Web bengali.cri.cn   
দু'দিক থেকে জি ডি পি'র মোট পরিমাণ বিশ্বের দ্বিতীয় হিসেবে থাকুক
  2011-04-07 09:42:17  cri
সম্প্রতি জাপানের মন্ত্রীসভার উপাত্তে দেখা গেছে, ২০১০ সালে জাপানের জি ডি পি’র মোটমূল্য ৫.৪৭৪২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে, যা চীনের জি ডি পি’র তুলনায় ৪০ হাজার ৪৪০ কোটি মার্কিন ডলার কম। এখন যুক্তরাষ্ট্রের পর চীনের স্থান দ্বিতীয়। এ খবর প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনের জি ডি পি বিশ্বের বিভিন্ন তথ্যমাধ্যমের আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন তথ্যমাধ্যম ভিন্ন ধারণা প্রকাশ করেছে। বৃটেনের ‘ ফাইনানশিয়াল টাইমস’ পত্রিকার এক ভাষ্যে বলা হয়েছে, চীনের জি ডি পি জাপানের জি ডি পিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনা নয়। কিন্তু যখন এই বাস্তবতা বাস্তবায়িত হয় তখন বিশ্ব সম্প্রদায় সত্যিই বিস্ময় বোধ করে। এখন থেকে বিশ্ব সম্প্রদায়কে চীনের দিকে নতুন করে তাকাতে হবে। এর পাশাপাশি বিশ্ব সম্প্রদায়কে নতুন পদ্ধতিতে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। বাস্তবে চীনের জি ডি পি বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে উন্নিত হওয়ার পর কেবল বিশ্ব সমাজ নতুন করে চীনকে উপলব্ধি করবে তাই নয় চীনকে নিজের উন্নয়নের দিকটিও নিষ্ঠার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। এ খবরের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া জটিল । আসলে এ পরিবর্তন সাধারণ ব্যাপার নয় বরং তার সারর্গভ তাত্পর্য রয়েছে । পিপলস ডেইলির এক ভাষ্যে মনে করা হয়, দু’দিক থেকে এই পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। সাফল্যের দিকটি লক্ষ্য করার পাশাপাশি সমস্যাকেও দেখতে হবে এবং আশা করার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জকেও মোকাবিলা করতে হবে। অহংকার করা ঠিক নয়, আবার নিজেকে অবজ্ঞার চোখে দেখাও ঠিক নয়। এদিকে চীনের জি ডি পি জাপানের জি ডি পিকে ছাড়িয়ে যাওয়া থেকে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, বিশ্বে চীনের অর্থনীতির অবস্থান উন্নত হয়েছে। ১৯৬৮ সালে জাপানের জি ডি পি তখনকার ফেডারেল জার্মানির জি ডি পিকে ছাড়িয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় হিসেবে নির্ধারিত হয়। এবার চীনের জি ডি পি জাপানের জি ডি পিকে ছাড়িয়ে যাওয়াটাও একটি মাইলফলক তাত্পর্যসম্পন্ন। এ সাফল্য অর্জনের জন্য গত কয়েক দশক ধরে চীনা জনগণ অফুরন্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। বিশেষ করে গত ৩০ বছরে অর্থাত চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি চালু হওয়ার পর চীনের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছে। ২০০০ সালে চীনের অর্থনীতির ব্যাপকতা ছিল মাত্র জাপানের চার ভাগের এক ভাগ। তখন বিশ্ব সম্প্রদায় মনে করতো চীনের জি ডি পি জাপানের জি ডি পিকে ছাড়িয়ে যেতে কমপক্ষে ২৫ বছর লাগবে। কিন্তু মাত্র দশ বছর পরই চীন জাপানকে ছাড়িয়ে গেছে। গত ৩০ বছরে চীনের জি ডি পি’র গড় বৃদ্ধিহার হয়েছে ৯.৮ শতাংশ যা একই সময়ের তুলনায় বিশ্ব অর্থনীতির বার্ষিক বৃদ্ধি হারের দ্বিগুণের বেশি। ১৩৪ কোটি লোকসংখ্যার একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্ব অর্থনীতির তালিকায় চীনের প্রতিবারের পরিবর্তন বিস্ময়কর । অন্য দিকে যদি আমরা শান্তভাবে চিন্তাভাবনা করি তাহলে আমরা বুঝতে পারি যে, ‘বিশ্বের দ্বিতীয়’ অহংকার হওয়া কোন ব্যাপার নয়। কেবল জি ডি পি’র ক্ষেত্রে চীন জাপানকে ছাড়িয়ে গেছে তার অর্থ এই নয় যে, চীন বিভিন্ন দিক থেকে জাপানকে ছাড়িয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে জাপানের তুলনায় চীন এখনও পিছিয়ে পড়ে আছে। ২০১০ সালে বিশ্ব তহবিলের প্রকাশিত একটি উপাত্তে দেখা গেছে, ২০০৯ সালে চীনের মাথাপিছু জি ডি পি ছিল ৩৫৬৬ মার্কিন ডলার। জাপানের মাথাপিছু জি ডি পি ছিল ৩৯৫৭৩ মার্কিন ডলার। সুতরাং জাপানের মাথাপিছু জি ডি পি ছিল চীনের জি ডি পি’র দশ গুণেরও বেশি। দু’দেশের মধ্যে ব্যবধান খুব ষ্পষ্ট। সমান ক্রয় ক্ষমতার অবস্থায় জাপানের মাথাপিছু আয় চীনের মাথাপিছু আয়ের পাঁচ গুণ। চীনের উত্পাদন কাঠামো লক্ষ্যণীয়ভাবে জাপানের পিছনে পড়ে গেছে। তা ছাড়া, উদ্ভাবন ও গবেষণার সামর্থ্য , শ্রমশক্তির সার্বিক গুণগতমান ও জ্বালানি ব্যয়ের মানসহ অনেক ক্ষেত্রে জাপানের তুলনায় চীনের ব্যবধান ষ্পস্ট। চীনের উন্নয়নের পক্ষে জি ডি পি’র মোটমূল্য বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে পৌছানো একটি সহজ কাজ নয়। এটা হল দীর্ধকাল ধরে চীনা জনগণের অফুরন্ত প্রচেষ্টার ফলাফল । বতর্মানে চীনের অর্থনীতি উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত জ্বালানী ব্যয় ও ভীষণ বিষাক্ত গ্যাস নি:সরণ এড়ানো হয়নি। সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখাপাত্র মা চাও সুই বলেছেন, জি ডি পি একটি দেশের অর্থনীতির শক্তি নির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ মানদন্ড, কিন্তু একমাত্র মানদন্ড নয়। চীনের লোকসংখ্যা ১৩৪ কোটি। বিশ্ব তহবিল সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উপাত্ত অনুযায়ি, চীনের মাথাপিছু জি ডি পি বিশ্বের তালিকার স্থান এক শোটির কাছাকাছি। যদি প্রতি দিন প্রত্যেকটি মানুষ হাতে এক ডলার আয় করে থাকে তাহলে চীনে এখনও ১৫ কোটি দরিদ্র লোক রয়েছে। চীনের উন্নয়নে ভারসাম্যহীন ও টেকসইহীন সমস্যা প্রকট। চীন এখন একটি অন্যতম উন্নয়নশীল দেশ। চীন আগামী বেশ কয়েক বছরের মধ্যে সমাজতন্ত্রের প্রথম পর্যায়ে থাকবে। অনেক উপলক্ষ্যে চীনের নেতারা এভাবে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, যত বড় সংখ্যা ১৩৪ কোটি লোকসংখ্যাকে করা হলে একটি ছোট পরিসংখ্যান হয়ে যাবে। যত ছোট সমস্যা ১৩০ কোটি লোকসংখ্যাকে যোগ করা হলে বড় হয়ে যাবে। চীনের জি ডি পি ও উন্নয়নের প্রতি একই মন্তব্য তুলে ধরা উচিত। যদি চীনের ইতিহাস একটু পিছিয়ে এবং জি ডি পিকে চীনের নিয়তির সঙ্গে সংযোগের বিষয়টি অনুসন্ধ্যান করি তাহলে আমরা দেখতে পারি, একটি দেশ শক্তিশালী কি না তাতে জি ডি পি’র অবস্থানে কিছু যায় আসে না। একটি দেশের উত্থান বা পতন সেই দেশের উন্নয়নের কক্ষপথের ওপর নির্ভর করে থাকে। যেমন ধরুন, ১৮৪০ সালে অফিম যুদ্ধের সময় চীনের জি ডি পি বিশ্বের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অধিকার করত। জি ডি পি’র মোটমূল্য বিশ্বের প্রথম ছিল। কিন্তু তখন চীনের মাথাপিছু জি ডি পি মাত্র বৃটেনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ । একটি রুদ্ধদ্বার দেশ হিসেবে অর্থনীতির মোট পরিমাণ যতই বেশী হোক না কেন একটি শক্তিশালী দেশ তাতে বাস্তবায়িত হতে পারে না । সুতরাং পাশ্চাত্য দেশগুলোর কামানের সামনে চীনের ছিং রাজবংশের সর্বনাশ ঘটে। ১৭০ বছর পর চীনে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে। অজস্র পরিশ্রমের পর চীন এখন আবার বিশ্বের অর্থনীতির মঞ্চে ফিরে এসেছে। আজকের চীন একটি সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের দেশ , একটি সভ্য ও আধুনিক দেশ। চীনা জাতির আবার শক্তিশালী হওয়ার যুগ ঘনিয়ে আসছে। এর পাশাপাশি উন্নয়নের পথে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জও বিরাজ করছে । এক কথায় একটি শক্তিশালি দেশ হতে আরও অনেক কিছু করার আছে। চীনা জনগণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে ।
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040