|
প্রতিবেদন প্রণয়নকারী সারাহ এলডার বলেন, আইএলওর তথ্য অনুযায়ী তরুণ বেকার কর্মীদের সংখ্যা এবং বেকারত্বের হার এবার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে এবং তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭ সালে বিশ্বমন্দার সময় সাত কোটি ৩০ লাখ তরুণ কাজ হারিয়ে বেকারত্বের তালিকায় যুক্ত হয়। ২০১১ সালে কর্মসংস্থান বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হলেও পরিণত বয়স্ক মানুষের জন্য তরুণরা বেকারই রয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করছে আইএলও।
আইএলও মহাপরিচালক হুয়ান সোমাভিয়া বলেন, তরুণরাই উন্নয়নের মূল শক্তি। তারা কাজের সুযোগ না পেলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাছাড়া সামাজিক নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে। সারাহ এলডার বলেন, কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তরুণরা শিক্ষা থেকে শুরু করে সবকিছু ঠিকঠাক করার পরও যখন দেখছেন তাদের জন্য কাজের কোনো সুযোগ নেই তখন তারা হতাশ হয়ে পড়ছেন।
বিগত দুই বছরে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের ফলে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম একটি 'হারানো প্রজন্মে' পরিণত হতে পারে বলে আশংকা করছে আইএলও। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "কাজ না পেয়ে বেকার তরুণরা হতাশ হয়ে কর্মসংস্থানের বাজার থেকেই একযোগে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে। সেক্ষেত্রে বর্তমান বেকার তরুণ প্রজন্ম রূপান্তরিত হতে পারে একটি হারানো প্রজন্মে।"
আইএলওর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ৯০ শতাংশ তরুণ কাজ করেন। এদের বেশির ভাগই দরিদ্র জীবনযাপন করেন এবং বিশ্বব্যাপী কর্মরত তরুণদের ২৮ শতাংশই কাজ করেও কখনো দারিদ্র্যের বলয় থেকে বের হতে পারেন না। প্রতিবেদনটি জানায়, অর্থনৈতিক মন্দাকালীন দুই বছরে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে তরুণদের বেকারত্ব বৃদ্ধির হার ছিল ৪৫ শতাংশ, যা বিশ্বের মোট তরুণ বেকার জনগোষ্ঠী বৃদ্ধির বিবেচনায় মাত্র ১০ শতাংশ।
তবে শ্রমিক অধিকার সংগঠন ওয়াকার্স ওয়ার্ল্ড মনে করে, আইএলও'র প্রতিবেদনে বেকারত্বের রেকর্ড হার দেখানো হলেও তরুণ শ্রমিকরা যে গণবেকারত্ব, স্বল্প মজুরী ও দারিদ্র মোকাবিলা করছে তার প্রকৃত চিত্র এতে উঠে আসেনি। এ সংস্থার ধারণা, বেকারের প্রকৃত সংখ্যা বা বেকারত্বের হার প্রতিবেদনে উল্লেখিত হারের চেয়ে অনেক বেশি হবে।
ওয়াকার্স ওয়ার্ল্ডের ভাষ্য হলো, চাহিদার তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ কম থাকায় তরুণ শ্রমিকরা অপেক্ষাকৃত কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হন। তারা মজুরি ছাড়া অন্য কোন সুযোগ-সুবিধা পান না এবং তাদের চাকরির নিরাপত্তাও থাকেনা। এর ফলে তারা হতাশা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করেন। সংস্থার মতে, কাজে নিযুক্ত তরুণদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বা ১৫ কোটি ২০ লাখ দিনে ১.২৫ মার্কিন ডলারেরও কম আয় করেন এবং চরম দারিদ্রের মধ্যে বাস করেন।
আইএলওর প্রতিবেদনে তরুণ কর্মীদের কর্মসংস্থানের যে চিত্র উঠে এসেছে তা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বিশ্বনেতৃবৃন্দ ও অর্থশাস্ত্রবিদদের।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |