|
ছিংহুয়াংতাও উন্নয়ন- এলাকাটিতে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়ে চার দিকে প্রসারিত চওড়া চওড়া রাস্তাঘাট , রাস্তার দুপাশে আর পার্কে সবুজের ছড়াছড়ি, উন্নয়ন এলাকাটিতে সারা সারি অফিসভবন আর কলকারখানার দালান সুশৃংখলভাবে বিন্যস্ত রয়েছে । দেশের নামকরা কোম্পানিগুলো ছিংহুয়াংতাও উন্নয়ন এলাকাটিতে প্রচুর পুঁজিবিনিয়োগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, আর সিংগাপুর ইত্যাদি দেশ ও অঞ্চলের অনেক বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও এখানে পুঁজিবিনিয়োগ করেছে বা শাখা -অফিস স্থাপন করেছে । সংশ্লিষ্ট মহলের লোক জানিয়েছেন যে, এলাকাটিতে ব্যাপকভাবে পুঁজিবিনিয়োগ আকৃষ্ট হওয়ার মূলে রয়েছে এখানকার বিশেষ অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান এবং বিনিয়োগের চমত্কার পরিবেশ ।
চীনের বৃহত্তম বিদ্যুত উত্পাদন যন্ত্রনির্মাণশিল্পপ্রতিষ্ঠান--"হার্বিন পোওয়ার কোম্পানি " তিন বছর আগেই তার উত্পাদিত যন্ত্রপাতি রপতানির জন্য ছিংহুয়াংতাও উন্নয়ন এলাকায় রপ্তানিঘাঁটি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । কোম্পানিটির ছিংহুয়াংতাও রপ্তানি ঘাঁটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা সিয়াও চেংহাই ছিংহুয়াংতাও এলাকায় তাদের রপ্তানিঘাঁটি স্থাপনের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছেন,
" প্রধান কারণ হলো এখানকার অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ , যা সামুদ্রিক পথে আমাদের রপ্তানি-ঘাঁটি স্থাপনের বিশেষ উপযোগী । তা ছাড়া এখানে জমির অধিগ্রহণ, প্রকল্পের আওতাধীন এলাকার বাসিন্দাদের স্থানান্তরিত করা আর প্রকল্প নির্মাণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমাদের কোম্পানিকে অনেক সুবিধা দেয়ার নীতি অনুমোদিত হয়েছে ।
ছিংহুয়াংতাও এলাকা চীনের রাজধানি পেইচিংয়ের পূর্বদিকের পোহাই উপসাগর-তীরে অবস্থিত। পোহাই উপসাগরের চারদিকে পেইচিং মহানগর, থিয়েনচিন মহানগর, তালিয়েন, শেংইয়াং এবং ইয়েনথাই ইত্যাদি শহর রয়েছে । ছিংহুয়াংতাও -সহ এই সব বড় বড় শহর নিয়ে পোহাই উপসাগরীয় বৃহত্ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠিত হয় । এখানকার সড়ক ও রেলপথ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সংগে এই অঞ্চলের সুসংযোগ স্থাপন করেছে । এখানকার বন্দর থেকে চীনের বিভিন্ন উপকূলীয় বন্দর তথা বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে নৌচলাচলের খুবই সুবিধা হয় । তাছাড়া, ছিংহুয়াংতাওয়ের ভূমি খুবই মজবুত বলে এখানে বন্দরনির্মাণ এবং কলকারখানা, অফিসভবন ,সড়ক ও রেলপথ ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণের খুবই সুবিধা হয় ।
যুক্তরাষ্ট্রের এ ডি এম কোম্পানি আর সিংগাপুরের উইলমার গোষ্ঠির যৌথ পুঁজিবিনিয়োগে ছিংহুয়াংতাও এলাকায় তিনটি বিরাট আকারের প্রক্রিয়াকরণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে , সেগুলো নির্মাণের জন্য ছিংহুয়াংতাও জায়গাটা বেছে নেয়ার কারণও এই এলাকার বিশেষ অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থা । বর্তামানে উপরোক্ত কোম্পানিদুটো এখানে মোট ১৫ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশী পুঁজি বিনিয়োগ করেছে । এই পুঁজিবিনিয়োগে নির্মিত ৩টি প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানের একটি হলো চিনহাই খাদ্য ও তেল কোম্পানি । কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার মু ইয়েনখুই বলেছেন:
" প্রকল্পটি নির্মাণের স্থান হিসেবে ছিংহুয়াংতাও বেছে নেয়ার কারণ এই যে, এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল প্রধানত সোয়াবীন । উত্তরপূর্বচীন হলো চীনের সোয়াবীনের প্রধান উত্পত্তিস্থান , এখানে দেশের ৬০ শতাংশেরও বেশী সোয়াবীন উত্পন্ন হয় । আবার তার ৮০ শতাংশই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চালান দেয়ার জন্য । আর ছিংহুয়াংতাও বন্দর এমন একটি জায়গা যে, জায়গাটির মধ্য দিয়ে সোয়াবীন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানোর খুবই সুবিধা হয় ।
জানা গেছে, উপরোক্ত ৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পণ্য বিক্রয়মূল্য ৭০০ কোটি ইউয়ানেরও বেশী হয়েছে । ছিংহুয়াংতাও উন্নয়ন এলাকার ৬০ হেক্টরেরও বেশী খালি জমিতে তাঁরা খাদ্যশস্যের গভীর প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প নির্মানের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে । বিশ্বের বৃহত্তম কাঁচ উত্পাদন গোষ্ঠি----জাপানের "আসাহি গ্লাস কোম্পানি" ছিংহুয়াংতাওতেই তার কাঁচ উত্পাদন শাখা কোম্পানি স্থাপন করেছে , এটা প্রধানত মটরগাড়ির জন্য ব্যবহার্য কাঁচ উত্পাদনের একটি কারখানা । এই শাখাকোম্পানির ডিরেক্টর্স- বোর্ডের ভাইসচেয়ারম্যান সুন সিয়াওফিং বলেছেন :
" ছিংহুয়াংতাও উন্নয়ন এলাকার কর্তৃপক্ষ বিদেশী পুঁজিবিনিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে খুবই গুরুত্ব দেয়, এবং তাদের জন্য বেশ ভাল পরিবেশ ও শর্ত সৃষ্টি করেছে ।"
ছিংহুয়াংতাও এমনি ছিল চীনের অন্যতম কাঁচ শিল্পঘাঁটি, এখানে রয়েছে চীনের কাঁচ শিল্পের প্রধান বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ডিজাইন ইনস্টিটিউট---" ছিংহুয়াংতাও কাঁচ শিল্প গবেষণা ও ডিজাইন ইনস্টিটিউট" । তাছাড়া এখানে কাঁচ উত্পাদিত হলে সহজেই পেইচিং ও থিয়েনচিন মহানগর বা ছাংছুন শহরের মতো চীনের মটরগাড়ী শিল্পের প্রধান কেন্দ্রগুলোর কাছে চালান দেয়া যায়, কারণ মোটরগাড়ীতে প্রচুর কাঁচ ব্যবহার করতে হয় ।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা ছিংহুয়াংতাও অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এলাকায় কারখানা স্থাপনের জন্য দেশবিদেশের আরও অনেক কোম্পানি পুঁজি বিনিয়োগ করতে এসেছে । উন্নয়ন এলাকাটির প্রধান হু ইংজিয়ে বলেছেন, গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকের মাঝামাঝী সময় থেকে এই উন্নয়ন এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ জোরদার করা হয়েছে , পরিবেশ সংরক্ষণ এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা প্রকল্প নিয়ম-মাফিককরণ জোরদার হয়েছে এবং টেকসই উন্নয়নের ওপর বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ।
হু ইংজিয়ে বলেছেন :
" টেকসই উন্নয়নে অবিচল থাকার ভিত্তিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা প্রকল্পগুলো আমদানির গুণগত মানের ওপর বেশ মনোযোগ দিয়েছি , শুধু শুধু প্রকল্পের ব্যাপক আকারের ওপর মনোযোগ দিলে যথেষ্ট নয়, উপরন্তু প্রকল্পটির উন্নয়নের ভবিষ্যত্ সম্ভাবনার ওপরও মনোযোগ দিতে হবে । ১৯৯৯ সাল থেকে আমাদের আমদানি করা প্রকল্পগুলোর বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত মানের স্পষ্ট উন্নতি হয়েছে , প্রকল্পের অর্থনৈতিক উপকারিতাও বেড়েছে ।"
জানা গেছে, ছিংহুয়াংতাও উন্নয়ন এলাকা শুধু পুঁজি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ব্যাপারে নয, উপরন্তু পরিবেশ সংরক্ষণেও বিরাট সাফল্য আর্জন করেছে । চীনের রাষ্ট্রীয় পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যুরো উন্নয়ন-এলাকিটিকে চীনের জাতীয় পর্যায়ের পরিবেশ সংরক্ষণের দশটি আদর্শ এলাকার পর্যায়ভুক্ত করেছে ।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা ,আমাদের আজকের অর্থনীতির অগ্রযাত্রা এখানেই শেষ হলো ।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |