|
এবারের ফোরামের প্রতিপাদ্য ছিল 'টেকসই প্রবৃদ্ধির ত্বরান্বিতকরণ'। চীন আর চীনের পরিচালিত অর্থনীতির রূপান্তর হলো এবারের ফোরামের একটি উল্লেখযোগ্য আলোচ্য বিষয়। তিনদিনব্যাপী ফোরামে 'চীনে বহুজাতিক কোম্পানী', 'চীনের স্বয়ংক্রিয় উদ্ভাবন' ও 'চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রাধান্য পুনরায় বিবেচনা করা'সহ বহু বিশেষ সেমিনারে চীনকে কেন্দ্র করে আলোচনা হয়েছে। সম্মেলনে উপস্থিত বহুজাতিক কোম্পানীর উর্ধতন ব্যবস্থাপক আর সরকারী কর্মকর্তারা মনে করেন, পরবর্তীকালে চীন বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণচঞ্চল অঞ্চলের অন্যতম হবে। জার্মান মেট্রো গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একহার্দ কোর্দেস বলেন, বিশ্বের তৃতীয় খুচরা-বিক্রি শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে চীনে তাদের গোষ্ঠী অব্যাহতভাবে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করে যাবে। তিনি বলেন, 'আমি চীনে কয়েক শ'বার এসেছি। সবার মতোই যে দিকটি আমার চোখে পড়ে, তা আমাকে সঞ্চারিত করে। আমরা ১৯৯৬ সালে চীনে প্রবেশ করি। এ বছরের শেষ দিক পর্যন্ত চীনে আমাদের পঞ্চাশটি শাখা কেন্দ্র হবে। এ বছর আমরা শাংহাইয়ে প্রথম ইলেকট্রোনিক পণ্য বিক্রি দোকান খুলবো। আমি আর ডিরেক্টর বোর্ডের সদস্যরা সবাই চীনের ভবিষ্যতের ব্যাপারে আস্থাবান।'
অর্থনৈতিক সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত আইসল্যান্ডের শিল্পপ্রতিষ্ঠান চীনে নতুন সুযোগ খুঁজে পেয়েছে। আইসল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ওলাফুর রাগনার ক্রিমসন দাভোষ ফোরাম চলাকালে বিশেষ করে দু'দেশের সহযোগিতা সংক্রান্ত ফলপ্রসু প্রকল্পের কথা জানিয়ে দেয়ার জন্য এক প্রেস ব্রিফিং করেছেন। তিনি বলেন, 'আমার দেশ আইসল্যান্ড সুদূরের একটি ছোট দেশ। আমরা চীনের কাছ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনেক আন্তর্জাতিক ব্যাপারে সহযোগিতা পাচ্ছি। যেমন দূষণমুক্ত জ্বালানি ও ভূমিকম্পকালীন তত্ত্বাবধানসহ নানা ক্ষেত্রের সক্রিয় সহযোগিতা বিদ্যমান রয়েছে। আমরা একটি নতুন ও পরিবর্তনশীল দেশে আছি।'
এ বছর চীন সরকার বিদেশী পুঁজি ব্যবহার সম্পর্কিত একটি নির্দেশনামূলক দলিল প্রকাশ করেছে। এ দলিলে স্পষ্টভাবে লেখা হয়েছে, উন্মুক্তকরণের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করতে হবে। বিদেশি পুঁজি জ্বালানি সাশ্রয়, পরিবেশ সুরক্ষা ও নতুন প্রজন্মের তথ্য প্রযুক্তিসহ নানা কৌশলগত নবোদিত শিল্পে উত্সাহ দেয়া হবে। এর পাশাপাশি চীনের উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে অব্যাহতভাবে বেশি জ্বালানি ব্যয়, বেশি দূষণ সৃষ্টি এবং নিম্ন শ্রেণীর প্রকল্প গুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধতা দেখা দেবে।
একটি উত্পাদনশীল বড় দেশ চীন তার উদ্ভাবিত দেশে রুপান্তর করার প্রক্রিয়ায় চীনের বিদেশি পুঁজি আকর্ষণের নীতির ওপর বিদেশের উদ্বেগ ছিলো। এবারের গ্রীষ্মকালীন দোভাস ফোরামে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও শিল্পপতিদের সংগে আলোচনার সময় বলেছেন, সম্প্রতি চীনের স্বয়ং উদ্ভাবন আর মেধাস্বত্ব নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। এটা কেবল বিদেশী কোম্পানির ভুল বুঝাবুঝি তা নয়, বরং সংশ্লিষ্ট নীতির অস্পষ্টতাও বটে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, চীন বরাবরই বিদেশী ব্যবাসয়ীদের বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত ও ন্যায়সংগত পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের ওপর খুব গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেন, 'চীনের আইন অনুযায়ী চীনে নিবন্ধিত সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তাদের উত্পাদিত পণ্য সবই চীনের তৈরি। চীনে নিবন্ধিত বিদেশি পুঁজির শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সবই চীনের নাগরিকের সুযোগসুবিধা উপভোগ করে। এর পাশাপাশি চীন সরকারী ক্রয়ে পণ্যক্রয়ের ক্ষেত্র চীনে বিদেশী পুঁজি বিনিয়োজিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উত্পাদিত পণ্যের সমতা ভিত্তিক ব্যবস্থা করে দেয়।'
ওয়েন চিয়া পাওয়ের কথা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়ে দিয়েছে। বোস্টন পরামর্শ কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার চিন ওয়েই তোং বলেন, 'চীনের গত কয়েক বছরের আর ভবিষ্যতে অর্থনীতির সম্মুখীন সুযোগ ও চ্যালেন্জ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ওয়েনের বিশ্লেষণ খুবই পরিষ্কার। আমাদের খরিদ্দার চীনের বাজারের প্রতি খুব আস্থাবান। পরবর্তী দীর্ঘদিনে চীনের বাজার বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে।'
পরিসংখ্যান থেকে চিন ওয়েই তোংয়ের কথা প্রমান করেছে। বিশ্বের ৫০০টি সেরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৪৭০টির চীনে শাখা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত চীনে মোট ১.০৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশী পুঁজি আকর্ষিত হয়েছে। টানা ১৮ বছর ধরে উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে তা প্রথম স্থানে রয়েছে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |