|
এশিয়ার ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণী হয়ে উঠবে ভবিষ্যত্ বিশ্ব-অর্থনীতির নির্ভরতার কেন্দ্র। হ্যাঁ এমন চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এডিবি পরিচালিত এক সমীক্ষায়। এ অঞ্চলের মধ্যবিত্তদের ওপর চালানো 'মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান' শীর্ষক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকলে আগামী দুই দশকে এশিয়ার আরো ৮০ কোটি মানুষ দরিদ্র অবস্থা থেকে মধ্যবিত্ত পর্যায়ে উঠে আসবে। এতে বলা হয়েছে, পশ্চিমা ধনী সমাজের অনেকগুলো লক্ষণই বহন করে এ অঞ্চলের মধ্যবিত্তরা।
ম্যানিলা-ভিত্তিক এ আঞ্চলিক ব্যাংকের সমীক্ষায় দেখা গেছে, এশিয়ার মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী সাধারণত শিক্ষাদীক্ষায় অন্যান্য শ্রেণীর চেয়ে এগিয়ে এবং শহরাঞ্চলকে কেন্দ করেই তারা বিকশিত হচ্ছে। তাদের সন্তানসংখ্যাও সীমিত এবং অন্যদের তুলনায় তারা প্রগতিশীল মূল্যবোধসম্পন্ন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অঞ্চলের মধ্যবিত্তদের সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন ও ভারতে। গবেষকরা অনুমান করছেন, ২০৩০ সালে এই দেশদুটিতে মধ্যবিত্তের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১০০ কোটিতে।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে মধ্যবিত্ত বলতে সেই জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে যাদের দৈনিক ভোগ ব্যয় ২ ডলার থেকে ২০ ডলারের মধ্যে। প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষেত্রে চীন ভারতের চেয়ে এখনও পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত বেশি সফল। ২০০৮ সালে চীনের মোট জনসংখ্যা ৬৩ শতাংশ, অর্থাত্ ৮১ কোটি ৭০ লাখ, দারিদ্র্য কাটিয়ে মধ্যবিত্ত পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। ওই বছর ভারতের মধ্যবিত্তের সংখ্যা ছিল ২৭ কোটি ৪০ লাখ বা দেশটির মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ।
তবে এ গবেষণায় উন্নত অর্থনীতির দেশ জাপান ও কোরিয়াকে বাদ দিয়ে কেবল অঞ্চলের উদীয়মান অর্থনীতিগুলোকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ জং হোয়া লি বলেন, সমীক্ষায় দেখা গেছে ২০৩০ সালে এশিয়ার জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত স্তরে উত্তরণ ঘটবে।
মধ্যবিত্তদের এমন বিকাশে সরকার ও প্রশাসনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করে এডিবি। প্রতিবেদনে বলা হয়, এতে করে সেবা ও স্বচ্ছতার জন্য সরকারের ওপর চাপ বাড়বে, যা প্রকৃত অর্থেই রাজনীতিতে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। আর এর মধ্যদিয়ে মধ্যবিত্তদের রাজনীতিতেও অংশগ্রহণও বাড়বে।
এডিবির ধারণা, ২০৩০ সাল নাগাদ এশিয়ার ভোগব্যয় বর্তমানের তুলনায় প্রায় সাড়ে ছয় গুণ বেড়ে যাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সালে এশিয়ার মোট ভোগব্যয় ছিল ৪ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার বা বিশ্বের মোট ভোগব্যয়ের ৪৩ শতাংশ। ২০৩০ সালে তা ৩২ ট্রিলিয়ন হবে বলে অনুমান করা হয়।
তবে ভোক্তাসংস্কৃতির এই সহসা বিস্ফোরণের কিছু নেতিবাচক প্রভাবও উঠে এসেছে এ সমীক্ষায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ওপর। পশ্চিমাদের মতো অতিভোজন প্রবণতা এবং ফাস্টফুড নির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ইতোমধ্যেই এ অঞ্চলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো রোগগুলো বাড়তে শুরু করেছে। এডিবির আশংকা, আগামী ২০-৩০ বছরে এ রোগগুলো আরো ব্যাপকভাবে বাড়বে। (সূত্র: এএফপি, সিনহুয়া)
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |