Web bengali.cri.cn   
তেলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে দোটানায় ওপেক
  2010-10-21 19:37:56  cri

বিশ্বের প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ডলারের মূল্যমান কমে যাওয়া এবং অর্থনৈতিক মন্দা-পরবর্তী বিশ্বে জ্বালানি চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্ববাজারে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১৫ ডলার পর্যন্ত বেড়ে গেছে। গত বছর ও চলতি বছরের শুরুতে এক ব্যারেল তেলের দাম যেখানে ৭০ থেকে ৮০ ডলারের মধ্যে ছিল, সেখানে গত কয়েক মাসে এর দাম ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু এ দাম বৃদ্ধিতে সন্তুষ্ট নয় বেশির ভাগ তেল রপ্তানিকারক দেশ। তারা এখন চাইছে তেলের দাম আরেক দফা বাড়িয়ে দিতে। তাদের যুক্তি হল ডলারের দাম কমে যাওয়া এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম বাড়ায় তেল রপ্তানি থেকে দেশগুলোর প্রকৃত আয় অনেক কমে গেছে। তবে বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি সংকট থেকে পুনরুদ্ধারের যে প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে চলছে তেলের দাম বৃদ্ধি তাকে ব্যাহত করতে পারে এ আশংকায় গুটি কয়েক দেশ এ মুহূর্তে তেলের দাম বাড়ানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এর ফলে দাম বৃদ্ধি নিয়ে দোটানায় পড়েছে তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট অরগাইনাজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিস (ওপেক), যারা সম্মিলিতভাবে উত্পাদন করে পৃথিবীর ৪০ শতাংশ তেল।

গত সপ্তাহে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ওপেকের মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে এ নিয়ে যুক্তিতর্ক পেশ করা হয়। ওই বৈঠকে আলজেরিয়া, লিবিয়া ও ভেনিজুয়েলা অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯০ থেকে ১০০ ডলারের মধ্যে রাখার পক্ষে মত দেয়। তেলের দাম বাড়ানোর পক্ষে নিজের মতামত ব্যক্ত করে ওপেকে লিবিয়ার প্রতিনিধি সুকরি ঘানেম বৈঠকে বলেন, "অপিরশোধিত তেলের দাম বাড়াতে চাওয়ার মূল কারণ পণ্য মূল্যস্ফীতি। বিশেষত খাদ্যপণ্য মূল্য ও গমের দাম বিশ্ববাজারে চড়া হচ্ছে। তাছাড়া ডলারের মূল্যমানও পড়তির দিকে। ফলে ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত তেলের প্রকৃত দাম হওয়া উচিত ১০০ ডলারের ওপর। কেননা, মূল্য কম থাকায় আমরা প্রকৃত আয়ের চেয়ে কম আয় করছি।"

তবে ওপেকের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব মন্দা থেকে বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার স্বার্থে অপরিশোধিত তেলের বর্তমান বাজার মূল্যই বহাল রাখার পক্ষে বৈঠকে রায় দেয়।

অবশ্য ওই বৈঠকে তেলের মূল্যবৃদ্ধির পক্ষ অবলম্বনকারীরা যে যুক্তি তুলে ধরেন তাকে যথাযথ বলেই মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, বিশ্বের প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ডলারের মূল্যমান পড়ে যাওয়া, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃক নতুন করে আরো ডলার বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় অপরিশোধিত তেল রপ্তানির ক্ষেত্রে ওপেকভুক্ত দেশগুলোর প্রকৃত আয় অনেকাংশেই কমে গেছে।

এ প্রসঙ্গে বিনিয়োগ সংস্থা ভিটিপি ক্যাপিটালের অর্থনীতিবিদ নেইল ম্যাককিনন বলেন, "ওপেক দেশগুলো এক ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েছে। ডলারের মূল্যমান পড়ে যাওয়ায় একদিকে তাঁরা প্রকৃত আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, আবার বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার গতি কমে যাবে বলে তেলের দাম বাড়াতেও পারছেন না।"

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেল দাম আসলে ডলার-নির্ভর। ফলে ডলারের মূল্যমান পড়ে গেলে তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর আয়ও কমে যায়।

তবে ভিয়েনার ওই বৈঠকে তেল উত্পাদনের পরিমাণ নিয়ে একমত হন ওপেক নেতারা। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে, প্রতিদিন দুই কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল তেল উত্পাদনে ২০০৯ সালের শুরুতে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা অপরিবর্তিত থাকবে। বিশ্বব্যাপী চাহিদা বাড়লেও উত্পাদন অপরিবর্তিত রাখার পেছনে তাদের যুক্তি হল, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদার বিপরীতে তেল সরবরাহ যথেষ্ট পরিমাণেই রয়েছে।

তবে দ্বিধাদ্বন্দ্বের কারণে এ মুহূর্তে দাম না বাড়লে অচিরেই যে তেলের দাম বাড়বে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই বিশ্লেকদের। (শিয়াবুর রহমান)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040