|
১৫ বছরের একটানা আলোচনার পর চীন ২০০১ সালে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার একজন আনুষ্ঠানিক সদস্যে পরিণত হয়েছে। নয় বছর ধরে চীন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নতুন সদস্য থেকে অবাধ বাণিজ্য ও বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থা জোরদার করার দৃঢ় সমর্থনকারীতে পরিণত হয়েছে। চীন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় প্রবেশের প্রতিশ্রুতি সার্বিকভাবে অনুসরণ করছে। আজকের চীনের অর্থনীতি অনুষ্ঠানে এ সম্পর্কে কিছু কথা বলবো।
সম্প্রতি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক পাস্কাল লামি হংকংয়ের ফিনিক্স টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে জানিয়েছেন, (১)
চীন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার ওপর খুবই গুরুত্ব দেয়। বর্তমানে চীন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চীন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় প্রবেশের প্রতিশ্রুতি অনুসরণ করেছে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববাণিজ্য বিভাগ ২৩ জুলাই প্রকাশিত এক তথ্যে জানিয়েছে, ২০১০ সাল পর্যন্ত চীন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় প্রবেশের সব প্রতিশ্রুতি সব সম্পন্ন করেছে। চীন বিধির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ আর্থ-বাণিজ্যিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। এর পাশাপাশি চীন বিশ্বের একটি সবচেয়ে উন্মুক্ত বাজারে পরিণত হয়েছে। বৈদেশিক আর্থ-বাণিজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থ-বাণিজ্য গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক হো ওয়ে ওয়েন আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, (২)
প্রথমতঃ কৃষিজাত দ্রব্য ক্ষেত্রে ২০১০ সালে চীনের গড়পরতা আমদানির শুল্ক ১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। কৃষিজাত দ্রব্য রপ্তানির ভর্তুকি বাতিলের ব্যাপার বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় প্রবেশের শুরুতেই চীন্ তা বাস্তবায়ন করেছে। গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে ২০০৫ সালে চীন সকল কোটা বাতিল করেছে। এর পাশাপাশি শুল্ক ৩০ শতাংশ হ্রাস করেছে। ২০০৬ সালে গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশের শুল্কও ১০ শতাংশ হ্রাস করেছে। এসব বিশ্ববাণিজ্য সংস্থাকে দেয়া তার প্রতিশ্রুতিও সম্পাদন করেছে।
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় প্রবেশের আগে চীনের সমাজ শুল্ক হ্রাসের ব্যাপারটি উদ্বিগ্ন ছিল। কেউ কেউ মনে করে, শুল্ক হ্রাসের ফলে চীনের অভ্যন্তরীণ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর ব্যাপক চাপ এবং অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে । তবে এ উদ্বেগ বাস্তবে পরিণত হয় নি। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকটের পটভূমিতে ২০০৯ সালে চীনের অর্থনীতি তার ৮.৭ শতাংশ উন্নয়নের হার বজায় রেখেছে। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক হো ওয়ে ওয়েন বলেছেন, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় প্রবেশের জন্য শুল্ক হ্রাসের প্রতিশ্রুতি কেবল চীনের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে নি তা নয়, বরং চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতার শক্তিও জোরদার করেছে। তিনি বলেন, (৩)
এটি দু'টি কারণ রয়েছে। প্রথমতঃ চীনের অর্থনীতি ক্রমে ক্রমে বিশ্বায়নের দিকে চলছে। চীনের রপ্তানি ও আমদানির পরিমাণ খুব বেশি। সুতরাং আন্তর্জাতিক বাজারের তা মানিয়ে নিয়েছে। দ্বিতীয়তঃ চীন শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে জাতীয় শিল্প ও অভ্যন্তরীণ শিল্পের সামর্থ্যকে উন্নত করেছে। কারণ উচ্চ শুল্ক সুরক্ষায় অভ্যন্তরীণ শিল্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতার শক্তি তেমন একটা ভাল নয়। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, শুল্ক হ্রাস করা দেশের জন্য কল্যাণ সৃষ্টি করেছে।
চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় প্রবেশের নয় বছরে দেয়া সব প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন করার পর কী কী কাজ করবে? চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক মেই সিন ইউ বলেছেন, চীনের একটি বাণিজ্যিক মহাদেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক আর্থ-বাণিজ্যের ব্যবস্থা সংস্কারে যোগ দেয়া দরকার, যাতে বিশ্বকে একটি নতুন উন্নয়নের পথ খুঁজে বের করা যায়। তিনি বলেন, (৪)
আমাদের বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার একজন সদস্য হিসেবে যথোচিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদনের পর আন্তর্জাতিক আর্থ-বাণিজ্যের ব্যবস্থা সংস্কারের কাজ ত্বরান্বিত করা দরকার। আমরা বিশ্বে আরো বড় ধরনের দায়িত্ব পালন করবো।
বর্তমানে দোহা আলোচনা হচ্ছে বিশ্বের বাণিজ্য উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার একটি নতুন উপায়। এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উদ্যোগে নবম দফার বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক আলোচনা। তার সাফল্য উন্মুক্ত ও ন্যায্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং বিশ্বের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য কল্যাণকর। দোহা আলোচনা ত্বরান্বিত করার জন্য চীন বিভিন্ন ক্ষেত্রের আলোচনায় সার্বিকভাবে যোগ দিয়েছে এবং এক শ'রও বেশি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। চীন বিশ্বের বাণিজ্যের অবাধায়নকে অব্যাহত রাখতে সব সময়ই সচেতনতার সাথে কাজ করে যাবে।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |