Web bengali.cri.cn   
উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব বাড়ল বিশ্বব্যাংক সভায়
  2010-04-29 20:36:14  cri

বিশ্বব্যাংকের নীতিনির্ধারণী কার্যক্রমে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ বাড়াতে তাদের ভোটাধিকার বাড়ানোর একটি প্রস্তাব এবারের বিশ্বব্যাংক উন্নয়ন কমিশনের বসন্তকালীন সভায় গৃহীত হয়েছে। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এ সংস্থার দ্বিবার্ষিক সভায় ১৮৬ সদস্যরাষ্ট্র এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে সম্মতি দেয়। এ সংস্কারের ফলে বিশ্বব্যাংক গ্রুপে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামগ্রিক ভোটাধিকার ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়ে ৪৭ দশমিক ১৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে উন্নত দেশগুলোর মোট ভোটাধিকার ছিল ৪৪ দশমিক ০৬ শতাংশ।

বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য গঠিত বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ সংস্থা 'আন্তর্জাতিক অর্থসংস্থান কর্পোরেশন' বা আইএফসি'তেও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ভোটাধিকার বাড়ানোর প্রস্তাব গৃহীত হয় এ সম্মেলনে। এ প্রস্তাব পাস হওয়ায় আইএফসি'তে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামগ্রিক ভোটাধিকার ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ বেড়ে ৩৯ দশমিক ৪৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

এই বাড়তি ভোটাধিকারের বিনিময়ে সংস্থাটি চীন, ভারত ও ব্রাজিলের মতো ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশ থেকে অতিরিক্ত ১৬০ কোটি ডলারের তহবিল সংগ্রহ করবে।

বিশ্বব্যাংকের অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্রের মতো জাপানও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ভোট ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষে মত দেয় যদিও এতে জাপানের নিজেরই ভোটাধিকার খানিকটা খর্ব হয়েছে। ১৯৫২ সালে বিশ্বব্যাংকের সদস্যপদ লাভের পর এবারই প্রথম এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তে সম্মতি দিল জাপান।

জাপানের ক্ষমতা খর্ব হলেও এ ক্ষেত্রে লাভবান হয়েছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি চীন। ভোট ক্ষমতার ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক গ্রুপে এখন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের পরেই চীনের অবস্থান।

সভায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর ভোটাধিকার বাড়ানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক গ্রুপের মূলধন ৫১০ কোটি ডলার বাড়ানোর সিদ্ধান্তও অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংকের সদস্যরাষ্ট্রগুলো। গত ২০ বছরের মধ্যে সংস্থাটির মূলধন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এটাই প্রথম। বিশ্বব্যাংকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঋণ দেওয়ার সুবিধার্থেই তহবিল বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা শুরুর পর থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ঋণ সহায়তা হিসেবে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার কোটি ডলার দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। দু'বছরে এ রেকর্ড পরিমান ঋণ দেয়ায় বর্তমানে সংস্থাটির তহবিল একেবারে সর্বনিম্ন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে।

ভোটাধিকার সংস্কারে উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় গোষ্ঠির দেশগুলোই সন্তোষ ব্যক্ত করেছে এবং আশা প্রকাশ করেছে যে, এতে করে বিশ্ববাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের এ সর্বোচ্চ ফোরামে উন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিত্ব ও ভূমিকায় একটা ভারসাম্য আসবে।

দ্বিবার্ষিক উন্নয়ন সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোল্লিক বলেন, "বহুপক্ষীয় আলোচনার ক্ষেত্রে আজকের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ভোটাধিকার সংস্কারের মাধ্যমে সংগৃহীত অতিরিক্ত মূলধন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিপর্যয় থেকে বিশ্ব অর্থনীতিকে রক্ষার কাজে ব্যবহৃত হবে।"

সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী তিমোথি গেইথনার বলেন, "বিশ্বব্যাংকে ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর সিদ্ধান্তে উন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতায় ভারসাম্য তৈরি হলো, যা সার্বিকভাবে বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে জোরদার করবে।"

তিনি জানান, বিশ্বব্যাংকের মূলধন বাড়ানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে ১১০ কোটি ডলার দেবে। বিশ্ব অর্থনীতির যেকোনো দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে জরুরি ঋণ সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সংস্থাটির সক্ষমতা বাড়ানোর জন্যই এ অর্থ দেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে চীনের অর্থমন্ত্রী সিয়ে সু রেন বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকে ভোটাধিকার বাড়ানোর ফলে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবস্থান শক্তিশালী হবে।

আসলে বিশ্বব্যাংকের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সম্পন্ন ভোটাধিকার সংস্কারের বেশ গভীর তাত্পর্য রয়েছে। এতে বিশ্বব্যাংকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব এবং মতামত প্রকাশ করার অধিকার যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বিশ্বব্যাংকের আরো বড় ভূমিকা নেয়ার ন্যায্যতা। বিশ্বের অর্থনীতি সংকট কাটিয়ে উঠার এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এ সংস্কার সে ব্যাপারে বড় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট সকলের আশা।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040