|
২০ জানুয়ারী জেনিভায় বিশ্ব অর্থনীতি ফোরাম এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেছে। এই প্রেস ব্রিফিংয়ে দাভোস বার্ষিক সম্মেলন ২০১০-এর প্রতিপাদ্য প্রকাশিত হয়েছে। কিছু দিন আগে আমরা টেলিফোনের মাধ্যমে জেনিভায় চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সংবাদদাতা ডুয়েন শিও জির সাক্ষাত্কার নিয়েছি।
সাক্ষাত্কারে ডুয়েন শিও জি বলেছেন, প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এবারের ডাভোস বার্ষিক সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হবে: "বিশ্বের অবস্থার উন্নয়ন: পুর্নবিবেচনা , পুর্ননকশা ও পুর্নগঠন"। অন্য কথায় এবারের ফোরামে বিশ্বজুড়ে আর্থিতক সংকট ও অর্থনীতির অবনতি পরবর্তীকালের নতুন পরিস্থিতির দিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ব অর্থনীতি ফৌরামের এই বার্ষিক সম্মেলন সব সময় বতর্মান বিশ্ব কাঠামোর ওপর বৈশিক আর্থিক সংকটের প্রভাব অনুসরন, পর্যবেক্ষণ ও পুর্বাভাস দিয়ে আসছে। গত বছর এ বার্ষিক সম্মেলনের প্রধান প্রতিপাদ্য ছিল " আর্থিক সংকট পরর্বতী যুগের বিশ্বকে পুর্নগঠন করা"। যার মাধ্যমে বিশ্বের কাছে আর্থিক সংকট সৃষ্ট পরিবর্তন প্রতিফলিত হয়েছে। এক বছর পর বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে। পুরানো কাঠামোর ত্রুটি ও নতুন কাঠামোর আকার দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও কার্যনির্বাহি চেয়ারম্যান সওয়াবু প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন,
বিশ্ব আর্থিক মন্দার মাধ্যমে বিশ্ব মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করেছি, বতর্মানে বিশ্বজুড়ে সহযোগিতার ব্যবস্থা আর কার্যকরভাবে ভূমিকা পালন করতে পারছে না। বিশ্বব্যাপী সমস্যার সার্বিকভাবে সমাধান করা হলে আমাদের মূল্যবোধ নতুন করে বিবেচনা করতে হবে। এ ধরনের মূল্যবোধকে বহুমুখী সংস্কৃতির অস্তিত্বসম্পন্ন সামাজিক ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকার করতে হবে। এর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন শক্তির সম্মিলিত সহযোগিতা এবং আরও কাযর্কর আন্তর্জাতিক কাঠামোর গঠন নতুনভাবে নকশা করা উচিত।
বিশ্ব অথর্নীতি ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান লিনশিয় আরও প্রত্যক্ষভাবে বলেছেন,২০০৯ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অথর্নীতির লক্ষ্যনীয় উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর তুলনায় পূর্ব এশিয়া , দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোর অর্থনীতি ভাল। যদিও লোকেরা এর কারণ সহজেই ব্যক্ত করতে পারে না, তবুও এ ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।তিনি বলেন, এবারের বার্ষিক সম্মেলনে চীনসহ দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেকসিকো ও ব্রাজিলসহ নবোদিত অথর্নৈতিক গোষ্ঠীর রাষ্ট্রীয় প্রধান ও সরকারী প্রধানরা অংশ নেবেন।
আগের মতো এবার অথর্নীতি ফোরামে অথর্নীতি সামনে রেখে বিশেষভাবে আলোচনা করা হবে। তাহলে চলতি বছরে বিশ্ব অথর্নীতির পরিস্থিতি কী রকম হবে এ সম্পর্কে বিশ্ব অথর্নীতি ফোরামের ধারণা কী? এ প্রসঙ্গে সংবাদদাতা ডেন শিও চি বলেছেন,
সত্যিই অথর্নীতি এখনও এবার দাভোস বার্ষিক সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয়। সম্মেলন চলাকালে বিশ্বের নাম-করা শিল্প প্রতিষ্ঠানের ১৪০০ জনেরও বেশী কমর্কর্তা , ২০টিরও বেশী দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আলাদা আলাদাভাবে শতাধিক আলোচনা সভায় যোগ দেবেন। তারা বিশ্বের অথর্নীতির পুনরুদ্ধার, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।
অথর্নীতির পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিশ্ব অথর্নীতি ফোরাম মনে করে যে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে বিশ্ব অথনীর্তিতে সারগর্ভ পরিবর্তন ঘটবে না। অথর্নীতির পুনরুদ্ধার এখনও নাজুক এবং অনেক চ্যালেঞ্জার সম্মুখীন। গত সপ্তাহে এ সংস্থারের প্রকাশিত " বিশ্বজুড়ে ঝুঁকি সম্পর্কিত রিপোট ২০১০"এ বলা হয়েছে, গত দু' বছর ধরে নিজ নিজ দেশের অথর্নীতির অবনতি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ পাশ্চাত্য দেশগুলো ব্যাপকভাবে অথর্নীতিকে চাঙ্গাকারী পরিকল্পনা উত্থাপন করেছে। যদিও অথর্নীতিকে চাঙ্গাকারী পরিকল্পনায় ফলাফল দেখা দিয়েছে তবুও এর সঙ্গে সঙ্গে এ সব দেশের মূদ্রার ওপর বিশ্ব সমাজের আত্মবিশ্বাস হ্রাস পেয়েছে। উপরন্তু অথর্নীতি পুনরুদ্ধারের মন্থ গতির কারনে এ সব দেশের কমর্সংস্থানের বিষয়টি নতুন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কমর্সংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর জন্য বতর্মানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি বছর কমর্সংস্থানের ক্ষেত্রে ভাল লক্ষণ দেখা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এবারের ডাভোস বার্ষিক সম্মেলনে অতর্নীতি ছাড়া আরও কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে? এ প্রসঙ্গে সংবাদদাতা ডেন শিও চি বলেছেন,
এবারের বার্ষিক সম্মেলনে, মধ্য প্রাচ্য শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি, জলবায়ু পরিবতর্ন , জাতিসংঘের সহস্রাব্দী উন্নয়নের লক্ষ্যবন্তু আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে অন্তভূর্ক্ত করা হয়েছে। কিছু দিন আগে হাইতিতে প্রচন্ড ভূমিকম্প ঘটেছে। এই ভয়ংকর ভূমিকম্প হাইতিকে ধ্বংসাত্মক ক্ষয়ক্ষতি এনে দিয়েছে। জানা গেছে, এবারের বার্ষিক সম্মেলনে হাইতির পুনর্গঠন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট , জাতিসংঘ মহা সচিবের হাইতি বিষয়ক বিশেষ দূত বিল ক্লিনটেন এবারের ফোরামে হাইইতির ভূমিকম্প পরর্বর্তী পুনর্গঠন কাজে আর্থিক সমর্থনের ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |