|
তবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। চলতি বছর যে পুনরুদ্ধার প্রবণতা চলছে তা অব্যাহত থাকার বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করে আইএমএফ বলেছে, আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ২ শতাংশে কমে যেতে পারে।
আইএমএফের পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছর উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর সমন্বিত প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ১০ শতাংশ হবে, যা আগামী বছর কমে ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ হতে পারে। অন্যদিকে উন্নত বিশ্বের ক্ষেত্রে এই হার প্রাক্কলন করা হয়েছে যথাক্রমে ২ দশমিক ৭০ শতাংশ ও ২ দশমিক ২০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী বছর দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও চীনের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ৮ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের মতো এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এশিয়ার অপর অর্থনৈতিক পরাশক্তি জাপানের প্রবৃদ্ধির মাত্রা আগামী বছর মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে আইএমএফের ধারণা।
তবে সর্বশেষ প্রতিবেদনে আইএমএফ আরেক দফা মন্দার কোনো আশঙ্কা করেনি, যাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন অনেক বিশ্লেষক; যদিও সার্বিকভাবে আইএমএফ যে উদ্বিগ্ন তার একটা স্পষ্ট প্রতিফলন রয়েছে এই প্রতিবেদনে।
তবে অনেকে মনে করছেন, প্রতিষ্ঠানটি অতিমাত্রায় উদ্বিগ্ন, যার তেমন কোনো ভিত্তি নেই। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সুদের হার নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে, বাজেট ঘাটতি চাহিদা বাড়াতে সহায়তা করছে, এবং সরকারগুলোও প্রণোদনার জন্য আরেক দফা অর্থ খরচ করতে প্রস্তুত রয়েছে।
অন্যদিকে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো মন্দার সময় বিপুল পরিমাণ কর্মী ছাঁটাই করেছিল এবং মজুরি কমিয়েছিল। ফলে এখন তাদের হাতেও প্রচুর অর্থ থাকার। সুতরাং, উদ্বিগ্ন হওয়ার তেমন প্রয়োজন নেই।
তবে আইএমএফ উদ্বিগ্ন মূলত দুটি কারণে। প্রথমত, পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোতে বেসরকারি খাত এখনো বেশ দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। তারা ভোগ-চাহিদা যথেষ্ট শক্তিশালী না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ব্যয় করতে রাজি নয়। অথচ গণব্যয় কমিয়ে ও কর বাড়িয়ে বিরাট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকারি প্রয়াস এগিয়ে নিতে হলে বেসরকারি খাতকে সক্রিয় করা দরকার। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন রপ্তানি বাড়ানো। আর এখানেই রয়েছে দ্বিতীয় সমস্যাটি। যেসব দেশে পণ্য রপ্তানি করা যেতে পারে, সেখানে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে রয়েছে বড় ধরনের উদ্বৃত্ত। চীন, জাপান, জার্মানিসহ তেল উত্পাদনকারী দেশগুলো অধিকতর আমদানি করে এই উদ্বৃত্তাবস্থা কমিয়ে আনতে তেমন আগ্রহী নয়। এ জন্য তাদের তেমন চাপ দেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।
আইএমএফ মনে করছে, বিশ্বমন্দার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক শক্তির ভারসাম্য পশ্চিম থেকে পুবের দিকে স্থানান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াটি জোরালো হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে আইএমএফ ভারসাম্যহীনতা বলে দেখছে। তবে পাশাপাশি এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি যে, পশ্চিমা উন্নত অর্থনীতিগুলোয় নতুনভাবে যে দুর্বলতা দেখা দিয়েছে, তা আবার এশিয়াসহ উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |