান্য জায়গার চাইতে উন্নত ।

জরীপে দেখে গেছে, শতকরা ৮১.৭ ভাগ নব প্রজম্মের কৃষক শ্রমিক দ্বিতীয় উত্পাদন শিল্পে নিয়োজিত আছে, প্রায় ১৮ শতাংশ তৃতীয় উত্পাদন শিল্প অর্থাত গণসেবা শিল্পে নিয়োজিত রয়েছে। এ হিসাব অনুযায়ি, নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিকদের মধ্যে বেশির ভাগ বেসরকারি মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করে।

জরীপে দেখে গেছে, নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিকদের সার্বিক আয় অপেক্ষাকৃত কম । জরীপ গ্রহণকারী ১০০০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তাদের মাসিক আয় ১৭৪৭.৮ ইউয়ান রেন মিন পি যা শহরাঞ্চলের শ্রমিকদের মাসিক আয়ের ৫৭.৪ শতাংশ। শহরাঞ্চলের শ্রমিকদের মাসিক আয় ৩০৪৬.৬ ইউয়ান রেন মিন পি। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিকদের বিবাদ প্রধানত নিম্ন বেতন নিয়ে। মাসিক তেবন বাড়ানো তাদের নিত্য দিনের দাবি।

জরিপে দেখা গেছে , নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিকদের শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক ইউনিয়নে যোগ দেয়ার আগ্রহ কম। জরিপ গ্রহণকারী ১০০০ টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে তাদের শ্রমিক ইউনিয়নে যোগ দেয়ার হার মাত্র ৪৪.৬ শতাংশ। তা ছাড়া, কাজকর্মের অস্থিতিশীলতা, নিম্ন মানের সামাজিক নিরাপত্তা, অনিয়মিত পেশাদার প্রশিক্ষণ এবং তাদের ওপর অবহেলাসহ নানা ধরনের নেতিবাচক উপাদান নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিকদের উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি করেছে।

জরীপের উপসংহারে এ সব সমস্যা সমাধানের জন্য প্রস্তাবও উত্থাপন করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ি, নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিকদের পেশাদারী দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ভবিষ্যতে তাদের জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা উচিত। তাদের স্বার্থ বাস্তবায়নে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের জন্য বেতন ভাগাভাগি ও সমাজ নিরাপত্তাসহ নানা ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা দূর করা উচিত।

কৃষক শ্রমিকদের বেতন প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি রিপোর্টে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে যে, ভবিষ্যতে বেতন প্রদান ও বেতন বাড়ানোর কাঠামোও সম্পূর্ণ করা উচিত। তাদের বেতন ভাগাভাগি সম্পর্কিত বিষয়ের ওপর তদারকি জোরদার করা উচিত।

অন্য দিকে, সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করা উচিত। নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিকদের নানা ধরনের বিমায় যোগ দেয়ার জন্য উত্সাহ দেয়া উচিত। নানা ধরনের বিমায় তাদের অংশ গ্রহণের জন্য বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তাদের সুবিধা দিতে হবে। যাতে ব্যাপক কৃষক শ্রমিক সমাজ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উপকৃত হয়।

সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিকদের জন্য নানা ধরনের পেশাদার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া। কারণ নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিকদের মধ্যে বেশির ভাগ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষা গ্রহণ করলেও তাদের পেশাদারী দক্ষতা কম। সুতরাং তাদের জন্য নানা ধরনের পেশাদারঈ প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নইলে তারা কঠিন প্রতিযোগিতায় হারবেই। জরিপে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিকদের জন্য নানা ধরনের পেশাদারী প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। অনেক কৃষক শ্রমিকের দক্ষতা উন্নত হয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ নয়। কোন কোন জায়গায় বা কোন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান এ দিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। সুতরাং ভবিষ্যতে এ ক্ষেত্রে আরও অনেক কিছু করার আছে।

সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে বলা হয়েছে, শহরের স্থায়ী অধিবাসি কাঠামোর সংস্কার করা উচিত। ভবিষ্যতে নব প্রজন্মের কৃষক শ্রমিকদের জন্য শহরে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ দেয়া উচিত। তাদের শহরের স্থায়ী অধিবাসি হওয়ার অধিকার থাকা উচিত। তাদের শহরবাসিদের মতো শহরের নানা ধরনের কল্যাণ উপভোগ করার অধিকার থাকা উচিত।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040