Web bengali.cri.cn   
বাংলাদেশে পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট পেশ
  2010-06-17 20:25:25  cri

বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে গত ১০ জুন ২০১০-১১ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন৻ এ বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯২ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় ব্যয় বরাদ্দ আগের বছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৩৫ হাজার ৮শ' কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, গত বছর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ৬ শতাংশ৻ এ বাজেটে ২০১০-১১ অর্থবছরের জন্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬.৭ শতাংশ৻

বাজেটে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে শিক্ষাখাতে৻ বিদ্যুত্ ও জ্বালানী খাতের ওপরেও জোর দেয়া হয়েছে এতে৻ অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বলেন বিগত অর্থ বছরে বিদ্যুত্ খাতে কাঙ্খিত উন্নতি হয়নি৻ বিদ্যুত্ খাতই বিনিয়োগ এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই খাত নিয়ে সরকার একটা রোডম্যাপ তৈরী করেছে, যার ফলে ২০১২ সালের মধ্যে বিদ্যুতের চাহিদা এবং যোগানের ব্যবধান দূর হয়ে যাবে৻

প্রস্তাবিত বাজেটে দেখা যায়, কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও ভর্তুকি কমেছে৻ চলতি অর্থবছরে বাজেটে কৃষিখাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৬শ কোটি টাকা, যা পরে সংশোধন করে বাড়ানো হয় ৪ হাজার ৯শো ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত৻ আগামী অর্থবছরের ভর্তুকির পরিমাণ ধার্য করা হয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা৻

এবারের বাজেটে আয়কর এবং মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট দু'টি ক্ষেত্রই সম্প্রসারণের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী৻ তবে এবার ব্যক্তি ও কর্পোরেট করের হারের কোন পরিবর্তন হয়নি । আগামী অর্থবছরে কমপক্ষে ৫ লাখ নতুন করদাতাকে করের আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত আয়ের সীমা ছিল যেটি এবারও বজায় থাকছে।

অথর্মন্ত্রী বলেছেন, যারা স্বেচ্ছায় কর দিতে চান তাঁদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং যারা অনিচ্ছুক তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে সরকার। তিনি আরো বলেন, এখন যারা আয়কর না দেবার সুবিধা পান সেটি ধীরে ধীরে সরকার প্রত্যাহার করবে এবং সেজন্য বিধানগুলো পুনর্মূল্যায়নের জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহন করবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের লেনদেনের আয় করমুক্ত রেখে কোম্পানী করদাতাদের ক্ষেত্রে শেয়ারের লেনদেন থেকে আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে করারোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে এ বাজেটে।

যানজট নিরসনের জন্য সিএনজির দাম বৃদ্ধি এবং গাড়ি আমদানীর ওপর শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ১০০১ সিসি থেকে ১৫০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির আমদানী শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় এ্যাপার্টমেন্ট রেজিষ্ট্রেশনের ক্ষেত্রে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের উপর উত্সে প্রতি বর্গমিটারের জন্য দু'হাজার টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য প্রতি বর্গমিটারে ৮০০ টাকা আয়কর সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

গত বছরের মত এবারও চাল, ডাল, গম, পেঁয়াজ, সার, বীজ ও ওষুধসহ বেশ কিছু পণ্যের ওপর আমদানী শুল্ক রাখা হয়নি। তবে স্থানীয় শিল্পকে উত্সাহিত করতে চিনির ওপর নতুন করে আমদানী শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর আগে বিশ্ববাজারে চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানী শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় তামাক নিরুত্সাহিত করতে তামাক রপ্তানীর ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপ ও সিগারেট খাতে মূল্য বৃদ্ধিরও প্রস্তাব করা হয়েছে। গুঁড়েদুধ আমদানীর উপর যে শুল্ক ছিল সেটি অর্ধেকেরও বেশি কমানো হয়েছে।

স্থানীয় ফ্রিজ, মোটরসাইকেল ও বিদ্যুত্ সাশ্রয়ী বাতি উত্পাদনকারীদেরকে ৫ বছরের জন্য ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে সিরামিকের টাইলস ও মোজাইক, বাথরুম ফিটিংস, মিনারেল ওয়াটার, শ্যাম্পু, জুস ইত্যাদির উপর সম্পুরক শুল্ক হার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষের কথা মাথায় রেখে তাঁদের ব্যবহার্য প্লাস্টিক ও রাবারের পণ্যের উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে ।

যে বাজেটটি দেয়া হয়েছে তা প্রস্তাব মাত্র। এর ওপর চলতি সংসদ অধিবেশনে চলবে আলোচনা। তারপর পরিবর্তন সাপেক্ষে তা অনুমোদিত হবে। এখনই বলা যাচ্ছে না অর্থমন্ত্রীর কোন কোন প্রস্তাব বহাল থাকবে আর কোনটি থাকবে না। তবে তাঁর প্রস্তাবগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কর আদায়ের ক্ষেত্রে তিনি ধনী সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ জোর দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040