|
মুদ্রাস্ফীতিকে বাগে আনতে এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ সম্প্রতি প্রায় একযোগে সুদের হার বাড়িয়েছে। গতমাসের শেষভাগ থেকে এ পর্যন্ত তাইওয়ান, ভারত, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। দেশগুলোতে সুদের হার ১২.৫ থেকে ২৫ ভিত্তি পয়েন্টের মধ্যে বেড়েছে। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত ২৪ জুন তাইওয়ানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশটির সুদের হার ১.৩৭৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এরপর চলতি মাসের ২ তারিখে ভারত, ৮ তারিখে মালয়েশিয়া ও ১০ তারিখে দক্ষিণ কোরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজ নিজ দেশে সুদের হার বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিশ্বমন্দা কাটিয়ে অর্থনীতির সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যেই সুদের হার বাড়ান হয়েছে বলে তারা জানায়।
সুদের হার বাড়ানোর এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, এ উদ্যোগের কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো কেবল মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও তা একই সঙ্গে ইউরোপের বিদ্যমান বড় ধরনের অর্থনৈতিক দায় থেকে এশিয়ার অর্থনীতি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এশিয়ার অর্থনীতি যদিও ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির প্রভাব থেকে একেবারেই মুক্ত নয়, তবু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ দেশগুলোর ওপর এশিয়ার অর্থনীতির নির্ভরতা অনেকাংশেই কমে এসেছে, যার জন্য বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিল বহুদিন ধরে তাগাদা দিয়ে আসছিল। এশিয়ার অর্থনীতিগুলোতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেশ বেড়ে যাওয়ায় তাদেরকে আর উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে না। ফলে কোন সংকটের কাছে বর্তমানে তারা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক কম নাজুক। তাদের এ শক্ত অবস্থান আগামী দিনগুলোতে এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকা এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সিঙ্গাপুরের ডিবিএস ব্যাংক এ প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে বলেছে, ইউরোপের দেশগুলোর বিদ্যমান বড় ধরনের অর্থনৈতিক দায় এশিয়ার সার্বিক অর্থনীতির জন্য ভয়ের কারণ হলেও তা এ অঞ্চলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে কঠোর মুদ্রানীতি গ্রহণের পথ থেকে বিরত রাখতে পারেনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মন্দা-পরবর্তী এশিয়ার সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বের যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি আশাব্যঞ্জক।
ডিবিএস ব্যাংক জানায়, সুদের হার বাড়ানো সংক্রান্ত এশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সিদ্ধান্ত তাদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস যোগাবে। তা ছাড়া এতে করে বিশ্বের সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি দুর্বল হলেও এককভাবে এশিয়ার প্রবৃদ্ধির চলমান ধারা অব্যাহত থাকবে। বিবৃতিতে ডিবিএস ব্যাংক আরো বলে, সুদের হার বাড়ানোর মাধ্যমে বিশ্বের আর্থিক বাজারে এশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সম্মিলিতভাবে এ বার্তাই পাঠাল যে, এ অঞ্চলের অর্থনীতি এখন আর পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল নয়। বরং যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের দেশগুলো যদি বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে, তবে এশিয়ার দেশগুলোর এ প্রভাব বর্তমানে তাদের চেয়েও বেশি।
তবে এব্যাপরে ভিন্ন মতও আছে কোনো কোনো বাজার বিশ্লেষকের। তারা বলছেন, এশিয়ার দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতির হার প্রায় একই পর্যায়ে চলে এসেছে। আর আগামী দিনগুলোতে এ হার আরো বাড়ার আশংকা রয়েছে। এ আশংকা যদি সত্যি হয় তাহলে সুদের হার বাড়িয়েও শেষ রক্ষা না-ও হতে পারে এ অঞ্চলের অর্থনীতির -- পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট শেষ পর্যন্ত হামলে পড়তে পারে এশিয়ার অর্থনীতির উপরও। তাদের এ আশংকাকেই যেন সম্প্রতি সমর্থন জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিল। দক্ষিণ কোরিয়ায় এক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডমিনিক স্ট্রস কান বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে এশিয়ার দেশগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
তবে নৈরাশ্যবাদীদের আশংকা আর আইএমএফের সতর্কতা সত্ত্বেও একথা সবাই মানবেন যে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানো ছাড়া আপাত আর কোন বড় কৌশল এশিয়ার অর্থনীতির নেই।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |