Web bengali.cri.cn   
বাংলাদেশী তৈরি পোশাককে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে চীনের উদ্যোগ
  2010-04-01 20:17:01  cri
বাংলাদেশে সফররত চীনের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল ২৯ মার্চ বেসরকারি খাতের বস্ত্রশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-এর নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বসেন। সেসময় তারা বিটিএমএ নেতাদেরকে জানান, শুল্কমুক্ত সুবিধায় চীনের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির সুযোগ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

তারা জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি চীন সফর করার পর বাংলাদেশী তৈরি পোশাক খাতকে এ ছাড় দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে চীন সরকার এবং শিগগিরই এব্যাপারে একটা ঘোষণা দেবেন তারা।

বিটিএমএ সভাপতি আবদুল হাই সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় চীনা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের ১৪ সদস্য ও বিটিএমই পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা অংশ নেন। সভায় চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে আলোচনা হয় এবং বস্ত্র খাতের নেতারা বাংলাদেশে চীনের সরাসরি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানান।

সফরকারি প্রতিনিধিদলের নেতা চীনের বস্ত্রযন্ত্র রপ্তানিকারক এবং বৈদেশিক অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতা কর্পোরেশনের (সিটিইএক্সআইসি) সভাপতি জু পাওলিন বলেন, "চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেশি। আমি যদ্দুর জানি চীন সরকার বাংলাদেশের তৈরি পোশাককে শুল্কমুক্ত সুবিধায় চীনের বাজারে প্রবেশের সুযোগ দিতে যাচ্ছে। খুব শিগগির এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হবে বলে আমি জেনেছি।"

বিটিএমএ সভাপতি আবদুল হাই সরকার বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক। এছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত মত্স, এবং পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এসব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা না দিয়ে অন্য ১০ হাজার পণ্যে এ সুবিধা দিলে বাংলাদেশের কোন লাভ হবে না।

এখানে বলে রাখা ভাল, ১৯৭৫ সালে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে এশিয়ার ৭টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ব্যাংকক চুক্তির আওতায় ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশের ৮৪টি পণ্য চীনের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে এ সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ কোন পণ্যই চীনে রপ্তানি করতে পারে নি। কারণ যে পণ্যগুলোর এ সুযোগ পাওয়ার কথা সেগুলোর উত্পাদন বাংলাদেশে খুব বেশি নেই।

আবদুল হাই সরকার মনে করেন, বিশ্বের বৃহত্তম বাজার হিসেবে চীনের উচিত বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এর বাজারকে বাংলাদেশী পণ্যের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া। তিনি বলেন, যে বিবেচনায় ইউরোপিয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বস্ত্রখাতকে জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্স বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যিক সুবিধা দিচ্ছে একই বিবেচনা চীনও করতে পারে এবং বাংলাদেশী পণ্যকে এরকম সুযোগ দিতে পারে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেইচিং সফরকালে চীনা নেতাদের কাছে একই যুক্তি ও দাবি তুলে ধরেন। তার জবাবে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়াপাও আরো বেশি বাংলাদেশী পণ্যকে শুল্কমুক্ত আমদানির সুযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

চীন ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ ও সমঝোতামূলক সম্পর্ক ঐতিহাসিক। দুদেশের বাণিজ্য প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। শুধু ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে আমরা দেখবো, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২,১৪৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে এর মধ্যে চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানি ছিল ২,০৭৮ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার আর বাংলাদেশ থেকে চীনের আমদানি ছিল ৬৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার। অর্থাত্ ওই এক বছরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ঘাটতি দাঁড়ায় ২০১৪ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার। পরবর্তি বছরগুলোর তথ্য নিলে আমরা দেখবো এ ঘাটতি আরো বেড়েছে।

আসলে বাংলাদেশ চীন থেকে বহু ধরনের পণ্য আমদানি করে, যেগুলোর মধ্য অন্যতম হলো বস্ত্র ও বস্ত্রজাত পণ্য, ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম, রাসায়নিক দ্রব্য, প্লাস্টিক সামগ্রী, যানবাহন প্রভৃতি। অন্যদিকে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি কেবল পাট ও চামড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ দুটি পণ্য নিয়ে বাংলাদেশ কোন ক্রমেই এ ঘাটতি দূর করতে পারছে না। তবে আশার কথা চীনের নেতৃবৃন্দ বাণিজ্য বৈষম্যের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়াপাওর আরো বেশি বাংলাদেশী পণ্যকে শুল্কমুক্ত আমদানির সুযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি এবং বাংলাদেশের তৈরি পোশাককে শুল্কমুক্ত সুবিধায় চীনের বাজারে প্রবেশের সুযোগ দেয়ার বর্তমান উদ্যোগ সে সচেতনারই প্রমাণ।

চীন যদি বাংলাদেশী পণ্যকে শুল্কমুক্ত আমদানির সুযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে তাহলে প্রকৃতপক্ষে দু'দেশই লাভবান হবে। কারণ তাতে এক দিকে যেমন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে সমতা আসতে থাকবে, অন্যদিকে পারস্পরিক সমঝোতাও বৃদ্ধি পাবে, যা দু'দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কবে বাংলাদেশী পণ্য চীনের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে প্রবেশ করে তা দেখার জন্য সবাইকে আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। -- (শিয়াবুর রহমান)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040