Web bengali.cri.cn   
বিশ্বব্যাপী দক্ষ শ্রমিক সংকটের আশংকা
  2010-04-08 19:21:07  cri
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা কাটতে থাকার প্রেক্ষাপটে আগামী বছরগুলোতে সারা বিশ্বে দক্ষ কর্মী ও শ্রমিকের ব্যাপক সংকট হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, মন্দা পরবর্তী সময়ে বিশ্ব অর্থনীতি যে গতি পাবে তার সঙ্গে তাল রাখতে পারবে না দক্ষ কর্মী ও শ্রমিকের যোগান। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ধারণা করছে, ২০৩০ সাল নাগাদ উন্নত দেশগুলোতে বহু দক্ষ জনশক্তির দরকার হবে। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই দরকার হবে ২৬ মিলিয়ন এবং পশ্চিম ইউরোপে ৪৬ মিলিয়ন কর্মী-শ্রমিক। জেনেভা-ভিত্তিক এ বেসরকারী সংস্থা শ্রমিকের এ সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় এখন থেকেই বিশ্বকে প্রস্তুতি নিতে বলেছে। সংস্থাটি দক্ষ শ্রমিক গড়ে তোলা এবং শ্রমের স্থানান্তরের জন্য এখন থেকেই প্রচেষ্টা নেয়ার জন্য বিশ্বের প্রতি আহবান জানিয়েছে।

অর্থনৈতিক ফোরাম যখন এই সতর্ক সংকেত দিচ্ছে তখন দেখা যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী কর্পোরেট খাতে দক্ষ কর্মীর সংকট ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে কর্পোরেট নির্বাহী এবং তথ্যপ্রযুক্তিসহ মেধা-নির্ভর খাতে কর্মী সংকট বেশ লক্ষ করা যাচ্ছে। আর জাপান, রাশিয়া ও জার্মানীতে কর্মী সংকট প্রবল হয়ে উঠেছে।

পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ স্নাতক আন্তর্জাতিক মানের চাকরি করার মত দক্ষতা রাখেন। স্নাতকদের এই কর্মদক্ষতা দিয়ে বিশ্বব্যাপী কর্মী ও শ্রম সংকট মিটানো খুবই কঠিন। অন্যদিকে বর্তমানে বিশ্বে ১৫ বছরের নিচে জনসংখ্যার হার বেশি হলেও ২০৫০ সালের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী প্রবীণের সংখ্যা তরুণের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চিকিত্সা বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং বিশ্বব্যাপী মৃত্যু হার কমার কল্যাণে এ অবস্থা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা ক্রমে কমতে থাকবে।

তবে এই আপাত খারাপ খবরের পেছনে আছে একটি ভাল খবর আর তা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। কারণ তারা তাদের অতিরিক্ত জনবলকে দক্ষ করে তোলার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী দক্ষ কর্মী-শ্রমিকের এ সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে পারে আর এর মধ্য দিয়ে তারা তাদের অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখতে পারে। অর্থনীতিবিদরা এরকমই পরামর্শ দিচ্ছেন তাদের। তবে তারা বলছেন এ সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইলে প্রস্তুতির জন্য সুযোগ এখনই। তাদের মতে, দক্ষ কর্মী-শ্র্র্রমিকের এ সংকট থেকে সবচেয়ে বেশি ফাযদা নিতে পারে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো।

তবে কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই শ্রমের এ বাজার ধরার উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভারত ও ব্রাজিল। এ দুটি দেশ আগামী ২০ বছরে ২০০ মিলিয়ন কর্মী-শ্রমিক যোগান দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দক্ষ কর্মী-শ্রমিক রপ্তানির মাধ্যমে ভারত ইতোমধ্যে তার অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের অবদান ব্যাপকভাবে বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং বিদেশ গমন উপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভারত এ সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে।

ভারত ও ব্রাজিলের পথ ধরে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশও পারে তাদের অতিরিক্ত জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নত দেশগুলোতে পাঠাতে। এতে করে কেবল ঐসব উন্নয়নশীল দেশই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেনা, উন্নত দেশগুলোও উপকৃত হবে। কারণ উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে দক্ষ জনশক্তি না পেলে তাদের উত্পাদন ও সেবাদান বাধাগ্রস্ত হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে দক্ষ জনশক্তি নিয়ে উন্নত বিশ্ব যদি তাদের উত্পাদন ও সেবাদান কাঙ্খিত পর্যায়ে উন্নীত করতে পারে তাহলে তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও যারপর নাই কল্যাণকর হবে, যা বিশ্বমন্দা কেটে যাওয়ার এই ক্ষণে খুবই দরকারী।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040