|
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ বলেছে, এশীয় অঞ্চল বিশ্বের ভবিষ্যত অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। সংস্থাটি বলেছে, গত অর্ধ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুতর অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে কেবল বিশ্বকে নের্তৃত্ব দেয়নি এ অঞ্চল, বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রতিদিন এর অবদান বাড়িয়ে চলেছে। এশিয়ার অর্থনীতির ওপর এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর আইএমএফ'র এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান অনুপ সিং বলেন, আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট দেশজ উত্পাদন বা জিডিপিতে এ অঞ্চলের অবদান বর্তমানের ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশে পৌঁছবে এবং এর অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্মিলিত অর্থনীতির চেয়েও বড় হবে।
তিনি বলেন, "এশিয়ার বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার বজায় থাকলে আজ থেকে ২০ বছর পর এর অর্থনীতির আকার শিল্পোন্নত ৭-জাতি'র অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাবে এবং উন্নত ও উদীয়মান ২০-জাতি'র অর্থনীতির অর্ধেক হবে।"
সিং বলেন, চীন ও ভারতের দ্রুত গতির প্রবৃদ্ধি কয়েক দশক ধরে বজায় থাকবে এবং তা এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেও ম্লান করে দেবে। তার মতে, এ দু'টি দেশের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছে যাবে।
তিনি বলেন, "চীন ইতোমধ্যেই এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। দেশটিতে এখন দ্রুত গতিতে যেমন নগরায়ন হচ্ছে তেমনি সামাজিক অভিবাসনও হচ্ছে। আমরা যদি সামনের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো চীনের এ বিপুল জনসংখ্যা দেশটির প্রবৃদ্ধিকে আর বহু বছর ধরে রাখতে সাহায্য করবে।"
তবে এ আশাবাদের সঙ্গে সঙ্গে সতর্কতাবাণী ও কিছু পরামর্শও আছে আইএমএফ'র। সংস্থা তার প্রতিবেদনে বলেছে, বর্তমানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে হলে এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে সার্বিকভাবে বিদেশের বাজার, বিশেষ করে ইউরোপের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজেদের বাজারের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে।
এতে বলা হয়েছে, মন্দা কাটিয়ে প্রবৃদ্ধির ধারায় ফেরার ক্ষেত্রে পুরো বিশ্বের নেতৃত্ব দিলেও বহির্বিশ্বের চাহিদার ওপর অতিনির্ভরতার কারণে এশিয়া ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ নির্ভরতা কমানো না গেলে গ্রিস সংকটকে কেন্দ্র করে ইউরো অঞ্চলে সৃষ্ট অস্থিরতা এশিয়ার প্রবৃদ্ধির গতিকে পিছু টেনে ধরতে পারে বলেও আশংকা ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি। (শিয়াবুর রহমান)
আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরো অঞ্চলের ঋণসংকটের প্রভাব স্থিতিশীল অঞ্চলগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর তা হলে এশিয়ায় বিনিয়োগকারীদের আত্নবিশ্বাসের অভাব দেখা দিতে পারে। এতে বলা হয়, যদিও গ্রিসের ঋণ সংকট এখনো এশিয়ায় পুঁজিপ্রবাহে বাধা হয়ে দেখা দেয়নি, তবুও ইউরোপের ঝুঁকি এড়ানোর কৌশল ও আর্থিক খাত থেকে পুঁজি সংগ্রহ কমানোর চাপ এশিয়ার ব্যাংক ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনীতির সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধি ও অধিকাংশ বড় দেশে সুদের হার কমিয়ে দেওয়ায় এশিয়াভিমুখী পুঁজি প্রবাহ বাড়ছে। কিন্তু বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ারও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে রিজার্ভের ঘাটতি, সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধি ও ঋণদানে অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে। এসব কারণে সম্পত্তির মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে এশিয়ার নীতিনির্ধারকদের এখনই পদক্ষেপ নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।
সংস্থাটি বলেছে, নিজেদের বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে এবং বর্তমানে সামনে আসা চ্যালেঞ্জগুলোকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে পারলে এশিয়ার অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে কেউ রুখতে পারবে না।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |