Web bengali.cri.cn   
ই-কমার্সের পথে বাংলাদেশের এক পা
  2010-09-16 20:51:16  cri
বাংলাদেশের অনেকগুলো ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবা চালু করেছে। এই সেবা পরিচালনার জন্য তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক মাস্টার কার্ড ও ভিসা কার্ড কম্পানির মাধ্যমে লেনদেন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এ দুটো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় দেশের বাইরে তো বটেই, দেশের ভিতরে লেনদেনের ক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলোকে ঊচ্চ হারে ফি পরিশোধ করতে হয়, যার চাপ আসলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের ওপরই বর্তায়। বিদেশী প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ডগুলোর লেনদেন হয় বলে দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এর খতিয়ান যেমন থাকে না তেমনি সেগুলোর ব্যবহারের ক্ষেত্রও থাকে অনেক সীমিত।

স্বল্প ব্যয়ে ও নিরাপদে ক্রেডিট কার্ডের বহুমুখী ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করতে এবং সেগুলোর লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণের জন্য দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী বছরের মধ্যে একটি নিজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলা উদ্যোগ নিয়েছে। ন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ে, বা জাতীয় লেনদেন দ্বার, নামের এ ব্যবস্থা চালু হলে ব্যাংক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি লেনদেন নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। এটি ই-কমার্স ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য একটা মাইলফলক।

বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পের জন্য দরপত্র আহ্বানের অনুমতি দিয়েছে এবং শিগগির বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান এ সম্পর্কে বাংলাদেশের একটি সংবাদপত্রকে বলেন, "সম্প্রতি আমরা বিশ্বব্যাংকের অনাপত্তিপত্র পেয়েছি। শিগগিরই বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে।"

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নাজনীন সুলতানা জানান, চুক্তি সম্পন্ন হলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করবে। তিনি আশা করেন, আগামী বছরের শেষ নাগাদ ন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ে চালু হয়ে যাবে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ পদ্ধতির কাজ সম্পন্ন করলেও এর সাফল্য নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের মধ্যে। এ সংশয়ের কারণ হল একটি বাদে কোন ব্যাংকই নিজস্ব নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করে তার শাখাগুলোর মধ্যে অনলাইন লেনদেন ব্যবস্থা এখনো চালু করেনি। এ বাস্তবতাকে কবুল করে নাজনীন সুলতানা বলেন, ন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ে পদ্ধতি চালু হলেও সব ব্যাংক এর সঙ্গে যুক্ত না হলে ই-কমার্সের সম্পূর্ণ সুফল পাওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, "তাই ব্যাংকগুলো যাতে নিজস্ব অনলাইন লেনদেন ব্যবস্থা গড়ে তোলে সে জন্য ন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ের কাজ এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে আমরা উদ্বুদ্ধকরণের কাজও চালিয়ে যাব। তবে ব্যাংকগুলো নিজস্ব পেমেন্ট গেটওয়ে চালু না করলেও তাদের অনেকেই কিউ-ক্যাশের মতো নেটওয়ার্কের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে পেমেন্ট গেটওয়েতে যুক্ত করার মাধ্যমেও আমরা ব্যাংকগুলোকে যুক্ত করতে পারব।"

বাংলাদেশে ৪৭টি ব্যাংকের মধ্যে শুধু ডাচ্-বাংলা ব্যাংক নিজস্ব অনলাইন লেনদেন ব্যবস্থা চালু করেছে আর ব্র্যাক ব্যাংক শিগগিরই চালু করতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ে চালু করলে প্রাথমিক পর্যায়ে এ দুটি ব্যাংক ছাড়া বাকিগুলো যুক্ত হতে পারছে না।

গত জানুয়ারি মাসে ই-কমার্সের বিষয়ে দিকনির্দেশনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত ১১ সদস্যের ই-কমার্স অ্যান্ড ইন্টারনেট ব্যাংকিং সম্পর্কিত উপদেষ্টা কমিটি এর প্রতিবেদন দাখিল করে। উপদেষ্টা কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যেই ন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর কথা থাকলেও ব্যাংকগুলোর প্রস্তুতির অভাবে তা সম্ভব হয়নি। এখন ব্যাংকগুলোর দিকে তাকিয়ে না থেকে আগামী জুনেই তা চালুর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠিত উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মোস্তাফা জব্বার বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দাবি করা হচ্ছিল ডিজিটাল কমার্স চালু করার। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল কমার্স চালুর বিষয়ে উদ্যোগ নেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যেই ইলেকট্রনিক ট্রানজেকশনের আইনগত বাধা দূর করেছে।

ন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ের সুফল সম্পর্কে তিনি বলেন, "এ ব্যবস্থা চালু হলে ইন্টারনেটে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন সম্পন্ন করা যাবে। এর মাধ্যমে প্রতিটি ব্যাংক অন্য ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত হবে। পরবর্তী সময়ে এই ব্যবস্থায় দেশীয় ব্যাংকগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যুক্ত হবে। ফলে ব্যাংকগুলোর ব্যয়ও অনেকাংশে কমে আসবে। এ ছাড়া একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও প্রতিটি লেনদেনের হিসাব রাখা সহজ হবে।"

জানা গেছে, পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে যেকোনো সময় যেকোনো অবস্থান থেকে ওয়েবসাইট বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় অথবা টাকা লেনদেন করা করা সম্ভব হবে। এমনকি বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল ও আয়কর পরিশোধ করা, ট্রেন ও বাসের টিকিট কেনা অথবা অন্য কোনো ব্যক্তির একাউন্টে টাকা পাঠানো সম্ভব হবে ওয়েবসাইট কিংবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। আর এর মধ্যদিয়ে লেনদেন প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অনেক কমবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ অত্যন্ত সময়োপযোগী উদ্যোগটি নিলেও এর সাফল্য এবং গ্রাহকদের এ সুবিধাগুলো পাওয়া না পাওয়া এখন নির্ভর করছে ব্যাংকগুলোর সদিচ্ছার ওপর। (শিয়াবুর রহমান)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040