|
অর্থনৈতিক সংকট থেকে এশিয়ার পুনরুদ্ধারের গতি নাজুক না হলেও তা তেজিভাব থেকে এখনও অনেক দূরে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এডিবি'র মহাব্যবস্থাপনা পরিচালক রজত এম নাগ ভারতের 'ইকোনমিক টাইমস'কে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে সম্প্রতি এমন মন্তব্য করেন। বৈশ্বিক সম্পদ বৃদ্ধিতে এ অঞ্চলের দুই উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি ভারত ও চীনের মধ্যকার সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। তিনি মনে করেন, এতে করে ভারত ও চীন দুদেশই লাভবান হবে।
রজত বলেন, গত এপ্রিলে চীন ও ভারতে প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস করা হয়েছিল তা বজায় রাখবে এডিবি। তাঁর মতে, এ বছর চীন ৯.৬ শতাংশ ও ভারত ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। এশিয়ার অন্য দেশগুলোর গড় প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৯ শতাংশ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি দেশের ভাল অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে পূর্বাভাসে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, মূদ্রাস্ফীতির চাপ, বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি ভারতের জন্য একটা বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। "আমরা মনে করি, ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ভারতের জন্য অনেক বড় প্রবৃদ্ধি। আগামী সেপ্টেম্বরে আমরা আবারও আমাদের পূর্বাভাস পর্যালোচনা করবো। তখন এ পূর্বাভাসে পরিবর্তন আসতে পারে।"
তাঁর মতে, বিশ্ব অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা এখনো কাটেনি এবং সেটাই এশীয় অর্থনীতির জন্য প্রধান ঝুঁকি। ইউরোপের পরিস্থিতির উন্নতি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা রয়ে গেছে। অদৃশ্যমান বিশ্ব পরিস্থিতি এশিয়ার অর্থনীতির জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই এশিয়ার দেশগুলোর আগামী দিনগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এখনই নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রজত মনে করেন, কৃষি ক্ষেত্রের উন্নত প্রবৃদ্ধি ভারতের সার্বিক প্রবৃদ্ধিকে বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, এশিয়ার বড় অর্থনীতিগুলোর উন্নয়ন হওয়া উচিত অন্তর্ভূতিকরণের ভিত্তিতে কারণ এ অর্থনীতিগুলোতে ক্রমবর্ধমান অসমতা একটি বড় উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধিতে পৌঁছাতে ভারতকে শিল্পোত্পাদনের পাশাপাশি কৃষি উত্পাদনের দিকে আরো বেশি জোর দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তবে তাঁর মতে, দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে অবকাঠামোর অপ্রতুলতা ভারতের জন্য একটি বড় বাধা। তিনি অবকাঠামো খাতে সরকারী ও বেসরকারী বিনিয়োগ আরো ব্যাপকভাবে বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তাঁর মতে, এ বিনিয়োগ শুধু ভৌত অবকাঠামোতে করলেই হবে না, সামাজিক অবকাঠামোতেও করতে হবে।
এডিবি নির্বাহী বলেন, সঠিক পরিকল্পনা নিতে পারলে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের জন্য অর্থের কোন অভাব হবেনা কারণ ভাল প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ ও সামর্থ দু-ই আছে বেসরকারী খাতের।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে ভারতের চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা না করে বরং পারস্পরিক সহযোগিতা প্রসারিত করা উচিত্। এ দু'দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি দুই দেশের জন্যই অধিকতর লাভজনক হবে এবং তারা বিশ্ব অর্থনীতিতে আরো বেশি অবদান রাখতে পারবে।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |