Web bengali.cri.cn   
জনসাধারণের আয় বৃদ্ধি ও অর্থনীতির উন্নয়ন একই সাথে বাস্তবায়িত হওয়া উচিত
  2011-03-17 10:29:26  cri
সদ্য সমাপ্ত চীনের একাদশ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের চতুর্থ অধিবেশনে প্রথম বারের মতো এই ধারণা উত্থাপন করা হয়েছে যে, 'জনসাধারণের আয় বৃদ্ধি ও অর্থনীতির উন্নয়ন একই সাথে বাস্তবায়িত হওয়া উচিত'। দ্বাদশ পাঁচশালা পরিকল্পনার গোড়ার দিকে কীভাবে এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে পারে তা এবারের অধিবেশনে একটি আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়।

মি. চিয়াং কয়েক বছর আগে তার জন্মস্থান হোপেই থেকে পেইচিংয়ে ব্যবসা করতে আসেন। তিনি পেইচিংয়ের একটি আবাসিক এলাকায় হোপেইয়ের স্থানীয় খাবার বানিয়ে বিক্রি করেন। তিনি বলেন,

'পেইচিংয়ে আমার তিন বছর হয়ে গেছে। ব্যবসা মোটামুটি ভালো চলছে। তিন বছরে আমার আয় প্রায় একই। আমার ব্যবসার মুনাফা খুব বেশি নয়। পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটানোর পর আমার বার্ষিক আয় ১৬ হাজার ইউয়ানের মতো দাঁড়ায়।'

মি. লি পেইচিংয়ের একটি আইটি কোম্পানিতে কাজ করেন। মি. চিয়াংয়ের তুলনায় তার অবস্থা অনেক ভাল। তিনি বলেন,

'আমার বার্ষিক আয় প্রায় ৩ লাখ রেন মিন পি। বছর শেষে পাই বার্ষিক পুরস্কার। কোনো কোনো উত্সব উপলক্ষ্যে কোম্পানি কর্মীদেরকে কমপক্ষে এক হাজার ইউয়ানের বোনাস দেয়। সব মিলে বার্ষিক আয় ৩ লাখের মতো।'

চীনাদের আয় সম্পর্কে বলতে গেলে গত ৩০ বছরের কথা উল্লেখ করতে হবে। ৩০ বছর আগে চীনের বার্ষিক মাথাপিছু দেশজ উত্পাদন ছিল ৪০০ মার্কিন ডলারেরও কম। চীন বিশ্বের গরীব দেশগুলোর অন্যতম ছিল। কিন্তু গত ৩০ বছরে অর্থাত সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি চালু হওয়ার পর অর্থনীতি দ্রুত বিকশিত হয়েছে। বতর্মানে বার্ষিক মাথাপিছু দেশজ উত্পাদন ৪,০০০ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। তবে বিশ্বের তলিকায় চীন এখনও অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ভোগী দেশের সারিতে রয়েছে। মাথাপিছু দেশজ উত্পাদন তালিকায় বিশ্বে চীনের অবস্থান একশ'র কাছাকাছি। অন্যদিকে ২০১০ সালে চীনের মোট দেশজ উত্পাদন বা জিডিপি ৫.৮৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়। এখন চীনের জিডিপি জাপানের জিডিপিকে ছাড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর এখন চীনের স্থান দ্বিতীয়। ২০১০ সালে চীনের আর্থিক আয় ছিল প্রায় ৮.৩ ট্রিলিয়ান রেন মিন পি।

পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, চীন আগের চাইতে অনেক ধনী হয়ে উঠেছে। কিন্তু জনসাধারণের জীবিকার উন্নয়ন ও আয় বন্টনসহ নানা ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা বিরাজ করছে। এ ক্ষেত্রে অবস্থা এখন কী রকম সে প্রসঙ্গে চীনের সমাজবিজ্ঞান একাডেমির অর্থনীতি গবেষণালয়ের গবেষক ইয়াং গান বলেন,

মৌলিকভাবে বলতে গেলে, এ সব সমস্যা আমাদের অযৌক্তিক আয় বন্টনের সঙ্গে সম্পর্কিত। অবশ্যই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের অভিজ্ঞতার অভাবও এর জন্য দায়ী। সংস্কারের গোড়াতে বন্টনে সমতা ভেঙ্গে দেয়ার জন্য আমরা পরিশ্রমী লোকদের পুরস্কার দেয়া ও অলস লোকদের শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। যার ফলে আয় বন্টনে ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া, চীনের ভিন্ন জায়গায় লোকজনের আয়ও ভিন্ন। এক কথায় বতর্মানে চীনে আয় বন্টন ক্ষেত্রে বড় ব্যবধান বিরাজ করছে। এই ব্যবধান ঘুচানোর জন্য আমাদের অনেক কিছু করার আছে।'

চীনের রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের চেয়ারম্যান চিয়া ছিং লিন তার কার্যবিবরণীতে বলেন, আয় বন্টনের ব্যবধান সমাজের স্থিতিশীলতার সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। অন্যদিকে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও তাঁর সরকারি কার্যবিবরণীতে স্পষ্টভাবে আগামী পাঁচ বছরে জনসাধারণের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেন,

আগামী পাঁচ বছরে চীনের অর্থনীতির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হার ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলের জনসাধারণের মাথাপিছু আয় গড়ে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। জাতীয় আয় বন্টনে জনসাধারণের আয়ের অনুপাত ধাপে ধাপে বাড়বে।

প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও উত্থাপিত সরকারি কার্যবিবরণীতে উল্লেখিত আয় বন্টন প্রসঙ্গে চীনের একাদশ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের অর্থনীতি কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান লি ডে শিয়ে বলেন

''এখানে আমার একটা প্রস্তাব আছে। আমার মনে হয়, জনসাধারণের আয় বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন একই সময় বাস্তবায়িত হওয়া উচিত। ভবিষ্যতে মাঝারি ও নিম্ন বেতনভোগীদের আয় বাড়াতে হবে।'

অযুক্তিযু্ক্ত আয় বন্টন মোকাবিলার জন্য চীনের সমাজবিজ্ঞান একাডেমির অর্থনীতি গবেষণালয়ের গবেষক উয়ান গান মিন বলেন,

'প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও তাঁর সরকারি কার্যবিবরণীতে এ সমস্যা সমাধানের জন্য তিনটি পদক্ষেপ উল্লেখ করেছেন। প্রথম পদক্ষেপ হলো, প্রথম পর্যায়ের বন্টনে শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে হবে। দ্বিতীয় পদক্ষেপ হল, পুর্নবন্টন ক্ষেত্রের সমস্যার সমাধান করতে হবে। অর্থাত্ মাঝারি ও নিম্ন আয়ের মানুষদের ওপর বিশেষভাবে মনোযোগ দিতে হবে। তৃতীয় পদক্ষেপ হলো, অতি উঁচু আয় সীমিত করতে হবে এবং অবৈধ আয় বাতিল করতে হবে।'

আয় পুনবিন্যাসের পদক্ষেপে জনসাধারণের মনোযোগের বিষয় হলো কর আদায়ের হার। হান ভাষা শিক্ষায় নিয়োজিত মিস ছেন মনে করেন, মাসিক আয় ৫০০০ ইউয়ান থেকে করারোপ করা উচিত। তিনি আশা করেন, তাঁর আয় আরও বেশি বাড়বে। তিনি বলেন,

'আমি আমার বতর্মান বেতনে অসন্তষ্ট। অবশ্যই আমি আশা করি, আমার বেতন শিগগিরই বাড়বে। আমার আশা হলো, মাসে আমার বেতন ৭ থেকে ৮ হাজার হবে।'

মিস ছেনের আশা আসলে অনেক কর্মচারীর আশা। চীনের উপ-অর্থমন্ত্রী লি ইয়ং সম্প্রতি বলেন, নিম্ন বেতনভোগীদের কাছ থেকে কর আদায় করা হবে না, বরং তাদের প্রাথমিক জীবনযাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বছর ব্যক্তি আয়করের সংস্কার শুরু হবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040